“মৃত্তিকা ও মানব”
–:: পারমিতা ::–
মৃত্তিকা = ভালোবাসি ভালোবাসি (গুনগুন করে গান)
মানব = আহ! কে গান গায়? কার এতোবড় স্পর্ধা? একি মৃত্তিকা? তুমি? তুমি আবার এসেছ? কেন এসেছ? তোমাকে না বলেছি তুমি এখানে আসবে না।
মৃত্তিকা = আসব আসব আসব। একশোবার আসব। হাজারবার আসব। আমার যেখানে খুশি সেখানে যাব। এ গ্রহ যতটা তোমার ততটাই আমার। সেটা তুমি অস্বীকার করতে পার না মানব।
মানব = তোমাকে বলেছি মৃত্তিকা, তুমি আমাকে মানব বলে ডাকবে না। আমি মানব নই। আমি ঈশ্বর।
মৃত্তিকা = হাহাহাহা নিজেকে ঈশ্বর ভাবলেই তো তুমি ঈশ্বর হয়ে যাবে না। তোমার ঐ চারটি কলকব্জা নেড়ে, কিছু মূর্খ মানুষকে নিজের বশে করে নিয়ে তুমি নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবছ? তোমার এই ঔদ্ধত্যই তোমার বিনাশ ডেকে আনবে।
মানব = আমি মৃত্যুকে জয় করেছি। আমার বিনাশ নেই। আমি অজেয় আমি অমর।
মৃত্তিকা = চুপ কর। চুপ কর। বন্ধ কর তোমার এ আস্ফালন। তুমি তো শুধু ধ্বংস করতে পার। যে ধ্বংস করে সে নিজেই একদিন ধ্বংস হয়ে যায়। যিনি সর্বশক্তিমান, তিনি সুন্দরের সাধনা করেন। তিনি সৃষ্টি করেন।
মানব = চারদিকে চেয়ে দেখ মৃত্তিকা, এই ধূলোবিহীন বিস্তৃত রাজপথ, জল স্থল অন্তরীক্ষে সর্বত্র নিঃশব্দে দ্রুতবেগে ধাবমান যানবাহন, এই ঝকঝকে চকচকে অতিকায় ইমারতগুলি দেখ, আমার সুশৃঙ্খল প্রজাদের দেখ, সবাই বিরামহীন নিজের নিজের কাজ করছে। দেখ এই মায়া নগরীর কোথাও এতোটুকু মালিন্য নেই। এ তো আমারই সৃষ্টি। আমি যা চাই তাই সৃষ্টি করতে পারি।
মৃত্তিকা = একে তুমি সৃষ্টি বল? এতো ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলা। প্রাণ কই তোমার মায়া নগরীতে? গাছ নেই, ফুল ফল শস্য নেই। পশুপাখি, কীট পতঙ্গ, প্রজাপতি নেই। শিশুর কোলাহল নেই। যা কিছু সহজ, যা কিছু সুন্দর, কিচ্ছু নেই কিচ্ছু নেই তোমার এই মায়া নগরীতে। আছে শুধু কিছু প্রাণহীন ইমারত আর যন্ত্রের মত মানুষ, যারা তোমার নির্দেশে ওঠে বসে চলে ফেরে। তোমার মায়া নগরীতে প্রেম নেই, স্নেহ নেই, বন্ধুত্ব নেই, হাসি নেই, গান নেই।
মানব = না না নেই। আমি চাই না বলে নেই। স্নেহ প্রেম বন্ধুত্ব এসব ফালতু আবেগ আমি সহ্য করতে পারি না। এসব তোমার ঐ ধুলোময়লার নোংরা পৃথিবীতেই মানাত। আমার মায়া নগরীতে আবেগের কোন জায়গা নেই। আবেগ উন্নতির পথরোধ করে। মানুষকে অলস করে। আর গান? হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, গান। তুমি একদম গান গাইবে না মৃত্তিকা। তোমার গানের সুর আমার নিয়মনিষ্ঠ প্রজাদের বিচলিত করে। ওরা নিজেদের কাজ থামিয়ে তোমার গান শোনে। তুমি একদম গান করবে না। এই আমার হুকুম।
মৃত্তিকা = তোমার হুকুম আমি মানবো না। গান আমি গাইবই। গান আমার সহজাত। এই পৃথিবীর যা কিছু সব কিছুর মধ্যেই তো সুর আছে, তাল আছে, ছন্দ আছে। গান তো আমাদের জীবনের অঙ্গ। এই যে তোমার আমার হৃদয় কেমন তালে তালে আন্দোলিত হচ্ছে তুমি শুনতে পাচ্ছ না?
