ভিটের টানে (তৃতীয় পর্ব)
সলিল চক্রবর্ত্তী
“রণে বনে জলে জঙ্গলে, যেখানেই বিপদে পড়িবে, আমাকে স্মরণ করিও,আমি তোমাদের রক্ষা করিব।” বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী আজ থেকে ১৩৪ বছর পূর্বে (২০২৪ – ১৮৯০) দেহ রাখার আগে নিজ মুখে আপামর ভক্তদের এই বাণী শুনিয়ে গেছেন। তথ্য প্রমান না থাকলেও মানুষ বাণীটিকে মনেপ্রাণে আজও বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে বিদেশ বিভূঁইয়ে এসেও সহধর্মিণী ইচ্ছে প্রকাশ করল, এতদুর যখন এসেছে,তখন বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান ক্ষেত্রটা একবার দর্শন করেই যাবে।
সকাল থেকে গিন্নী একটা হাসি খুশি ভাব নিয়ে অতি তৎপরতায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি এসে যাবে, ভাগ্নে পল্লব গাঙ্গুলি আমাদের নিয়ে যাবে, বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান ক্ষেত্র বারদী। সময়াভাবে এখানকার সব দর্শনীয় তীর্থস্থান যাওয়া সম্ভব হবে না। ফলে কিছু না পাওয়ার মধ্যে অল্প পাওয়ার আনন্দ অনেক বেশি। তারই প্রতিফলন ঘটেছে।
বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম বারদী। নারায়ণগজ্ঞ জেলার সোনার গাঁও উপ জেলাতে অবস্থিত। গাড়ি ছুটে চলেছে শেখ হাসিনা সরণী ধরে। চায়নার তৈরি ঝাঁ চকচকে মসৃণ রাস্তা, গাড়িতে ঝাঁকুনির বালাই নেই। চোখটা বুঁজে আসছিল। কত অল্প সময়ে কত পথ এগিয়ে চলেছি। কথাটা মনে আসতেই ভাবলাম,প্রাচীন মুনি ঋষিরা বা মুসলিম ধর্মের নবিরা সমগ্র অবিভক্ত ভারতবর্ষ পদব্রজে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কত দুর্গম বন্দুর পথ, তখনকার ভারত মানে তো জন্তু জানোয়ারে ভরা জঙ্গল। দস্যু, ডাকাতের আখড়া। যানবাহন বলতে শুধুমাত্র পশু। সাধু-সন্ত, নবিরা পশুকে বাহন করতেন না, ফলে পদব্রজে যা কিছু সম্ভব হয়েছিল।
বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জন্ম হয়,১৭৩০ সনে এক ঘোষাল পরিবারে। অধুনা পশ্চিম বঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কচুয়াতে। মতান্তরে উত্তর চব্বিশ পরগনা চাকলতে।
আমাদের গাড়ি হাইওয়ে ছেড়ে ধীরগতিতে গ্রাম গঞ্জের মধ্যে দিয়ে ঘন্টা দুয়েকের চলে বারদী বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে পৌছুলো। লোকজন দোকান পাটে এলাকা গমগম করছে। অনেকদিন পরে এক সাথে অনেক হিন্দুধর্মের মানুষদের দেখলাম। মন্দিরে কাজ কর্মের সাথে যুক্ত আছে অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। মন্দিরে পুজো দিয়ে, ষাট টাকা করে কুপন কেটে পেট পুরে ঠাকুরের অন্ন ভোগ খেলাম। তারপর বিরাট এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা আশ্রম চত্তরটা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম। আশ্রমের একদিকে বারদী মহা শ্মশান। আর এক দিকে স্বাভাবিক জঙ্গল। ঘুরতে ঘুরতে বাকি তিন জনের থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। ব্যাপারটাকে ততটা গুরুত্ব না দিয়ে মন্দিরের একজন সাফাই কর্মিকে টয়লেটটা কোন দিকে জানতে চাইলাম। তারপর সাফাই কর্মির নির্দেশিত পথে টয়লেটে গেলাম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরছি।
