ছোট থেকেই পরীর ঝিলের গল্প শুনি গ্ৰামের বাইরে, কেউ যায়না যেখানে ছায়া ছায়া জল, অন্ধকার, রহস্যে ঘেরা রাতে সেদিকে তাকাতে মানা। যদি জিজ্ঞেস করো, কেন? সমস্বরে উত্তর আসবে, ওমা! সেও জানো না? রাতে ওখানে পরীরা আসে ডানা খুলে রেখে জলে নামে যে দেখে তার চোখ কানা হয়ে যায় বদ্ধ পাগল হয়ে সারাজীবন এলোপাতাড়ি বকে। কেউ জানতে চায় না, কেউ বলেও না ভোর হলে পরীরা কোথায় যায়?
দিনেরবেলা কারোর অত সময় নেই দিনের আলোয় কত কাজ ধোও রে মোছ রে শুকোও রে রাঁধাবাড়া হাঁড়িকড়া বাজার হাট দোকানপাট এক্কাদোক্কা বুড়িবসন্ত গোল্লাছুট ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছোট বুড়ি একদিন কোথায় যেন হারিয়ে গেল! আমরা ক’দিন ডাকাডাকি করলাম তার পিসি ক’দিন খোঁজাখুঁজি করল লোকজন ক’দিন কানাকানি করল সেপাই সান্ত্রী পাত্র মিত্র রাজা উজির ডাকবে যে তার পয়সা কোথায়? লোকজনদের সময় কোথায়? দৌড়ে চলো। দৌড়ে চলো।
যেদিন রাতের পর মোতি বোষ্টমীকে আর কেউ দেখেনি সেদিন রাতে আমি পরীর ঝিলে পরী দেখেছিলাম তার আগুন রঙা ডানা কেউ বিশ্বাস করে নি আমার কথা মা আমার মুখ চেপে ধরেছিল সেসব কবেকার কথা!
গ্ৰাম থেকে মফস্বল মফস্বল থেকে শহর পেরিয়ে আমি জেনে গেছি সব জায়গায় একটা করে পরীর ঝিল থাকে জেনে গেছি পরীদের কেমন করে আগুন রঙা ডানা হয় কেমন করে পরীরা জলে নামে আর ফেরে না। আসলে পরীদের শুধু রাত হয় ভোর হয় না।
তোমরা যারা পরীর ঝিলের গল্পে বিশ্বাস করো তাদের অনুরোধ, একবারটি পরীর ঝিলে যাও জলে নামো তুলে আনো পরীদের লাশ প্রশ্ন করো ছোট বুড়ি, মোতি বোষ্টমী এরা তো পরী হতে চায়নি তাহলে কেন এদের পরী হয়ে যেতে হল? প্রশ্ন করো কে বানায় এদের পরী? প্রশ্ন করো পরীদের কেন হারিয়ে যেতে হবে? কেন তারা বাড়ি ফিরতে পারবে না? একবার গলা তুলে চিৎকার করে প্রশ্ন করো।
আমি আজ পরী হয়ে যাবার আগে তোমাদের একটা প্রশ্ন করি ঠিক কতজন মেয়ে পরী হয়ে গেলে তোমরা পরী ঝিলের দিকে তাকাতে আর ভয় পাবে না?