সমুদ্রের সেই দিনগুলি
✍️ শিবপ্রসাদ হালদার
(প্রথম পর্ব)
তারাতলা মার্কেন্টাইল মেরিন একাডেমিতে তখন ট্রেনিং চলছে। মন্ডল স্যারের নির্দেশ মতো ভর্তি হয়ে গেল সেখানে। ট্রেনিং এর প্রথম দিনই বাড়ি আসলে তার মুখে তার বক্তব্য শুনে আমি একদম স্তম্বিত হয়ে গেলাম। আমার যাতে ভয়- ছেলের তাতে আনন্দ। উত্তাল সমুদ্রের ভয়ংকর রুদ্রমূর্তি সব সময়ে আমার মনে ভীতি সঞ্চার করতো। তবুও সেদিন ছেলে পরিষ্কার বললো,সমুদ্র আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ট্রেনিং চলাকালীন সমুদ্রে চলমান জাহাজের বিভিন্ন ছবি তাকে করেছে মুগ্ধ। জাহাজে চাকরি নিয়ে দেশ- বিদেশের সমুদ্রে ঘুরতে পারলে তার জীবন হবে স্বার্থক এই লক্ষ্য মাথায় নিয়ে এগিয়ে গেল শুধু সম্মুখে। নেই একটুও বিরাম, নেই কোন অলসতা। চায় তার লক্ষ্য পূরণ। একটানা কোর্স কমপ্লিট করে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহেই হাতে পেল পাঁচ পাঁচটি সার্টিফিকেট।তার উদ্যম গেল আরও বেড়ে।
সুরেন্দ্রনাথ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন। কলেজে পড়াশোনার মাঝে কমপ্লিট করল বারাসাত সেন্ট জন বস্কো ক্যাটারিং স্কুলে ক্যাটারিং ডিপ্লোমা কোর্স। সফলতার সাথে ডিপ্লোমা কোর্স কমপ্লিট করে হাতে পেল সাফল্যের সার্টিফিকেট।আর ঠিক এই সময়ে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত RKHS লিমিটেডের পক্ষ থেকে মিঃ কে সতীশ এলেন বারাসাতে ইন্টারভিউ নিতে।জীবনে এই প্রথম ইন্টারভিউ।পরীক্ষার্থী অনেক। ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে। অবশেষে ডাক পড়ল। ভয় করলেও সাহস করে পৌঁছে গেল ইন্টারভিউ টেবিলে। গুড মর্নিং স্যার!অ্যাপ্রোচিংয়ে স্যার খুশি হলেন। শুরু হল ইন্টারভিউ। অনেক প্রশ্ন করে স্যারের আগ্রহ গেল বেড়ে।আরও একটু বাজিয়ে নিতে একের পর এক প্রশ্ন করলেন।সবশেষে প্রশ্ন করলেন- আচ্ছা সুদীপ! তুমি কোন্ পোষ্টের জন্য এপ্লাই করেছো?সবিনয়ে উত্তর- স্যার! অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক। স্যার বললেন- আচ্ছা আমি যদি তোমাকে কুকের পোস্টে সিলেক্ট করি তুমি করবে?ছেলের এক বাক্যের উত্তর- না স্যার। অবাক হয়ে স্যার বললেন- সেকি! কিন্তু কেন? অ্যাসিস্ট্যান্ট কুকের পোস্টে তুমি যে স্যালারি পাবে আর বুকের পোস্টে পাবে তার থেকে অনেক অ-নে-ক বেশি। বর্তমান যুগে কে না চায় আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে দিন কাটাতে?আমি বরং তোমাকে কুকের পোস্টে সিলেক্ট করে নিচ্ছি। তবুও ছেলের একই কথা- না স্যার! এই মুহূর্তে আমার যে অভিজ্ঞতা আছে তাতে এই দায়িত্ব আমি পালন করতে পারবো না।আমি চাইনা কোম্পানি আমার দ্বারা প্রতারিত হোক। বেশি স্যালারি আমার প্রয়োজন নেই।যোগ্য অভিজ্ঞতা অনুযায়ী যেটুকু প্রাপ্য তাতেই আমি সন্তুষ্ট।