মন্দিরের পিছনে বিভিন্ন ফল ফুলের বাগান, শেষ মাথায় কলা বাগান। টয়লেটটা অনেক ভিতর দিকে হওয়ায় আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি। মনেমনে ভাবছি, জায়গা থাকলে মনে হয় টয়লেটটা আরো দূরে তৈরি করত। এদিকটা মহা শ্মশানের উল্টো দিক, একটি লোকজন নেই শুনশান চত্তর। দিনের বেলাতেও যেন গা ছমছম করে। আমি ফিরছি,হঠাৎ মনে হলো কে যেন আমার পিছন পিছন আসছে। পিছন ফিরে তাকাতে কাউকে দেখতে পেলাম না। শরীরটা ভার হয়ে গেল। শ্মশানের দিকে চোখ চলে গেল, কাঠের চুল্লিতে দাউদাউ করে শব দাহ হচ্ছে। মনে পড়ে গেল বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বাণী। মনে মনে স্মরণ করে জয় বাবা লোকনাথ বলে সামনে এগুতে গিয়ে থমকে গেলাম। কে যেন আমাকে ডাকল। ডাকটা বাগানের দিক থেকে আসায় আমি সেই দিকে তাকাতেই চমকে উঠি, দেখি এক শীর্ণকায়, কঙ্কালসার, শ্যামবর্ণ,ঢ্যাঙ্গা, ভিখারি গোছের লোক আমাকে ডাকছে। মলিন চেহারা,মাথা ভর্তি পাকা লম্বা চুল মস্তকের উপরাংশে তালের আঁটির মতো খোপা করা, মুখ ভর্তি লম্বা দাড়ি। কোনো এক অলৌকিক টানে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো গুটি গুটি পায়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার মুখ থেকে কোনো কথা সরছে না। লোকটির সামনে একটা ভাঙা কলাইয়ের থালা,যাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সদ্য দেওয়া ভোগ প্রসাদ। লোকটি বসে ছিলো, আমি সামনে গিয়ে দাড়াতেই থালাটা ধরে উঠে দাড়াল। তারপর আমার দিকে থালাটা এগিয়ে বড়বড় চোখ করে বলল-” খা, ভোগ খা।” আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছি। লোকটি আমার চুপচাপ থাকা দেখে খ্যাকখ্যাক করে হেসে বলল- ” ঘেন্না করছে?? ঘেন্না!!” এরি মধ্যে কোথা থেকে একটা নেড়ি কুকুর লোকটির সামনে এসে হাজির হল, এবং লেজ নাড়তে নাড়তে লাই পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকল। লোকটি এক গাল বিনয়ের হাসি হেঁসে কুকুরটাকে বলল-” তুই খাবি? (হাতে করে থালা থেকে ভাত নিয়ে কুকুরের মুখের সামনে ধরে আমাকে দেখিয়ে বলল) ঘেন্না পাচ্ছে, ঘেন্না।” কুকুরটা লোকটার হাত থেকে জিভ দিয়ে অল্প ভাত নিয়ে নিলে বাকি ভাতটা নিজের মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে আমার দিকে ফিরে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল-” ভক্তি দেখাচ্ছে, ভক্তি, মন্দিরে এসেছে, যত সব ভণ্ড!! যা, যা, দুর হ, দুর হ, এখান থেকে।” এই বলে লোকটি কুকুরটাকে অনুসরণ করল। কুকুরটি কলা বাগানের দিকে এগুতে থাকল, লোকটি তার পিছু নিয়ে দিনের আলোয় কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি জড় পদার্থের মতো সেই দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম।
