দর্শন হল চিন্তা শক্তির উৎস। বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন প্রথমে চিন্তা করেছিলেন গাছ থেকে আপেল টি মাটিতে পরল কেন তবেই তিনি বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত আবিষ্কার করেছিলেন ” মাধ্যাকর্ষন শক্তি “। বিজ্ঞান যেমন বেটার এক্সপ্লেসনের উপর নির্ভর দর্শন ও। তবে বিজ্ঞান ঈশ্বর স্বীকার করে না দর্শন মানে। হিন্দু ধর্মে যে কোটি কোটি দেবতার সৃষ্টি হয়েছে আমাদের প্রাথমিক আবেগ ও অন্ধ বিশ্বাস থেকে। ভারতীয় দর্শনে কর্মফলের উপর আলোকপাত করা হয়। কিন্ত ব্রাক্ষন্য সমাজ পুরাকালে সাধারন নিরীহ মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ উপার্জন করত। এর বিরুদ্ধেই নাস্তিক দর্শন চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন গড়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের ” বিসর্জন ” নাটকে ও ধর্মের নামে বলির বিরুদ্ধে আধুনিক থেকে আধুনিক মনস্তত্ত অসাধারন লিখেছেন। বিবেকানন্দ শিকাগো ধর্ম সন্মেলনে বেদান্ত ধর্মকে তুলে ধরেছেন। অহং ব্রহ্ম। আর সকলেই এই ব্রহ্ম অর্থাৎ ঈশ্বরের অংশ। এবং তিনি বলেছেন জীবে দয়া করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। অন্যদিকে আধুনিক কালে শ্রী অরবিন্দের দর্শন অনুসরনে ব্যক্তি গত ভাবে আমি ও মেনে চলি ” চেতনা ” র কথা। আমাদের এই চেতনায় বিশ্বব্রম্ভান্ডের অস্তিত্ব আছে। যাকে বিজ্ঞানে ব্রেন বলতে পারি। যত উন্নত মস্তিষ্ক অর্থাৎ গ্রে ম্যাটার বেশি, তত ধ্যানের মাধ্যমে শূন্যতা, নিরাকার ঈশ্বরকে জানা যায়। দেবতা উপলক্ষ। এই শরীর নশ্বর। আত্মা অমর, আত্মার মৃত্যু নেই। যেমন যোগী ঋষিরা এই পরমাত্মার সাথে মিলিত হয়েছেন। সাধারন মানুষ পারে না তারা সাংসারিক নানা পরিমন্ডলে সুখ দুখের ন্যায় বিচারে থাকে। গীতার কথা সৈয়দ মুস্তাফা আলি ও বলেছেন। কর্মবাদ, ফলের আশা ত্যাগ করে। বিবেকানন্দ ও কর্মবাদের কথাই গুরুত্ব দিয়েছেন। বিজ্ঞানে যেমন সৌরমন্ডল পর্যন্ত গতিবিধি। কিন্তু স্টিফেন হকিংস এর কথা মেনে নিলে বিগব্যাঙ থিওরি অনুযায়ী এই মহাবিশ্ব অর্থাৎ স্পেস আন্ড টাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সাধারনেরা স্পেস আন্ড টাইম বলতে ধরে নি। মহামায়া মা কালির দুচোখে সেই মহাকাল দেখতে পাওয়া যায়। কিন্ত এই তন্ত্র সাধনা অত্যন্ত কঠিন। বিবেকানন্দের আদর্শ মেনে নিলে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ে, দরিদ্র, মুচী সকল ভারতবাসীকে তুলে ধরেছেন। রামকৃষ্ণ দেব তাকে শিব বলে ডাকতেন। বর্তমান সময়ে পাশ্চাত্য ও ভারতবর্ষে অধিবিদ্যাগত দার্শনিক আলোচনা আর হয় না। কারন সেক্ষেত্র অনেক কল্পনা প্রসূত। বর্তমানে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে দর্শন শাস্ত্রে নানা ভ্রান্তি দূরীকরনের চেষ্ঠা করা হয়। যেমন নব্য ন্যায় দর্শন। সংস্কৃত শাস্ত্র মানে পুরোটাই অঙ্ক। ন্যায় তার অঙ্গ। আর পাশ্চাত্য দর্শনে ও উইটগেনস্টাইন আসার পরে এই আ্যানালিটিকাল ফিলসফির উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। দর্শনের কাজ হল যুক্তি তর্কের মাধ্যমে সত্যি আবিষ্কার। দর্শন হল মনন। সকল কিছুর মধ্যেই দর্শনের বীজ আছে। ইতিহাস, সমাজ তত্ব, ম্যানেজমেন্ট, ল। তাই বিবেকানন্দের কথা দিয়েই বলা যেতে পারে প্রত্যেককেই কোনো না কোনো দর্শন পাঠ করা উচিৎ।
পাশ্চাত্য দর্শনে, দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না। লকের বস্তবাদ অনুযায়ী প্রতিটা বস্ত রিপ্রেজেন্ট করে অপর বস্তকে। অর্থাৎ প্রতীতি। অনেক দামী কথা। আইনস্টাইনের থিওরি অনুযায়ী সব কিছুই আপেক্ষিক। এই মহা বিশ্বে অসংখ্য গ্যালাক্সি আছে। আমরা পৃথিবী বাসী এই আপেক্ষিকতার মধ্যেই। মনে হচ্ছে স্থির বসে আছি। আদৌপেকোনো বস্তই স্থির নয় কোনো কিছুই। এক এক সেকেন্ডে ত্রিশ মাইল যাচ্ছে পৃথিবী। আমরা যে গ্যালিক্সিতে আছি নক্ষত্র এর আলোয় মিল্কি ওয়ে। সূর্যে যেদিন বিক্রিয়া শেষ হবে সেদিন প্রলয় হবে। মানুষ ই দেবতা তৈরী করেছে। দেবতা মানুষ নয়। 1927 সালে হ্যাভেলস তিনি দেখালেন যে শয়ে শয়ে নক্ষত্র পুঞ্জ আছে। বিগব্যাঙ থিওরি বিশ্বব্রক্ষান্ড সৃষ্টির একটা থিওরি। চরম সংশয়বাদী দেকার্ত বলেছেন একটা ডেমন আমাদের জগতের অস্তিত্ব মনের মধ্যে জগতের অস্তিত্ব রেখেছে। কথাটি ও ঠিক আমরা ভাবি বলেই সবকিছুর অস্বিত্ব আছে মনে। এটা যেন কবি মন, বলে উঠল আমার। ভারতীয় দর্শনে মন আর আত্মা ভিন্ন। মনে প্রেম, ভালোবাসা, বস্তু গত নানা আকর্ষন থাকে। আত্মায় ঈশ্বর। শঙ্করাচর্য বলেছেন, জগৎ অর্থাৎ সংসার মিথ্যা। ঈশ্বর ই সত্য। আর স্বামী বিবেকানন্দ কর্মকান্ডের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। গীতায় জ্ঞানকান্ড, কর্মকান্ড সব আলোচিত আছে। তবে সর্বোপরি মনে রাখতে হবে যে, হিন্দু কোনো বিশেষ ধর্ম নয় হিন্দু হল দর্শন।