আমি কাজকে ভালোবাসি তাই কাজ শিখে দক্ষতা অর্জন করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমি অল্প দিনেই এই দায়িত্ব পালনে অবশ্যই সক্ষম হব।স্যার বুঝলেন এই ছেলেটাই একদিন কর্মগুণে সততার জন্য জীবনের যোগ্য ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হবে।তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন। মনের অজান্তে বলে উঠলেন- “গুড! ভেরি গুড!! ইউ আর সিলেক্টেড।” ছেলের আগ্রহ গেল বেড়ে। বাড়িতে এসে ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হওয়ার সংবাদ জানালো। সে তখন খুব খুশি। আর এই সংবাদে কিছু বন্ধুরাও উৎসাহিত হল। সেদিনের নির্বাচিত আবেদনকারীদের ধাপে ধাপে কোম্পানিতে নিয়োগ করা হবে। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু হলো। কয়েকদিন পর ছেলে আমাকে সাথে নিয়ে বারাসাত ঐ কলেজে যায়।সেন্ট জন বস্কো ক্যাটারিং স্কুলের প্রিন্সিপাল মিঃ ডি হালদারের সাথে আলাদা ভাবে কথা বললাম। ডাইরেক্টর মন্ডল স্যারের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পর মুম্বাইয়ের RKHS এর এজেন্ট মিঃ শঙ্কর বাবুর একটা ভিজিটিং কার্ড পেল।সেই কার্ড খানা পেয়ে ছেলের কি আনন্দ! মনে হ’ল যেন চাকরি পেয়ে গেছে।তার আনন্দ হোতে লাগলো আর আমি কিন্তু দিন দিন চিন্তাগ্রস্ত হতে লাগলাম।সত্যি কথা বলতে কি ওই সময়ে মুম্বাই সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা ছিল না।চিরকাল আমি বড্ড ঘরগোঁজা। তাই এতদূর মুম্বাই শহরে গিয়ে কোথায় কেমন থাকবে এই চিন্তাতে বড় চিন্তিত হয়ে পড়ি।মুম্বাই দাঙ্গার উপর নির্মিত “রোজা” সিনেমা দেখে সেই সময়ে যেন আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাছাড়া মুম্বাইতে ১২ ই মার্চ ১৯৯৩ সালে দাউদ ইব্রাহিমের সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা বড্ড ভাবিয়ে তুলতো। যে ছেলে এতদিন এক রাতের জন্যও ঘরের বাইরে থাকেনি তাকে কোন্ ভরসায় সুদূর ওই মুম্বাই শহরে একা পাঠাবো? আগে পিছে ভেবে আমি বড় বিচলিত হয়ে পড়ি।তবুও মুম্বাই যাবার জন্য তৎকালে টিকিট কাটাও হয়ে গেল।
১১ ই ডিসেম্বর ২০০৫। দুপুর থেকেই আসতে শুরু করলো স্কুল-কলেজের বন্ধু বান্ধবীরা। পাড়া- প্রতিবেশিরাও অনেকেই তখন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। বহুদিন পরে ছেলের বন্ধুদের মুখ থেকে শুনতে পাই, সেইদিনের তার মনের অবস্থা।” মন চাইছে না সবাইকে ছেড়ে যেতে। মনে হচ্ছিল যদি টিকিটটা আর দুটো দিন পরে হতো—-” বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে সব ব্যথা বুকে চেপে হাসিমুখে গৃহ দেবতাকে ভক্তি ভরে প্রণাম করে বেরিয়ে এলো।