সম্বিত ফিরল সাফাই কর্মির ডাকে-” ও মামা, বাগানের ভিতরে ঢুকেছেন কেন? বাগানে ‘প্রবেশ নিষেধ’ বোর্ড দেখেননি? আমি কথা না বাড়িয়ে শুধু বললাম, দুঃখিত ভাই, বুঝতে পারিনি। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। কে ওই লোকটা? পাগল, না অ-ন্য- কে-উ?? পরিষ্কার দিনের আলোয় কোথায় চলে গেল দেখতেও পেলাম না। বাগান থেকে বেরিয়ে আমার মানুষ গুলোকে খুঁজে নিলাম, তবে সদ্য ঘটা ঘটনাটা তাদের কাছে গোপন রাখলাম। বললে হয়তো আমাকেই ——।
বারদী মহা শ্মশান এই চত্তরের মধ্যেই। ভাল লাগল এখানকার ব্যবস্থাপনা দেখে। শ্মশানের পেছন দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনার শাখা নদী। সেটাও স্রোত হারিয়ে শৈবাল দামে আবৃত হয়ে খালে পরিনত হয়েছে। যাতে কোন রকমে নাভি ভস্ম বিসর্জন দিতে পারলেও স্নান করার উপযুক্ত নয়। ব্যাতিক্রমী একটা জিনিস নজরে পড়ল,সেটা একটা স্নানঘর, শবদাহের পর পুরুষ নারী উভয়ের স্নান করে পোশাক ছাড়ার ব্যবস্থা। শ্মশানে এত সুন্দর ব্যবস্থা আমি আগে কখনো দেখিনি। তারপর মূল মন্দিরের কাছাকাছি আর একটা মন্দিরের পাশে যেতেই দেখলাম, সেখানে বেশ ভক্ত সমাগম। গড় হয়ে সকলে প্রণাম করে চরণামৃত নিয়ে সরে এসে অন্যকে যাওয়ার পথ করে দিচ্ছে। গুটি গুটি পায়ে সেখানে গিয়ে দেখলাম, মন্দিরের বেদিতে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর একটা মুর্তি স্থাপন করা। সম্ভবত মুর্তিটি ফাইবার কোডিং করা। কথিত আছে এটি বাবার আসল মুর্তি। সাধক লোকনাথ বাবাকে বসিয়ে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। মুর্তির ভিতরের অংশে তাঁর অস্থি বর্তমান। সব দেখে শুনে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছিল। কিন্তু কথায় আছে, জ্ঞানী মানুষেরা ভক্তের বিশ্বাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেন না। ভক্ত যে বিশ্বাস নিয়ে ভগবানের উপর আস্থা রাখে, তাতে যুক্তি তর্কের অবতারণা না করাই শ্রেয়। ভক্ত যে ভাবেই ভক্তি নিবেদন করুক না কেন,তাতে ঈশ্বরের কি’বা এলো গেলো। আমরাও প্রণাম করে মানসিক শান্তি লাভ করলাম। ঘন্টা দুই কাটিয়ে আমরা বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম।
সন্ধ্যা ছ’টায় ফোন বেজে উঠল। রিসিভ করতেই শৌর্য দীপ্ত সূর্যের কন্ঠস্বর-” মিনিট পনেরোর মধ্যে একটা হুণ্ডাই সাদা রঙের গাড়ি যাচ্ছে, নাম্বার ঢাকা ‘ক’ ১৭৫৩। আপনারা চলে আসুন। হাউজ # ২, রোড # ৪, সেক্টর # ১৩, উত্তরা। এই স্টুডিওতে মোশারফ করিমের শুটিং চলছে। আমি কাজের প্রেসারে আনতে যেতে পারলাম না, এখানে আসলে সাক্ষাতে কথা হবে।” ফোন ডিসকানেক্ট করে তমাকে রেডি হতে বললাম।
নির্দিষ্ট ঠিকানায় যেতে মিনিট ত্রিশ সময় লাগল। একটা ছয় তলা বিল্ডিং এর সামনে এসে গাড়ি দাঁড়াল। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম। ছয় তলা বাড়িটি সম্পূর্ণ স্টুডিও। সিনেমাতে আমরা সাজানো গোছানো ফ্লোর দেখি। বাস্তবিকই তা কখনোই হয়না। একটা অগোছালো বিল্ডিং। যদিও এটা কোনো দোষের নয়, কারন শুটিংয়ের নানাবিধ সরঞ্জাম, এ ফ্লোর ও ফ্লোর কন্টিনিউ টানাটানি করতে হচ্ছে,রাখবে কোথায়! মোজায়েক ফ্লোর, অর্থাৎ অনেক পুরনো বিল্ডিং, লিফ্ট নেই। এক ভদ্রলোক সিঁড়ি দেখিয়ে দেওয়ায়, সাবধানে উঠছি। এরিমধ্যে আমাদের স্বাগত জানাতে স্ব শরীরে এসে পড়লেন ফিল্ম ডাইরেক্টর শৌর্য দীপ্ত সূর্য। প্রথম