মানব = তোমার এসব ছেঁদো কথায় আমাকে ভোলাতে পারবে না মৃত্তিকা। গান করলে তার শাস্তি তুমি পাবে।
মৃত্তিকা = হুঁহ। তোমার শাস্তিকে আমি ভয় করি না। কি শাস্তি দিতে পারো তুমি? মৃত্যুদণ্ড? হাহাহাহা মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। আমার ঠাকুর মন্ত্র দিয়ে গেছেন মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান।
মানব = তুমি এতো আবাধ্য কেন মৃত্তিকা?
মৃত্তিকা = অবাধ্য নই, স্বাধীন। আমার একটা মন আছে। আমি স্বাধীনভাবে ভাবতে পারি। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারি। আমি তোমার ঐ যান্ত্রিক প্রজাদের মত নই। যারা উদয়াস্ত কাজ করে, রাশি রাশি টাকা রোজগার করে তারপর সেই টাকা নিয়ে কি করবে তারা নিজেই জানে না। আগে মানুষ পরিবার প্রতিপালন করা, তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখার জন্য রোজগার করত। এখন ওদের পরিবার বলে আর কিছু নেই। তুমি ওদের পরিবার কেড়ে নিয়েছ। ওদের শিশুরা জন্মের পরই তোমার ঐ নিয়মের কারখানায় যন্ত্রমানব হওয়ার শিক্ষা নিতে চলে যায়। স্ত্রী পুরুষ একসঙ্গে একই ছাদের তলায় থাকলেও ওদের মধ্যে প্রেম নেই। ভালোবাসা নেই। ওরা প্রত্যেকেই একা। কেউ কারোর জন্য ভাবে না।
আগে মানুষ খাবার জন্য রোজগার করত, এখন ওরা ক্যাপসুল খায়। ওরা ভাত ফোটার সুঘ্রাণ কি তা জানে না।
মানব = এই, এই কথায় মনে পড়ল। উফ! তুমি এতো উল্টোপাল্টা কথা বল যে তোমার সামনে আমি সব ভুলে যাই। মনে পড়ল যে তোমার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে।
মৃত্তিকা = আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ! কে করল আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ?
মানব = এই মায়া নগরীর প্রতিটা মানুষের প্রতিটা নড়াচড়ার খবর আমি রাখি। এই মায়া নগরীর প্রতিটা কোনায় কোনায় কি হচ্ছে সব আমি দেখতে পাই। সব শুনতে পাই। এই মায়া নগরীর সর্বত্র আমার অন্তর্জাল ছড়ানো আছে। তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুমি তোমার আশ্রয়স্থলের চতুর্দিকে শস্যক্ষেত বানিয়েছ। গাছ পুঁতেছ। বৃষ্টির গান গেয়েছ। তাতে আকাশের এক কোণে মেঘ দেখা দিয়েছে আমার মেঘ মেশিনের সাহায্য ছাড়াই। ঝোড়ো হাওয়া দিয়েছে। সেই হাওয়ায় টাটকা ফসলের গন্ধ। সেই গন্ধে আমার প্রজারা চঞ্চল হয়েছে। বিচলিত হয়েছে। তুমি জানো মায়া নগরীতে বৃক্ষরোপণ বারণ। চাষ করা আইন বিরুদ্ধ।
মৃত্তিকা = তুমি মূর্খ মানব।
মানব = আমাকে ঈশ্বর বল মৃত্তিকা।
মৃত্তিকা = আমি তোমায় ঈশ্বর মানি না। তুমি মূর্খ তাই তুমি বুঝতে পারছ না আমি তোমার কৃত্রিম যান্ত্রিক মায়া নগরীতে প্রাণ সঞ্চার করছি। বাঁচিয়ে তুলছি তোমার মৃত নগরী, তোমার মৃতপ্রায় প্রজাদের। তোমাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করছি।
