মফস্বলের একটি পুরোনো বাড়ীতে বৃদ্ধ বৃদ্ধা একা থাকেন। নিঃসন্তান, বয়োসজনিত নানা কারনে প্রায় পঙ্গু দুজন। রাতের অন্ধকার নেমে এলে চোখে ভালো দেখতে ও পান না। একদিন, কারা যেন ফোন করল বাড়ীতে ডাকাত পড়বে। তাদের সাথে বিশেষ কিছু সম্বল ছিল না। কিন্তু এল. আই. সি রিটার্ন সামান্য ভবিষ্যতের জন্য গচ্ছিত শেষ সম্বল। ভেবেছিল অসুখে কাজে না লাগলে রামকৃষ্ণ মিশনে দান করে যাবে। আজ হঠাৎ আবার ফোন বেজে উঠল। দুজনে আঁতকে একে অপরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরল। দুদিন পরে খটখট শব্দ, ” মামা দরজা খোলো শিগগিরই। ” তখন সন্ধ্যা নেমে ঘুটঘুটে, যেন ডাইনোসরাস নেমেছে অবাধ্য আতঙ্ক নিয়ে। ওরা কেঁপে উঠে, ভাবল ” গলাটা তো চেনা চেনা। ” আবার জোড়ে খটখট শব্দ। বাড়ীর পোষা বেড়াল টা ডেকে উঠল। চারদিক থমথমে। বুড়ো ভদ্রলোক দরজা খুলে দিল। ” হ্যাঁ, সত্যি তো। এ তো আমাদের সেই প্রীতম। আগন্তক বলে উঠল,” এই দেখ পায়ের দাগ, তোমরা কোথায় ছিলে এতক্ষন “। রাতের টিফিনে বুড়োবুড়ির কাছে কিছুই ছিল না। মুড়ি, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা আর অল্প তেল। মামী ভয়েতে বলেই দিল ভাগ্নেকে সেই অচেনা ভয়ার্ত ফোনের কথা। ” তুই সেই যে ইউনিভার্সিটি পাশ করে চাকরি নিয়ে চলে গেলি, আর খোঁজ খবর ও নিলি না। ” ” মামী আর চিন্তা করো না, আমি যখন এসে গেছি। ” তখন রাত্রি বাড়ছে। বাইরে ঝোড়ো হাওয়া। টিপটিপ বৃষ্টিতে বৃদ্ধার শরীরে হাড়কাঁপুনী শীত। গলায় সোনার চেন। বারবার আগলে রাখছে। এমন সময়ে জানলা দিয়ে দেখল, কারা যেন এগিয়ে আসছে দঙ্গল বেঁধে ওদের বাড়ীর দিকে। ওরা ভয়েতে চীৎকার করবে স্পষ্ট দেখল, টর্চ হাতে ঐ কালো কালো ছায়ামূর্তি গুলি পিছিয়ে যাচ্ছে। ওরা চেঁচিয়ে উঠল, ” প্রীইইইইইইইইইতম। ” কোথাও কোনো সাড়া নেই। বুড়ো ভদ্রলোকের জলের তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গেছে। স্ত্রী রান্নাঘরের দিকে ছুটে যেতেই দেখে, সারা রান্নাঘরের দেওয়াল জুড়ে একটা কঙ্কাল বিশেষ হেঁটে বেড়াচ্ছে। ভয়েতে ওখানেই অজ্ঞান হ্য়ে যান। দুদিন পরে, হাঁসপাতালে বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে পাওয়া যায়। ওরা শেষ পর্যন্ত শেষ খবর যেটুকু পেল, ভাগ্নে গত বছর করোনাতেই মারা গেছিল। তাহলে সেদিন কে এসেছিল। ডাকাতরা সত্যিই এসেছিল। রান্নাঘরের দেওয়ালে ঐ অশরীরী আত্মার হেঁটে যাওয়া দেখে ওরা ভয়েতে পালিয়ে যায়।