দেখা,পরিচয় হয়েছে ফোনে,উষ্ণ অভ্যর্থনায় বুঝিয়ে দিলেন তিনি আমাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন। কোথায় বসাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। প্রচন্ড গরম পড়েছে, খবর নিলেন মেকাপ রুম ফাঁকা। এসি মেকাপ রুমে ঢুকে একটু স্বস্তি পেলাম। শৌর্য বাবু বললেন-” আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, মোশারফ করিম শুটিংয়ে ব্যস্ত,আমি আপনাদের আসার কথা জানাচ্ছি।”
মোশারফ করিম, বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেতা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের টলিউডের ফিল্ম ডাইরেক্টর কাম পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর হুব্বা মুভিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। ওনার অভিনয় আমার ভালো লাগার প্রধান কারন, বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতির মানুষ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভাষা সংস্কৃতির সাথে সুনিপুণ ভাবে মিশে গিয়ে এক বলিষ্ঠ অভিনয় উপহার দেওয়া। ওনার প্রচুর টেলি ফিল্ম আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি একটা ব্যাপারে আবাক হয়েছি,ওনাকে দেখে মনে হয় খুব রাশভারি দাম্ভিক আভিনেতা, কিন্তু উনি যে এত সুন্দর কমেডিয়ান তা ওনার টেলিফিল্ম না দেখলে জানতেই পারতাম না।
আমরা অপেক্ষা করছি, বিপ্র বলল-” দাদু, আমি খুব এক্সাইটেড, এই প্রথম আমি একজন সেলিব্রিটির সাথে ফটো তুলব।” তমা ছেলেকে সাহস যুগিয়ে বলল-” মনে জড়তা আনবি না, ভাববি পরিবারের কারোর সাথে ফটো তুলছিস।” আমাদের কথপোকথনে মধ্যে হাতজোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে মেকাপ রুমে ঢুকলেন বহু প্রতীক্ষিত স্বয়ং মোশাররফ করিম, পাশে শৌর্য বাবু। কে বলবে মানুষটা রাশভারি, এগিয়ে এসে আমার হাতটা এমন ভাবে চেপে ধরলেন, যার অর্থ তিনিও যেন আমার অপেক্ষায় ছিলেন। সকলের সাথে পরিচয় পর্ব সারা হলে, আমার লেখা রামধনু বইটি ওনার হতে তুলে দিলাম। উনি বইটির পাতা উল্টে দেখতে থাকলেন। শৌর্য বাবু রামধনু বই থেকে ‘স্বর্গ দর্শন’ গল্পটা দেখিয়ে বললেন-” এই গল্পটা আমি আপনার জন্য ভেবে রেখেছি।”
শুটিং চলছিলো বলে মোশারফ করিম আমাদের বেশি সময় দিতে পারলেন না। বুঝতে পারছি, শৌর্য বাবু শত কাজের ফাঁকে আমাদের সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বললেন-” এখানে সপ্তাহ খানিক থাকুন, অনেকের সাথে আপনার কথা বলেছি, পরিচয় করিয়ে দেব।” আমার অক্ষমতার কথা জানিয়ে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিলাম। শৌর্য বাবু আমাদের নিয়ে মোশারফ করিমের রানিং শুটিং ফ্লোরে গেলেন। আমরা কিছুক্ষণ শুটিং দেখলাম। তারপর সেখান থেকে বিদায় নিলাম। স্টুডিও ছাড়ার সময় শৌর্য বাবু স্মরণ করিয়ে দিলেন-” আগামী কাল আমরা এক সাথে ডিনার করব। তমা ম্যাডাম, বিপ্রকে নিয়ে আপনিও আমাদের সাথে থাকবেন।”
০১/০৪/২০২৪