মানব = তুমি আবার সেই নষ্ট সময় ফিরিয়ে আনতে চাইছ মৃত্তিকা। যখন একটা রুটির জন্য, এক গ্লাস জলের জন্য, এক খন্ড জমির জন্য মানুষ মানুষকে খুন করত।
মৃত্তিকা = সে তোমার লোভ, তোমার ক্ষমতার লোভ তোমার অর্থের লোভ যা মানুষকে মানুষের সাথে লড়িয়ে দিত। পৃথিবীর ওই অবস্থার জন্য তুমি নিজে দায়ী ছিলে। তুমি বানিয়েছিলে সেই পরিস্থিতি। কিন্তু না, সেই সময়ে নয়, আমি তোমায় ফিরিয়ে দিতে চাইছি আরও আগের পৃথিবী। যখন সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা পৃথিবীতে সবার জন্য খাদ্য ছিল। নদীতে সুশীতল জল ছিল। পশুপাখিদের জন্য নিবিড় অরণ্য ছিল। মানুষ খুশি ছিল।
মানব = মিথ্যে কথা। মানুষ কখনই খুশি ছিল না। প্রথমে তারা গোষ্ঠি বানিয়ে থাকত। তখন এক গোষ্ঠির সঙ্গে অন্য গোষ্ঠির লড়াই হত ফসলের জমি, গবাদি পশু আর নারী নিয়ে। তারপর তোমরা দেশ বানালে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দিয়ে পৃথিবীকে খন্ড বিখন্ড করলে। তারপর সেই কাঁটাতারের দু’ধারে সদা সতর্ক পাহাড়া বসালে। প্রত্যেকটা দেশ অন্য দেশ দখলের ছুতো খুঁজতে আর মানুষ মারতে। কখনও চামড়ার রঙের দোহাই দিয়ে কখনও ধর্মের দোহাই দিয়ে। আমি সব দেশ সব ধর্মের মানুষকে নিজের দখলে করে নিয়েছি। দেখ এখন ওরা সবাই সমান। ওদের মধ্যে আর কোন বিভেদ নেই।
মৃত্তিকা = সে তো তোমারই লোভ যা মানুষকে মানুষের সঙ্গে লড়িয়ে দিত। সর্বশক্তিমান হওয়ার লোভে তুমি এক ধর্মীয় গোষ্ঠির মানুষকে অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠির মানুষের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়েছ। ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টিকে তুমি ক্ষমতা খলের হাতিয়ার করেছিলে। মানুষের চামড়ার রঙ দিয়ে তুমি তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিলে। তুমি গণতন্ত্র চাওনি। তুমি সমাজতন্ত্র চাওনি। তুমি একা ক্ষমতা ভোগ করতে চেয়েছিলে।
মানব = গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র সব ঘোড়ার ডিম। সব বুজরুকি। কোন তন্ত্রেই মানুষ শান্তিতে ছিল না। তোমরা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র দিয়ে সব মানুষকে সমানাধিকার দিতে চেয়েছিলে তো? কিন্তু পার নি। আজ দেখ সব মানুষ সমান।
মৃত্তিকা = হাহাহাহা হাসালে তুমি। ওদের তুমি মানুষ বল? যারা তোমার এই মায়া নগরীতে চলে ফিরে বেড়াচ্ছে ওরা তো আর মানুষ নেই। ওরা সব যন্ত্র। ওদের মধ্যে বৈচিত্র কই? বৈচিত্রই তো ছিল মানুষের আসল বৈশিষ্ট। এক একজন মানুষের এক এক রকম চিন্তা ভাবনা। তার এক এক রকম বহিঃপ্রকাশ। এগুলোই তো মানুষকে জীব জগতের অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করেছিল। এখন তো ওরা চিন্তা করতেই ভুলে গেছে। প্রশ্ন করতে ভুলে গেছে। প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে। এখন ওরা যন্ত্রের মত শুধু হুকুম তামিল করে। ওদের তুমি মানুষ বল?
