মালবিকা সরকারী স্কুলের দিদিমণি। বিয়ের বাজারে তার দাম এখন অনেক। কিন্তু মালবিকা কবিকে ভালোবেসে ফেলল। বাংলাতে এম এ করেছেন কবি। পৈতৃক কিছু সম্পত্তি আছে বটে তবে তা জটিলতায় ভরা। কবির নাম অমলকান্তি। সেই অমলকান্তি। যে রোদ্দুর হতে পারেনি। দিনের পর দিন পারিবারিক কলহ যাকে একাকী করে দিয়েছিল। তবুও যৌবন আসে। কবির জীবনে মালবিকার আবির্ভাব ঘটল। আষ্টেপৃষ্ঠে ভালোবাসলো কবি। একদিন একান্তে বললে তার জীবনের কথা। বাবার দ্বিতীয় বিবাহ। প্রথম পক্ষের সাথে দ্বিতীয় পক্ষের সংঘাত। বাবার মৃত্যুর পরও সম্পত্তির কোনও সুরাহা বা ভাগ বাটোয়ারা হয় নি।
অবাক হল মালবিকা। কিছুতেই অমূল্য এই প্রেম কে ত্যাগ করতে তার মন সায় দিল না। এ প্রেম স্বর্গীয়। মালবিকার মনে হল তার টাকার জন্য হয়ত অনেক পুরুষ তাকে বিবাহ করতে চাইবে কিন্তু সত্যিই কী ভালোবাসবে। ভালোবাসাহীন ঘর নরক। আর এই কবিকে ত্যাগ করে মানসিক বিপর্যয় ঘটবে তার। নাই বা থাকল সম্পদ, মালবিকার ওতেই সুখ।
এর উপরে আবার আর এক আপদ জুটলো। পরিবারের সবাই বেঁকে বসলো। তারা মাকে বললে “অমন মেয়েটার এই বর। কিছুতেই মানা যায় না। চাল নেই চুলো নেই। মেয়েটাকে কেমন বশ করে নিয়েছে। তার উপর পাত্রের বাবার দুটো পক্ষ। সম্পত্তির মালিকানা মেয়েদের পর্যন্ত। অতএব এ বিয়ে মানা যায় না।
মালবিকার জীবন একটি প্রশ্নচিহ্নের সামনে এসে দাঁড়াল। সেই ছোট্ট থেকে লড়াই করতে করতে যেন হাঁপিয়ে উঠেছে মালবিকা। এই যে এত সীমাহীন প্রতিকূলতার মধ্যেই সাঁতার কাটছিল সে ,কখনও তো তার পরিবার তাকে সাহস জোগায় নি। বরং কুকথা বলেছে। অপমানের পাহাড় ছুঁড়ে দিয়েছে। আজও সেসব অপমানের কথা ভুলতেই পারে না মালবিকা। নিজের মেয়েদের সৌন্দর্য নিয়ে এত বড়াই যে ভাইঝির মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত বিচারের বিষয় ছিল। আজ এরা এমন করে মালবিকার ব্যাপার নিয়ে কেন মাথা ঘামাচ্ছে। সে অধিকার কী ওদের আর আছে?
সকল অমত ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে কবিকে বিয়ে করল মালবিকা। শুরু হল নতুন জীবন। মালবিকা এখন বধূ। আর কবির নিশ্চিন্ত জীবন। এতদিন কবির চিন্তার বিষয় ছিল কী করে তার জীবন চলবে। আর এখন ভিখারী মহাদেব অন্নপুন্নের সন্ধান পেয়ে গেছেন। অতএব কবিতা লেখা আর ঘুমানো। মালবিকার আইবুড়ো নাম খন্ডালো। কবির সাথে কিছুদিন রোমান্সে কাটল। কিন্তু তারপর বেরিয়ে এল তার প্রকৃত মুখোশ। অলস নিষ্কর্মা কবির একটাই কাজ। মালবিকার বেতনের হিসাব করা। বড়ো ভুল করে ফেলল মালবিকা। এই জীবন যেন জতুগৃহ।
প্রথমে মালবিকা বুঝতেই পারেনি,ওই কথায় কথায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম নেওয়া মানুষটা ভিতরে ভিতরে এতটা নিষ্ঠুর। বেতনের থেকে হাজার পাঁচেক টাকা মাকে পাঠাতে প্রথম অশান্তির বীজ রোপিত হল। অমলকান্তি ঘোষণা করলে “তোমার মা বা ভাই এরা তোমার জীবনের অতীত। তোমার বেতনের উপর অধিকার আমার। আমি তোমার স্বামী। মালবিকার কণ্ঠ সেদিন স্তব্ধ হয়ে গেল। এখানেই শেষ নয়। যেদিন স্যালারি অ্যাকাউন্ট কপ্পিউটারাইসড হল, সেদিন জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট দিল মালবিকা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুধুই নয়,সকলে আশ্চর্য হল। বলল “এটা আপনি করবেন না ম্যাডাম। ”
মালবিকার মুখে ম্লান হাসি। আর তারপর স্যালারি ঢুকতেই কবি সব বেতন তুলে নিতে থাকল। মালবিকার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এ কোন পরিস্থিতিতে পড়ল সে? সে কী মুক্তি পাবে এখান থেকে?