দাসো রাফাল ফরাসি উচ্চারণে এর আক্ষরিক অর্থ “বাতাসের ঝাঁক” আর সামরিক অর্থে “আগুনের বিস্ফোরণ”। এটি হল একটি ফরাসি যুগল ইঞ্জিন, কানার ডেলটা উইং, বহুবিধ যুদ্ধবিমান নকশা যুক্ত এবং দাসো এভিয়েশন দ্বারা নির্মিত, বিস্তৃত অস্ত্রের সাথে সজ্জিত। রাফালের উদ্দেশ্য আকাশে আধিপত্য, আন্তঃব্যবস্থা, বিমান পুনরুদ্ধার, স্থল সমর্থন, গভীরতর প্রতিরোধ, জাহাজবিরোধী প্রতিরোধ এবং পারমাণবিক প্রতিরোধ অভিযান সম্পাদন করা। দাসো দ্বারা রাফাল একটি “ওম্নিরোল” বিমান হিসাবে পরিচিত। ফ্রান্সের কাছ থেকে ৫৮ হাজার কোটি টাকায় অত্যাধুনিক 36টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে 2016 সালে চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। ফ্রান্সের যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা ডেসল্ট এভিয়েশন তৈরি করেছে রাফায়েল। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, 27 জুলাই, সোমবার ফ্রান্স থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল পাঁচটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান। ফ্রান্সের মেরিগনেক থেকে বিমানগুলো পাড়ি দিয়েছিল এবং আজ 29 জুলাই (বুধবার) কিছুক্ষনের মধ্যেই IAF-এর Airbase Ambala তে অবতরণ করে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যোগ দিচ্ছে, ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফায়েল যুদ্ধবিমান । ভারত শুধু 36টি যুদ্ধবিমান পাচ্ছে তা নয়। আনুষাঙ্গিক অস্ত্রশস্ত্রও ভারত ফ্রান্সের কাছ থেকে পাবে। এরমধ্যে রয়েছে মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্র। পৃথিবীতে যত রকমের আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, সেগুলির মধ্যে এই মিটিওর ক্ষেপণাস্ত্রকে অন্যতম সেরা হিসেবে ধরা হয়। শব্দের বেগের চেয়ে চার গুণ জোরে ছোটে এই ক্ষেপণাস্ত্র। রাফাল যুদ্ধবিমান এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আকাশে 100 কিলোমিটারেরও বেশি দূরে থাকা শত্রু বিমানকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, রাফাল এবং মিটিওর-এর এই যুগলবন্দি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যের ছবি বদলে দেবে। রাফায়েল যুদ্ধবিমানের মতো ডাবল ইঞ্জিন মাল্টি-রোল অল ওয়েদার ফাইটার এয়ারক্র্যাফ্ট আকাশে যেভাবে দাপট দেখাতে পারে, ভারতের দুই প্রতিপক্ষ চীন এবং পাকিস্তানের কোনও যুদ্ধবিমানই তার ধারেকাছে আসে না। অনেক উচ্চতা থেকে এবং অনেক দূরত্ব থেকে ভূপৃষ্ঠে থাকা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে রাফাল। 1986 সালের 4th জুলাই এই বিমানটি বানিয়েছে ফ্রান্সের Dassault Aviation. 2001 সালের 18th মে ফ্রান্সের বায়ু সেনার অন্তর্ভুক্তি করা হয় এই বিমানটিকে। সিঙ্গেল এবং ডবল পাইলট ককপিট বিশিষ্ট 4.5 জেনেরেশনের মডেল গুলো বর্তমানে বাজারে আছে। সাথে রয়েছে মিডিয়াম ওয়েট ক্যাটেগরি ও টুইন ইঞ্জিন মাল্টিরোল এয়ার ক্র্যাফট। দুটি শক্তিশালী Snecma M88 টার্বো ইঞ্জিন রয়েছে। ইঞ্জিনের ড্রাইথ্রাস্ট হলো 50.04KN আর আফটার বানিং থ্রাস্ট হলো 75KN ডেল্টা টাইপ বা ত্রিকোণ আকৃতি এই বিমানের দৈঘ্য 15.27 মিটার, চওড়া 10.8 মিটার, উচ্চতা 5.34 মিটার আর উইং এরই হলো 45.7 M^2, এই বিশেষ আকৃতির জন্য এই যুদ্ধ বিমানের গতি এবং অস্ত্রধারন ক্ষমতা অনেক বেশী। সর্বাধিক 15235 মিটার উচ্চতায় এই বিমান উড়তে পারে। সর্বাধিক উচ্চতায় গতিবেগ মাক 1.8 আর সর্বানিম্ন উচ্চতায় গতিবেগ 1.1 অস্ত্র ছাড়া এই বিমানের ওজন 9850 – 10600 Kg, এবং সর্বোচ্চ 24500 Kg মত ওজন নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা আছে। প্রতি সেকেন্ডে 305 মিটার গতিতে এই যুদ্ধ বিমানটি উপরে উঠতে পারে। মাঝ আকাশে জ্বালানি তেল ভর্তি করতে সক্ষম এই যুদ্ধ বিমান এছাড়াও পরমাণু অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। রাফায়েল জেট থেকে আকাশপথেই পরমাণু হামলা চালানো সম্ভব। যার অর্থ, ভারতের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সামর্থ্য আরও বাড়বে।
–~০০০XX০০০~–