আমরা শৌর্য দীপ্ত সূর্যের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেছি। তমা,বিপ্র যাবেনা, কারন তমার সর্দিগর্মি হয়েছে। শরীরটা ভালো নেই। বিপ্রকে খুব সকালে পড়তে যেতে হবে। ফলে নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে আমি আর সহধর্মিণী। ঘড়ির কাঁটা ছয়টা পার করতে না করতেই গাড়ি এসে গেল। নিচে নেমে দেখি স্বয়ং শৌর্য দীপ্ত সূর্য নিজে এসেছেন আমাদের নিয়ে যেতে। আমি একটু অবাক হওয়ায় উনি বললেন-” আমার খারাপ লাগছে, আপনি আমাদের দেশে এসেছেন, আর আমি সময় দিতে পারছিনা। সেই জন্য ভাবলাম একসাথে যাই, যেতেযেতে কথা হবে।”
আমরা চলেছি আহমেদ নগর,মিরপুর ২, শৌর্য দীপ্ত সূর্যের বাসভবন। গরম আছে,তবে অনুভব করতে পারছিনা। কারন আমি যেখানে আছি বা যাচ্ছি সেই সব জায়গায় গাড়ি বাড়ি দুই-ই এসি। যেতে-যেতে ওনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। শৌর্য দীপ্ত সূর্য, ওরফে পীযুষ কুমার দাস,প্রথমে একজন সাহিত্যিক। তারপর নাট্যকার , তারপর ফিল্ম ডাইরেক্টর। উনি প্রচুর টেলি ফিল্ম তৈরি করেছেন, যার বেশির ভাগ চিত্রনাট্য স্বরচিত। সর্বপরি ইনি একটি ফিল্ম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক। আমার এবার কোলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলায় প্রকাশিত ‘তিস্তা পারের রহস্য’ উপন্যাসটির কথা শুনে বেশ এক্সাইটেড হয়ে বললেন,তার লেখা প্রথম উপন্যাসও তিস্তা নদীকে নিয়ে। তবে আমার উপন্যাস পাহাড়ে বয়ে চলা তিস্তা নদীকে নিয়ে, আর উনি লিখেছেন বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীকে নিয়ে। বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটি ছোটো গল্পকারও বটে। ছোটো গল্পেরও কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কথায় কথায় আমরা চলে এলাম শৌর্য বাবুর বাস ভবনে।
লিফটে ফোর্থ ফ্লরে উঠে কলিং বেল পুশ করতেই দরজা খুলে হাসি মাখা মুখে দাড়ালেন এক ভদ্রমহিলা। ব্যাপারটা এত তাড়াতাড়ি হল যেন ভদ্রমহিলা কলিং বেলের শব্দের অপেক্ষায় ছিলেন। ভদ্রমহিলার পরিচয় বুঝতে অসুবিধা হয়নি, তবুও শৌর্য বাবু পরিচয় করালেন-” আমার সহধর্মিণী শ্রীমতী বিভা সরকার।” পরিচয়ের মধ্যেই ঘরে ঢুকে দেখি, বছর বারোর এক কিশোর হেড ফোন লাগিয়ে কম্পিউটারে মশগুল। আর বছর তিন চারেকের একটি শিশু, তিন চাকার একটা খেলনা গাড়ি চেপে সমস্ত বাড়িটা চষে বেড়াচ্ছে। শৌর্য বাবু গাড়িটা থামাতে বলে বললেন-” ওই আমার বড় ছেলে,গল্প চিরন্তন কাব্য। এই হলো ছোটো পুত্র সুদীপ্ত শিশির দিব্য। নামের মাধুর্যতায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তবে সঙ্গে সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে আসলাম, আমি অতো বড়ো নাম হয়ত ভুলে যাব। বরং কাব্য আর দিব্য বলেই ডাকব। এনারা যেহেতু আমারও পূর্ব পরিচিত নন,ফলে আমারও স্বাভাবিক হতে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক করলেন বিভা দেবী স্বয়ং, শৌর্য বাবুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-” তুমি কি গো! ওনাদের এতদেরি করে আনলে। আমি আনন্দে আছি, বিকালে টিফিন সহযোগে আড্ডা দেবো।” শৌর্য বাবু একটু লজ্জিত ভাবে বললেন-” স্টুডিওতে আজ কাজের চাপ বেশি পড়ে গিয়েছিল। ঠিক আছে তুমি