দীর্ঘ রাত্রির পর ভোরের শিউলি ঝরা সকাল । গতকাল দিনের শেষের যে ভালোলাগার আলোটুকু আগে চলে গিয়েছিল ,আজকে তার খামতিটুকু মিটিয়ে দিয়ে একটু সকালেই চলে এসেছে । হয়তো এটাকেই বলে ভারসাম্য । এটাকেই বলে ছন্দ। সেই নরম আলো রশ্মির অঙ্গ জুড়ে আরো একজনের মধুর উপস্থিতি । কোন ধ্রুপদী চিঠিতে অক্ষরের রশ্মিতে যেমন কোন কোন জনের উপস্থিতি থাকে। শূন্য ভেদ করে ওপর থেকে নিপতিত সকালের আলো রশ্মিতে সেই চিঠির অক্ষরগুলো এক অনাবিল প্রশান্তিতে দুলে দুলে ওঠে। চিঠির মাধুর্যের মধ্যে দিয়ে আগমনীর জ্যোৎস্নায় আদ্র আশপাশ সবকিছু । মাকড়সার দু এক গাছি সূক্ষ প্লাটিনাম তারে সেই চিঠির সুর মূর্ছনা ফুলঝুরির ফুলকির মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কালো ল্যাজ ঝোলা পাখিটার ল্যাজ সেই ফুলকিতে ওঠে দুলে। আশপাশের গাছগুলো যখন নীথর নির্বাক ,অদূরের লম্বা নারকেল গাছের পাতাগুলো কার সঙ্গে যেন ঈশারায় গল্পে মশগুল । শুধু চোখে চোখে ,ঠোঁটে ঠোঁটে সে কথা। কত কথা ভেসে যায় । ফুল কথা ,আলো কথা , মুক্ত বিহঙ্গের ডানার কথা ,প্রেমিক প্রেমিকার দেওয়া প্রথম কথা । আবার মেয়ের আসার কথা ,উত্তর আকাশের চাঁদের কথা । একেবারে কিউবিক ফর্মের আধা আধি চাঁদ । যদিও সে কথার মধ্যে চাঁদের মনোহারি বলয়ের কথা নেই। তেমন ফুটফুটে জ্যোৎস্নার কথাও নেই। তবু আছে মেঘময় চাঁদের কথা । উল্টেপাল্টে । মেঘের চাঁদের কথা ,কিংবা চাঁদের মেঘের কথা । আর সেই কথায় ভেজে হৃদয় । পাতা ঝরা শব্দের মধ্যে আরতির কাঁসর ঘন্টার অনুরণন । গাছে গাছে কে যেন ঝুলিয়ে দিয়েছে কাঁসর ঘন্টা । একসঙ্গে সকলে বেজে ওঠে। বাতাসের মুখে শাঁখের উতরোল । অলক্ষ্যে থেকে কে যেন আবৃত্তি করে চলেছে মহালয়ার স্তোত্র । আর ঢ্যাং কুর কুর ঢাঁকের আওয়াজ মনের আনাচে কানাচে কখন যে ঢুকে পড়েছে টেরই পাইনি। সে আসলে বুঝি এমনই হয়। যেগুলো এতদিন নিজের কাছে থেকে ও হারিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল ,সেগুলিই আবার নতুন আবেগে নতুন ভাবনায় নতুন ভঙ্গিমায় নতুন মননে চিন্তনে ,নতুন রাগে সেজে ওঠে সুরের রামধনুতে।