ওমা ! পরে খবর পেয়ে তো মাথায় হাত ! এটা একটা বিয়ে ! নাকি এটা একটা পাত্র ! শেষে ভূষণ নন্দীর মেজো ছেলে ওই মুখপোড়া ঘনশ্যামের সঙ্গে বিয়ে ! এই সম্বন্ধ ঠিক করেছে ওর ভাইয়েরা ! লোকটা টাকার কুমীর আর একই সঙ্গে দুশ্চরিত্র আর খারাপ। এমন কোন দুষ্কর্ম নেই যে ওই লোকটা করে নি। ভূষণ নন্দীও এককালে এই গ্রামের ত্রাস ছিল। গ্রামের কোন বউ, মেয়ের দিকে নজর পড়ল তার আর ছাড়ান ছিল না লোকটার কাছে। তিনটে ছেলের মধ্যে মেজটি একেবারে বাপের হাত পুরো মাত্রায় রেখেছে। এর আগেও দু দুটো বিয়ে করেছিল। প্রথম বউটা পালিয়ে বেঁচেছে। তার বাপও ক্ষমতাশালী। ফলে মুখে হম্বি তম্বি করলেও বিশেষ কিছু সুবিধে করে উঠতে পারে নি ঘনশ্যাম। পরেরটা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। লোকে সামনে হাত কচলায় কিন্তু পিছনে খুনীই বলে লোকটাকে। হেন কুকর্ম নেই যা ওর দ্বারা হয় না। আসলে বিয়ে নয় নিজেদের দেনা শোধ করার জন্যই ওর ভাইয়েরা বেচে দিচ্ছে ওকে। সব অকাল কুস্মাণ্ড ভাই। জমি জায়গা তো কম রেখে যায় নি বাপ ঠাকুর্দা। সে সব দেখে শুনে চাষ বাস করতে পারলে ভাবনা থাকতো? করল না তো কেউ। না করল লেখাপড়া না করল কাজ কর্ম। মাঝখান থেকে বাপ জ্যাঠা মরার সঙ্গে সঙ্গে জমি বন্ধক দিয়ে খাওয়া আর বাবুয়ানি চালাতে লাগল। কতদিন চলবে এভাবে ? ওই মুখপোড়া হাড় হাবাতে ঘনশ্যাম কবে নাকি রিন্টিকে পুকুর থেকে স্নান করে আসতে দেখেছে। ব্যাস। সেই দিন থেকে জোঁকের মত পেছনে পড়ে আছে। কাল রাতে শুতে যাবার আগে ঘরের ভেতরে ওদের আলোচনা শুনে ফেলেছে মেয়েটা। তারপর সকাল হ’তেই পায়ে এসে পড়েছে পিসির। বিয়ে ওর কী দরকার। ভায়েদের সংসারে উদয়াস্ত খেটে দু মুঠো ভাত পেলেই তো ওর চলে যাবে। বিয়ের দরকার নেই। পিসি যদি গিয়ে একটু বুঝিয়ে বলে। পিসি অবশ্য রাজি হয়নি। গায়ে পড়া হয়ে ওসব বলতে গেলে সন্দেহ হবে ওদের। হয়ত আর আসতেই দেবে না এ বাড়িতে। যা সব ভাই ! কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এখানে রাখলে পিসি ওকে বাঁচাতে পারবে না। মেয়েটাকে চোখের সামনে মরতে দেখতে হবে। ততক্ষণে পিসির মাথায় এসে গেছে সুখেনের আজ আসার কথা । একমাত্র উপায় যদি সুখেন ওকে কোনরকমে কলকাতায় নিয়ে যেতে পারে। কলকাতা অনেক বড় শহর। ওখানে লুকিয়ে থাকার অনেক সুবিধে। একটা কাজ টাজ কি সুখেন জুটিয়ে দিতে পারবে না ? ওরা তো অনেক বছর আছে কলকাতায়। শিখা যেমন রান্নার কাজ করে সেরকম দিলেও হবে। পিসির বারবার কাকুতি মিনতিতে সুখেন তখন জেরবার। সঙ্গে ওই মেয়ের চোখের অসহায় আকুতি। কি করবে – পরে কি হবে এসব ভাবার অবকাশই পেল না সুখেন। মতলবও ছকে রেখেছে পিসি। এখান থেকে এখন বাড়ি চলে যাবে রিন্টি। আর সুখেন সন্ধের নয় রাতের গাড়ি ধরবে। ফাঁক বুঝে টুক করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্টেশনে চলে আসবে রিন্টি। দুজনে আলাদা কামরায় উঠবে। একবার ট্রেনে উঠে বসে পড়তে পারলে আর চিন্তা কি ? কেউ টেরও পাবে না। আর পিসি যে এর মধ্যে আছে সেটাও কেউ জানবে না। মতলবটা ভালোই ফেঁদেছিল পিসি । শুধু এদিকে শিখার কথাটা বেমালুম ভুলে গেছিল। বলা নেই কওয়া নেই এরকম একটা সোমত্ত মেয়েকে হঠাৎ এনে তুললে শিখা যে কী অনর্থ করবে সেটা আন্দাজ করতে পারেনি। আর তার ফল ভোগ করছে এখন সুখেন। রুটি করা শেষ হল। সব গুছিয়ে তুলে জায়গাটা মুছে সকালে করে রাখা তরকারি গরম বসালো শিখা। জানে সুখেন এরপর খাবার বাড়বে। সকাল সকাল খেয়ে শুয়ে না পড়লে ভোর সাড়ে চারটেতে উঠতে পারবে না ও। বাসন কোসন মাজা, ঘর দোর মোছা, বাড়ির রান্না সেরে, সুখেনের দুপুরের রুটি তরকারি করে বেরোয়। দু বাড়ি রান্নার কাজ। সকাল সকাল না বেরোলে সামাল দেবে কী করে? উসখুস করে ওঠে সুখেন। এতক্ষণে চোখ ফিরিয়ে তাকায় শিখা। “ তোমার কুটুমকে বল হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসতে। পায়ে ধরে বলতে হবে নাকি ?” আহ্লাদে আর কথা জোগায় না সুখেনের মুখে। “ কী যে বল ! ওরে ও রিন্টি। ওঠ। কাপড় চোপড় ছাড়। হাত মুখ ধুয়ে আয়। বৌদি ডাকছে।” থালায় রুটি বাড়তে বাড়তে ভ্রু কুঞ্চিত করে শিখা। “ মরণ !”
অনবদ্য ….
অনবদ্য …. আরো সৃজন হোক