চায়ের সাথে টিফিন যা করেছ দিয়ে দাও।” রাত আটটায় টিফিন!! খাওয়ার ভয়ে বাধা দিয়ে বললাম, না না, শুধু চা হলেই চলবে। রাতে খেয়ে আবার ফিরতে হবে। শৌর্য বাবু হাসতে হাসতে বললেন- ” আপনাদের রাতে ছাড়ছে কে, আপনারা যে ফিরবেন না সেটা আমি তমা ম্যাডামকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি। এখন তো চা খেতেখেতে একটু আড্ডা দেই। শুনুন দাদা, আজ থেকে আমরা দুই ভাই।” কথাটা শুনে বিভা দেবী আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বললেন -” তাহলে আমরাও দুই বোন।” এত অল্প সময়ে এত আন্তরিকতা পূর্ণ মন্তব্য শুনে আমার স্ত্রীর চোখে জল চলে এল। বলতে দ্বিধা নেই, এই রকম প্রতিষ্ঠিত কোন ভারতীয় সেলিব্রিটির সাথে দেখা করতেই অনেক সাধ্য সাধনা করতে হয়।
বাংলা অভিধানে অহম্ বলে যে একটা শব্দ আছে সেটা মনে হয় এনারা জানেন না। বেশির ভাগ মানুষ সেটা জানে, এবং যোগ্যতা না থাকলে-ও প্রকাশ করে বেশি।এনাদের ভিতরে অহম্ শব্দের ‘অ’ বর্ণটিও খুঁজে পেলাম না। বি়ভাদেবী আমার স্ত্রীকে একটা ঘর দেখিয়ে বলেলন-” এই ঘরটা তোমাদের, আলমারিতে পোশাক আছে চেঞ্জ করে নাও। আমি চা রেডি করি।”
আমরা পোশাক চেঞ্জ করে ফ্রেশ হতেই চা রেডি। চায়ের আড্ডার মধ্যে আমি ‘তিস্তা পারের রহস্য’ উপন্যাসটি শৌর্য বাবুর হাতে তুলে দিলাম। তিনিও তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘মরা কার্তিকের কাব্য’ আমাকে উপহার দিলেন। তারপর তিনি এমন একটা প্রপোজাল দিলেন, শুনে আমি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি আমাকে তাঁর টেলিফিল্মের স্ক্রিপ্ট লেখার দ্বায়িত্ব নিতে বললেন। আমি ছোটো গল্পকার, নট আ স্ক্রিপ্ট রাইটার। সংলাপ লেখার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। আমি সাহস পাচ্ছি না দেখে উনি ফিল্ম ডাইরেক্টরের ভঙ্গিমায় বললেন-” কে বলেছে আপনি পারবেন না? আলবাত পারবেন। আপনার গল্পের মধ্যে আমি দু-একটা সংলাপ পড়েছি।” এই বলে ওনার পরিচালিত চারটি নাটকের পাণ্ডুলিপি আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন-” লেখার নিয়মকানুন এখানে পেয়ে যাবেন, আমি ফিল্ম গুলোর লিঙ্ক আপনার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেব, স্ক্রিপ্টের সাথে মিলিয়ে দেখে নেবেন। তারপর দুগ্গা দুগ্গা বলে আগে একটা লিখে ফেলুন। পাবলিকের পছন্দ হলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না।”
রাতে খেতে বসব কি,খাবার সাজানো দেখে আমাদের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বুদ্ধিমতী বিভাদেবী আমাদের কিছু বলার আগেই বললেন-” দিদি আমি ছোটো বাচ্চা নিয়ে সারা দিন বসে বসে রান্না করেছি, ইতস্তত না করে খেয়ে নাও তো, না হলে আমার খুব কষ্ট হবে।” আমার স্ত্রী খুব প্রয়োজন না হলে কথা বলেনা,মুচকি হেঁসে মেকাপ দেয়। সে-ই দেখি বলে উঠল-” অতিরিক্ত খেয়ে শরীরে অস্বস্তি হলে তখনও তো আপনার অপরাধিনী মনে হবে।” আমি বুঝিয়ে বললাম, অভ্যাস নেই তো, বরং একজনের খাবার তুলে নিন, বাকিটা আমরা ভাগ করে খাব।
০২/০৪/২০২৪
সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে,ফ্রেশ হয়ে পেটপুরে ব্রেকফাস্ট করলাম। পেটপুরে শব্দবন্ধটা ব্যবহার করার কারন, শৌর্য বাবুর মুসলিম রাধুনি এতো সুন্দর একটা রুটি বানিয়েছে, যেটা আমি এই প্রথম দেখলাম, খাওয়া তো দূরের কথা। সন্দেশ দিয়ে রুটি, আজীবন মনে থাকবে।
পারিবারিকভাবে ওনাদেরও কোলকাতায় আসার নিমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নেওয়ার পর্ব চলছে। বিভা দেবীর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের মন থেকে তিনি বিদায় জানাতে চাইছেন না। কথায় কথায় আমার স্ত্রীকে বলেই ফেললেন-” জান দিদি,সত্যি কথা বলতে কি, তোমাদের এই আসা যাওয়াটা আমার ঠিক মনমতো না, দু’দিন না থাকলে কি ভাল লাগে।” মনে মনে ভাবলাম, আমাদের বাড়িতে অতিথি এলে আমরা কি এমন আন্তরিকতার সাথে কথা বলি। তবে শোনা ছাড়া গতি নেই, কথা তো রাখতে পারব না। আজ রাতেরই খুলনা যাওয়ার জন্য রকেট সার্ভিসের টিকিট কাটা। যাইহোক, শূন্য হাতে এসে পূর্ণ করে ফিরে যাওয়ার আনন্দটা যেমন উপলব্ধি করতে পারছি,তেমনি এখানে প্রতিটি বাড়িতে এসে ঋণী হয়েও যাচ্ছি। পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিরা একটা প্রবাদ জানে, ‘অতিথি নারায়ণ ‘, পূর্ব বঙ্গের বাঙালিরা প্রবাদটিকে পালন করে প্রমান করে। ব্যাস্ত মানুষ শৌর্য বাবুর অমূল্য সময় আর নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়লাম। সামনে ঈদ, বাংলাদেশে সিনেমা লাইনে এই সময় ব্যাস্ততা তুঙ্গ।
মিরপুর আহমেদ নগরের বাসা থেকে বেরিয়ে রিকশা করে আমরা আসি কাজিপাড়া। রিকশা থেকে নেমে শৌর্য বাবু একটা ফোন করলেন। তারপর ফোন ডিসকানেক্ট করে বললেন-” আপনাদের সাথে একজন বিখ্যাত মানুষের পরিচয় করানোর ইচ্ছা ছিল, আনফরচুনেটলি ওনার আত্মীয়ের একটা দুর্ঘটনা ঘটায় উনি সেখানে যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে মেট্র স্টেশনে আছেন, চলুন আমরা কাজিপাড়া মেট্র স্টেশনে যাই।”
আমাদের কোলকাতার মতই মেট্র সার্ভিস। জাপানি কোলাবোরেশানে তৈরি। পরিসেবা বা স্টেশনের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন কোলকাতার মতো এত সুন্দর না হলেও মন্দ নয়। স্টেশনের ভেতরে গিয়ে পরিচয় হল মোরশেদ খান হিমেলের সাথে। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ ফিল্ম প্রডিউসার এসোসিয়েশনের কালচারাল সেক্রেটারি। করমর্দন সেরে বললেন-” আমি দুঃখিত, আপনাদেরকে সময় দিতে পারলামনা। আমার খালা মারা যাওয়ায় আমি সেখানে ছুটছি। পরে নিশ্চয়ই আমাদের সাথে আবার দখা হবে। আপনার সম্পর্কে আমি শৌর্য ভাইয়ের কাছে শুনেছি। পরে নিশ্চই আপনার লেখা নিয়ে কথা হবে।” আমরা একসাথে মেট্রতে উঠলাম, এবং দুটো স্টপেজ পরে মোরশেদ খান হিমেল সাহেব আমাদের বিদায় জানিয়ে নেমে গেলেন। আমরা তিনজন নামলাম উত্তরা নর্থ স্টেশনে। ঢাকা মেট্র সিটিতে এখনো দোতলা বাস চলাচল করে। মজার ব্যাপার হলো, বাসগুলো সব ভারতীয় ‘অশোক লেল্যান্ড ইন্ডিয়ার’ তৈরি। কিছু বাস এক সময় কোলকাতায় চলাচল করা ডবলডেকারের মতো, আবার কিছু বাস কোলকাতার ট্রামের মতো, উপর উপর নয় পরপর,সামনে পিছনে। বাস চর্চার মধ্যে আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল একটা টোটো জাতীয় যান। শৌর্য বাবু ভাড়া মিটিয়ে আমাদের যানটিতে তুলে দিয়ে বললেন-” চিন্তা করবেন না,আপনাদের বাসার গেটেই নামিয়ে দেবে। যাইহোক, আবার নিশ্চই দেখা হবে। অনেক কাজ,অনেক কথা বাকি রয়ে গেল। পরের বার যখন আসবেন সোজা আমার বাসায় আসবেন।” ওনার সৌজন্য বোধে আমি আপ্লূত হয়ে বললাম, সবই তো আমার কথা হল, আপনারা কোলকাতায় কবে আসছেন বলুন। টোটোর চাকাটা সবেমাত্র গড়ানো শুরু করেছে, হাত নাড়তে নাড়তে বিদায় জানিয়ে বললেন-” নিশ্চই যাব, স্ক্রিপ্ট লেখার কথা মনে থাকে যেন।”
বিদায় বেলায় তমা কি ভাবে আপ্যায়ন করবে ভেবে পাচ্ছেনা। তমার বাবা মা,সর্ম্পকে আমাদের বেয়াই বেয়ান, তাঁদের কথা না বললে লেখাটা সম্পূর্ণ হবে না। বেয়ান, তমার অতিথি আপ্যায়নের একজন সু পরামর্শ দাত্রী। আর বেয়াই না থাকলে তো আমি কেনাকাটা করতেই পারতাম না। অগ্নি মূল্য বাজার দরের ঢাকা শহরে উনিই আমাকে নিয়ে ঘুরেছেন তুলনামূলক ভাবে কোথায় কি সুবিধা পাওয়া যাবে। দুপুরে খেতে বসে খাবার সাজানোর বহর দেখে মনে হল গত এক সপ্তাহ যাবত তমা আমাদের যে-ভাবে আপ্যায়ন করেছে তাতে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হলেও সে খুশি হতে পারেনি। আমি তমার মুখের দিকে তাকাতে সে দায়ভার পল্লবের উপর ছেড়ে দিয়ে বলল-” আজকের মেনুতে আমার কোনো হাত নেই মেসো,পল্লব যে ভাবে বলেছে আমি সেই মতো করেছি।” পল্লব খেতে খেতে বলল-” ব্যাপারটা এমন নয় যে আপনাদের জন্যে এত কিছু কিনে এনেছি, সব ঘরেই ছিল। এখানে প্রতিটি বাসায় দুটি করে রেফ্রিজারেটর থাকে। একটা সাধারন ফ্রিজ ,একটা ডিপ ফ্রিজ কারন,বাংলাদেশে কোলকাতার মত যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই কেনা যায় না। একটা নির্দিষ্ট পরিমান মাছ,মাংস কিনতে হয়। বেশির ভাগ সময়ে সবটা প্রয়োজন হয় না। ফলে ফ্রিজিং করে রাখতে হয়।”
রাত নটা নাগাদ সকলকে বিদায় জানিয়ে পল্লব আমাদের নিয়ে রওনা দিল খুলনার সাতক্ষীরায় ওদের ভিটে বাড়ির উদ্দেশ্য। রিকশা করে আসি ঢাকা আবদুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকে বাংলাদেশের সব জেলা বা উপজেলার বাস ছাড়ে। ঢাকা (আবদুল্লাহপুর) টু ইণ্ডিয়া (করুনাময়ী) বাস শ্যামলী এখান থেকেই ছাড়ে। চারদিন আগে পার হেড একহাজার টাকায় পল্লব তিনটি সিট বুক করেছিল।
আমাদের বাস ছাড়ল রাত সাড়ে দশটায়। বিদায় ঢাকা, আমার কলা বেচা শেষ, বাকি থাকল সহধর্মিণীর রথ দেখা। বাংলাদেশের গ্রামে না গেলে বাংলাদেশ দেখা অপূর্ণ থেকে যায়। যদিও বুঝতে পারছি সময়াভাবে আমার বাংলাদেশ দর্শন অনেকটা ব্যাঙের হাতি দেখার মতো হবে।
বাস ঢাকা শহরের বাইরে চলে এসেছে। এবার গাড়ির গতি বাড়ল। ১২/১৩ ডিগ্রি টেম্পারেচারে নিশ্চই এসি চলছে, বেশ শীত শীত লাগছে। কনডাক্টর এসে প্রত্যেককে একটা করে কালো কম্বল দিয়ে গেল। বেশিরভাগ লোক মুড়িসুড়ি দিয়ে ঘুমানোর জন্যে তৈরি হল। মনে হচ্ছে বাসের মধ্যে সমস্ত যাত্রী কালো বোরখা পরে যেন কোনো ধর্মীয় স্থানে চলেছে। সবার মতো আমিও একই ভাবে ঘুমের দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।