স্বাস্থ্যবর্ধক আয়ুর্বেদিক ঘি
বিধান সমাদ্দার
ঘি এর মধ্যে রয়েছে ১৭ রকমের উপকার ডায়েটে আছে, তাই হয়তো আপনার খাদ্য তালিকায় ঘি বাদ। কিন্তু, জানেন কি, ঘি ওজন কমাতে সাহায্য করে? বা, যারা কোলেস্টেরলের ভয়ে, এখন ঘি ছুঁয়েও দেখেন না, তাঁদেরও জানা আছে কি, ঘি আসলে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়। আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমাণিত, ঘি নিয়ে আমাদের অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে।
১. ওজন কমাতে সাহায্য করে অলিভ অয়েল ও নারকেল তেলের মতো ঘিয়ের মধ্যেও আছে ‘স্বাস্থ্যকর’ ফ্যাটি অ্যাসিড। যে অ্যাসিডের কাজই হল আপনার শরীরে জমে থাকা চর্বিকে গলিয়ে বের করে দেওয়া। যে কারণে, ঘি খেলে ওজন কমে।
২. এনার্জির জোগান দেয় ঘিয়ের মধ্যে মিডিয়াম-চেন ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা আমাদের লিভারে সরাসরি শোষণের পর, দহন ঘটায়। এর থেকে শরীরে এনার্জি তৈরি হয়।
৩. ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমায় ঘিয়ের মধ্যে কনজুগেটেড লিনোলেইক অ্যাসিড (CLA) ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই উপাদান দুটি ক্যানাসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৪. কোলেস্টেরল কমায় ঘিয়ের মধ্যে আপনি পাবেন ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যার কাজই হল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেওয়া। ওমেগা-থ্রি হার্টের পক্ষেও খুব উপকারী।
৫. হজম শক্তি বাড়ায় ঘিয়ের মধ্যে থাকে বুটাইরিক অ্যাসিড, আদতে শর্ট-চেনের ফ্যাটি অ্যাসিড। এর অনেক গুণ। তার মধ্যে একটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। আমাদের শরীরের কাজই হল, ফাইবার জাতীয় খাবারকে বুটাইরিক অ্যাসিডে পরিণত করা। ফলে, ঘি খেলে শরীরের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, খাদ্যনালিকেও সতেজ, সুস্থ রাখে।
৬. প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বুটারিক অ্যাসিডে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। তার কারণ, ঘি টি-সেলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই টি-সেলের বাড়বাড়ন্তেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
৭. যন্ত্রাণা বা প্রদাহে: শরীরে জ্বালা-যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে বুটাইরিক অ্যাসিড।
৮. খিদে বাড়ায়: ঘি হজম শক্তি বাড়াতে সহায়ক বলেই, খিদেও বাড়ায়।
৯. নমনীয়তা বাড়ায়: যাঁরা সাধু বা যোগ চর্চাটর্চা করেন, তাঁরা রান্নায় ঘি ব্যবহার করেন। এই ঘি শরীরে ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা বাড়ায়।
১০. দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে: ঘিয়ে থাকে ভিটামিন এ। যা চোখের পক্ষে ভালো ।
১১. সুন্দর শিশুর জন্ম: ঘিয়ের মধ্যে থাকে ভিটামিন কে-১২, গর্ভস্থ শিশুর জন্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এই ভিটামিনের। বাচ্চার দাঁতের গঠনও সুন্দর হয়।
১২. পজিটিভ এনার্জি বাড়ায়: এই কারণে আয়ুর্বেদেও ঘিয়ের ব্যবহার আছে। পজিটিভ এনার্জিও ছাড়াও শরীর ফিট রাখে। বাড়তেও সাহায্য করে।
১৩. ইমোশনাল টক্সিনে বাধা দেয়: গবেষণায় দেখা গিয়েছে নেগেটিভ ইমোশানের বিশেষ একটা রাসায়নিক গঠন আছে। যার মধ্যে শরীরের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট সঞ্চিত হয়। ঘিয়ে যে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, তা ওই ক্ষতিকর ফ্যাটকে শরীর থেকে বের করে দেয়।
১৪. পুষ্টিকর উপাদান শোষণ করে: আমরা রান্নায় অনেক ধরনের মশলাপাতি ব্যবহার করি। তার মধ্যে হলুদ, জিরে থেকে গোলমরিচ, এলাচ অনেক কিছুই আছে। এই সমস্ত মশালা থেকে ঘি প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান শোষণ করে নেয়।
১৫. ফ্রি-র্যাডিক্যালে ভাঙে না: আমরা রান্নায় যে সমস্ত তেল ব্যবহার করি, তা অল্প তাপেই ফ্রি-র্যাডিক্যালে ভেঙে যায়। যা শরীরের পক্ষে কখনোই ভালো নয়। ক্যানসারেরও ভয় থাকে। কিন্তু ঘিয়ের স্মোক পয়েন্ট সেখানে ২৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সুতারাং রান্নার সময় সহজে ভাঙে না।
১৬. ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন পড়ে না: বছরের পর বছর ফ্রিজে না-রেখেই ঘি সংরক্ষণ করা যায়। নষ্ট হয় না।
১৭. ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স: ঘি দুগ্ধজাত হলেও ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। যাদের দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার হজম হয় না, তাঁরাও খেতে পারেন।
ইতি
বিধান সমাদ্দার
ননি ঘি (আয়ুর্বেদিক)