মানব = তোমার কিসের এতো অহংকার মৃত্তিকা? তুমি কিসের জোরে আমার সামনে তোমার উদ্ধত মাথা উঁচু করে দাঁড়াও? কিসের শক্তিতে তুমি আমার আদেশের বিরুদ্ধাচারণ কর? তুমি জানো আমার অপরিসীম ক্ষমতার সামনে তুমি কিচ্ছু না। তুমি তুচ্ছ। অতি তুচ্ছ। আমি চাইলেই এই মুহুর্তে আমার একটা আঙুলের চাপে তোমার শস্যক্ষেত তোমার গাছগাছালি সব ধ্বংস করে দিতে পারি। পিঁপড়ের মত টিপে মারতে পারি তোমাকে। তোমার কিসের এত অহংকার?
মৃত্তিকা = আমার অহংকার আমার স্বাধীনতা। আমার স্বাধীন চেতনা। আমার সৃষ্টিশীল সত্ত্বা। আমিমৃত্তিকা। আমিই পৃথিবী। আমিই প্রকৃতি। আমিই তোমায় জন্ম দিয়েছি। তুমি আমাতেই বাস কর। আমায় ধ্বংস করে দিলে তোমারও অস্তিত্ব থাকবেনা। আমি যতদিন থাকব আমার শেষ বিন্দু শক্তি দিয়ে এই পৃথিবীকে সবুজ করে যাব। এই গ্রহে প্রাণসঞ্চার করে যাব। তোমার ওই কৃত্রিমতা যান্ত্রিকতা তোমায় শান্তি দেবে না। তুমি বলো তুমি অজেয় তুমি অমর। তুমি নিজেও জানো মৃত্যুভয় তোমার নিত্যসঙ্গী। তুমি কাউকে বিশ্বাস করতে পার না। তুমি নিজেই নিজের স্বাধীনতা খুইয়ে নিজেকে এই ঘেরাটোপে বন্দী করে রেখেছ শুধু অনন্তকাল বেঁচে থেকে এই ক্ষমতা ভোগ করবে বলে। কিন্তু তুমি আজ বড় একা। একা একা ক্ষমতা ভোগ করতে করতে তুমি ক্লান্ত। তুমি ভালো নেই মানব তুমি ভালো নেই। তুমি ফিরবে। ফিরবেই। আমার কাছে তোমায় ফিরতেই হবে।
মানব = না না না। আমি উন্নতি চাই। আমি অগ্রগতি চাই। আমি ক্ষমতা চাই। আজ সারা পৃথিবী আমার করতলগত। আমি ফিরব না। পিছনে ফিরব না।
মৃত্তিকা = তুমি যাকে অগ্রগতি বলছ তা অগ্রগতি নয়। তুমি পৃথিবীর গর্ভ উজার করে ফেলেছ। তোমার অপরিসীম চাহিদা মেটাতে মেটাতে পৃথিবীর সব সম্পদ আজ নিঃশেষ। খনিতে কয়লা নেই, তেল নেই। তোমার মায়া নগরীর নদীতে জল নেই। তুমি যে যন্ত্রের গর্ব কর সেই যন্ত্রে প্রাণসঞ্চার করে যে বৈদ্যুতিক শক্তি সেই শক্তি নিঃশেষিতপ্রায়। সেদিন আর দূরে নেই যেদিন তোমার যন্ত্র আর চলবে না। সব জমি ঢেকে তুমি কংক্রিটের জঙ্গল বানিয়ে ফেলেছ। যেটুকু জমি আছে তা রুক্ষ শুষ্ক। সেখানে তোমরা ফসল ফলাও না, বৃক্ষরোপণ কর না। খুব তাড়াতাড়ি তোমার মায়া নগরী ইঁট পাথর কাচ আর ধাতুর তৈরী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। মৃত্যুর মত অন্ধকার ছেয়ে ফেলবে চারদিক। তোমার ঐ বোতলে বন্দী অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে। খোলা হাওয়ায় শ্বাস নেওয়ার জন্য তোমার ফুসফুস হাঁফিয়ে উঠবে। তোমার ঐ ক্যাপসুল তোমার খিদে মেটাতে পারবে না। এক মুঠো ভাতের জন্য উন্মাদ হবে তুমি। সেদিন তুমি ফিরবে। ফিরতে তোমায় হবেই আমার সবুজের সংসারে। সেদিন আমার সঙ্গে গলা মিলিয়ে তুমিও গাইবে…
“যা উদাসীন, যা প্রাণহীন, যা আনন্দহারা,
চরম রাতের অশ্রুধারায় আজ হয়ে যাক সারা–
যাবার যাহা যাক সে চলে রুদ্র নাচের তালে
ওরে ঝড় নেমে আয়, আয় রে আমার শুকনো পাতার ডালে।”
মানব = একি মৃত্তিকা কোথায় যাচ্ছ তুমি?
