সেদিন উঠেছিল রক্তিম সূর্য, রক্ত ঝরা কুরুক্ষেত্রের শেষে, শত উত্তরার আত্মবিলাপের অবগাহনে। মৃত্যুকে উত্তীর্ণ করে বেঁচে থাকার মন্ত্রে, সঞ্জীবিত সহস্র নবীন জীবন, প্রাণ হতে নিঃসৃত প্রাণের স্পন্দনে, রক্তের হিল্লোলে জেগে ছিল তৃষা। ঘৃণা, বিতৃষ্ণায় দেশ মাতৃকার শক্তি দীক্ষায়, লহর থেকে লহরে হয়েছিল তরঙ্গায়িত। লোহিত মুখরতায় সরব হয়েছিল, গিরি নিঃসৃত সুপ্ত অনল শিখা, কত ত্যাগ আর তিতিক্ষায়, শত শত অভিমন্যুর রক্তদানে, শ্রাবণের রুধিরে শুদ্ধ স্নাত হয়ে, তমসার অবসানে, উঠেছিল স্বরাজের সূর্য। ঊষার রক্তিম গগনে, অরুণাংশু এঁকেছিল জয়তিলক, ত্রিবর্ণ ধব্জায় উঠেছিল কপোতের বাণী, অশোকের রথচক্রের ধূলায়, মিশে ছিল শান্তির বারতা। প্রতীক্ষিত দুই শতাব্দীর অবসানে, অরণ্য, মরুতে,নগরে,বন্দরে, শৈলশ শিখর প্রান্তে, শুনিল নীলে, গেরুয়া, সাদায়, সবুজে ফুটেছিল বিপ্লবের ফুল। কত নর, কত নারী, কত শিশু, কত নির্যাতিত জন,
সুখের বেদনায় ফেলেছিল আনন্দাশ্রু। আজ হতে ছিয়াত্তর বছর আগে। হায়রে স্বাধীনতা! সেদিনের প্রাপ্ত সে ধন, সংগ্রামে, সংঘাতে, আত্মাহুতির অবদান, আজ নিঃশেষ প্রায় প্রতুল অমিতাচারে! গেরুয়ার অন্তরাল থেকে ওই দেখা যায় লোভের লকলকে শিখা! শান্তির সাদা রং বিবর্ণ হতে হতে মলিন থেকে মলিনতর! সবুজের দল মাতে নিষিদ্ধ উন্মাদনায়, মুদ্রায় ভরতে উদর নির্ভর জনের নিলাজ প্রয়াস! পণ্যে পরিণত বিদ্যা, তমসাময় পথের দিশা! অবক্ষয়ের কচুরিপানা, ঘিরে ধরে জলধার! জননী বক্ষ শুধায় লালিত শিশু, পনের প্রলোভনে মাতে! যান্ত্রিক প্রতিযোগিতায়, ভালোবাসা, মমতা, প্রেম,
বাৎসল্য বিক্রি হয় এই বিজ্ঞানের সভ্যতায়! হায়রে স্বাধীনতা! ছিয়াত্তর বছর পরে, স্বপ্নহীনতার কারাগার হতে, অন্ধকারের অন্তরালে হারিয়ে যেতে যেতে, আশিবিষে নীলবর্ন হতে হতে, হয়তো ধ্বনিত হবে মহাকালের ধ্বনি,
অন্তরের সুপ্ত সুভ্রতা, জ্যোতির রশ্মি, হয়তো অনন্ত থেকে পাবে অমৃতের সন্ধান, যেদিন ঘরে ঘরে জন্ম নেবে নৃসিংহ সন্তান!