যত দিন যাচ্ছে, ততই আরও ভয়ানক হয়ে উঠছে নোভেল করোনাভাইরাস। দিন দিন ঘাতক তো হচ্ছেই, সেইসঙ্গে ধরণ বদলাচ্ছে সার্স-কোভ ২। এবার মালয়েশিয়ায় (Malaysia) এমন এক করোনাভাইরাসের সন্ধান মিলল যা ১০ গুণ বেশি সংক্রামক ও ভয়ঙ্কর।
জানা গেছে, এক ভারতীয় রেস্তোরাঁ কর্ণধার ফেরার পর তার থেকে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ৪৫ জন। তিনি আবার অনেক দিন আগে দেশ থেকে ফেরার পর ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন না মানায় পাঁচ মাসের হাজতবাসের সাজা পেয়েছেন। যে ৪৫ জন সংক্রমিত হয়েছেন তাদের মধ্যে তিন জনের শরীরে এই নতুন চরিত্রের করোনাভাইরাসের হদিস মিলেছে বলে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূর হিশাম আবদুল্লাহ জানান, ভাইরাসের এমন চরিত্র বদলের জেরে ভ্যাকসিনের আবিষ্কার ও প্রভাব নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গেল। ভাইরাসের প্রকৃতি বদলে গেলে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা কতটা কার্যকরী হবে তা আলোচনা সাপেক্ষ। রবিবার তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “সাধারণ মানুষকে এবার আরও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। না হলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই ব্যর্থ হবে।”
প্রসঙ্গত, রবিবারই দেশটিতে ২৫ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একটা সময় করোনামুক্ত হওয়ার পথে থাকা দেশে আবার নতুন করে সংক্রমিতের সন্ধান মেলায় উদ্বিগ্ন মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যকর্তারা। বিষফোড়ার মতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে নতুন প্রকৃতির ভাইরাসের সন্ধান মেলায়।
তবে শুধু মালয়েশিয়াই নয়, এই চরিত্র বদল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO)। যদিও তাদের দাবি, এই নয়া প্রকৃতির ভাইরাসের সংক্রমণে পরিস্থিতি অবনতি হবে কি না এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে এর ফলে প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। টিকা কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। ভাইরাসের এই বিবর্তন যা এর আগে ইউরোপের অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে তাকে বলা হয় ডি৬১৪জি। মালয়েশিয়াতে একটি ক্লাস্টারে সংক্রামিত ৪৫ জনের মধ্যে অন্তত তিনজনের শরীরে এই নতুন ভাইরাস দেখা গিয়েছে। এই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল ভারত থেকে ফেরা এক রেস্তোরাঁ মালিকের থেকে। কোয়ারেন্টিন নিয়ম ভাঙায় তাকে পাঁচ মাসের জেলের সাজা ও জরিমানা করা হয়েছে। ফিলিপাইন্স থেকে ফেরা কিছু মানুষের মধ্যেও এই ভাইরাস দেখা গিয়েছে বলে খবর।
মালয়েশিয়ার ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ নুর হিশাম আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, এই নতুন প্রজাতির খোঁজ মেলার অর্থ হল এতদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়ে যে গবেষণা হল তা ফের নতুন ভাবে শুরু করতে হবে। এই ভাইরাস ১০ গুণ বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা নিতে হবে আমাদের।
নুর হিশাম মালয়েশিয়ার মানুষদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়ে বলেছেন, মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে ও আরও সুরক্ষা নিতে হবে যাতে এই নতুন প্রজাতির ভাইরাস বেশি ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এই ধরনের বিবর্তনের চেনকে ভাঙার জন্য মানুষের সহযোগিতা আমাদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাসের এত ব্যাপক প্রভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ভাইরাসের এই বিবর্তন। তার ফলে বারবার গবেষণায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। যে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ চলছে, দেখা যাচ্ছে সেই ভ্যাকসিন এই নতুন ধরনের প্রজাতির ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। সেক্ষেত্রে নতুন করে গবেষণা করে সেইমতো ভ্যাকসিন তৈরি করতে হচ্ছে। এদিকে ভাইরাস নিজের চরিত্র বদলাচ্ছে।
এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেকটা সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। শনিবার নতুন করে ২৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা ২৮ জুলাইয়ের পর সর্বাধিক। রোববার আরও ২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর এই নতুন আক্রান্তদের অনেকের শরীরেই বিবর্তিত ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এতেই নতুন চিন্তায় পড়েছেন বিজ্ঞানীরা।
————–