মৃত্তিকা = প্রাণ জাগাতে যাচ্ছি গো। তোমার মৃত নগরীতে প্রাণ জাগাতে যাচ্ছি। ঐ শোন, শুনতে পাচ্ছ? তোমার মৃত নগরী জাগছে। তোমার নিয়মের কারখানায় বন্দী শিশুরা গান গাইছে। গান “ হারেরেরেরেরে আমায় ছেড়ে দে রে দে রে”
মানব = কে? কে শেখাল ওদের এই গান?
মৃত্তিকা = আমি ওদের মনের জানলাটা খুলে দিয়েছি। ওরা মুক্ত প্রকৃতি দেখতে পেয়েছে। তাই ওরা মনের আনন্দে গাইছে। এ তোমার শেখানো বুলি নয়। ঐ দ্যাখো তোমার যান্ত্রিক প্রজারা বোতল বন্দী কৃত্রিম অক্সিজেন ছুঁড়ে ফেলে বাতাসে নাক ডুবিয়েছে। বাতাসে নাক ডুবিয়ে ওরা ফসলের ঘ্রাণ নিচ্ছে। ওরা ফিরে যেতে চাইছে আমার কাছে। মুক্ত প্রকৃতির কাছে। আমি যাই। আমি যাই ওদের কাছে। তুমি থাকো তোমার ক্ষমতার ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে একা একা।
মানব = না না না আমি আর একা থাকতে চাই না। আমাকে একা ফেলে রেখে যেওনা মৃত্তিকা। আমি চাই না এই সর্বগ্রাসী ক্ষমতা। আমি ফিরে যেতে চাই তোমার সবুজ আঁচলের আশ্রয়ে। তোমার ধুলোমাটির পৃথিবীতে। সবুজের কাছে। সহজের কাছে। আমাকে নিয়ে চল মৃত্তিকা।
মৃত্তিকা = পথ তোমার জানা আছে মানব। যে কোন দিন চলে এসো। তোমার ক্ষমতার লোভ তোমার সভ্যতার অহংকার ছুঁড়ে ফেলে চলে এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।
মানব = মৃত্তিকা, দাঁড়াও আমি আসছি। এখুনি আসছি।
মৃত্তিকা = তাহলে চলো, আমরা দুজনে মিলে নতুন পৃথিবী গড়ে তুলি। সবুজ পৃথিবী। সহজ পৃথিবী। কাঁটাতারহীন পৃথিবী। যেখানে শিশুরা শৈশব ফিরে পাবে। যেখানে সবার জন্য খাদ্য থাকবে, জল থাকবে। শ্বাস নেওয়ার জন্য মুক্ত বাতাস থাকবে। যেখানে সব মানুষ মুক্ত হবে, স্বাধীন হবে। বল, আমার সঙ্গে বল মানব
দুজনে =
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
———◆◇◆◇XX◆◇◆——–