বারান্দা থেকে নেমে সিঁড়িতে মাথা ভর করে করল প্রণাম। অনেকক্ষণ ধরে বাস্তুদেবতাকে কি প্রার্থনা জানালো জানিনা। আমি তখন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত! সইতে না পেরে সেখান থেকে সরে গেলাম। সবার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে গেল দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের দিকে। প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতেই মাইকে ঘোষণা হল শিয়ালদহ যাবার ডাউন ট্রেন আসছে এক নম্বর প্লাটফর্মে।দূর থেকে দেখতে পেলাম দুর্গানগর থেকে ট্রেন ছেড়ে এগিয়ে আসছে। আর সময় নেই- মন কেঁদে উঠলো! প্লাটফর্মে মায়ের পা স্পর্শ করে প্রণাম করলো। ওর হাত তখন কাঁপছে। এবার বোনের হাত দুটি ধরে বলল- বোন! ভালো থাকিস, কোন চিন্তা করিস না- আমি ভালই থাকবো। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। উঠতে মন চাইছে না। তবুও যে উঠতে হবে। উঠে পড়তেই ট্রেন ছেড়ে দিল।ওদের সাথে আমি উঠে গিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে অসহায় দর্শকের মত দেখছি। যতদূর পারে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে মাকে, বোনকে হাত নেড়ে টা টা করতে করতে চোখের অদৃশ্য হয়ে গেল। আমরা পৌঁছে গেলাম হাওড়া স্টেশনে।সেদিন সঙ্গে ছিল পিন্টু, বাপ্পা, গনো, সৌরভ এবং পিন্টুর বাবা শঙ্কর দাস। সে বুঝেছিল এ ব্যথা আমি হয়তো সইতে পারবো না তাই বাধ্য হয়েই আমাদের সাথে হাওড়া পর্যন্ত ছেলেকে পৌঁছাতে গিয়েছিল। আমি যাতে ভেঙ্গে না পড়ি তাই পাশে থেকে আমায় সে সান্তনা দিয়ে গেছে কিন্তু পিতা ও পুত্রের রক্তের সম্পর্কের যে অসহনীয় যন্ত্রণা অন্তরে অনুভব হচ্ছিল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটল ট্রেন ছাড়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে। আর সইতে না পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রণাম করলো। ওর অশ্রু ঝরে পড়লো আমার পায়ে। ট্রেনের হর্ণ বেজে উঠলো।একান্ত নিরুপায় হয়েও ট্রেনে পা রাখতেই ট্রেনের চাকা গড়িয়ে গেল। তখন আমার বুক ফেঁটে যেতে লাগলো। স্টেশন ছেড়ে যতদূর চোখে দেখা যায় একইভাবে সে তাকিয়ে ছিল। প্রাণ খুলে আশীর্বাদ করলাম। তার যাত্রা শুভ হোক- সার্থক হোক তার স্বপ্ন–! দেখতে দেখতে চোখের অদৃশ্য হয়ে গেল। শংকরদার স্পর্শে চোখ মুছলাম। তখন আমি প্রচন্ড ভেঙে পড়েছি। সবার সাথে বাড়ি এলাম। বাড়ি এসেই অসুস্থতা অনুভব করতেই গেলাম ডাঃ গৌতম ঘোষের কাছে ।তিনি সব শুনে ওষুধের পরিবর্তে আমাকে শোনালেন বাঘা যতীনের গল্প। আমাকে একটু চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেন।সব শুনে সেদিন তিনি বললেন- আপনি একজন গর্বিত পিতা। একদিন এই কথাটা মিলিয়ে নেবেন!আমি সেদিন সেই কথার ততটা গুরুত্ব বুঝিনি। তবে জানিনা তেমন কোন দিন আসবে কিনা!
১৩ ই ডিসেম্বর ২০০৫ ভোর চারটে নাগাদ মুম্বাই CST স্টেশনে গিয়ে তারা পৌঁছালো।আগে থাকতে তাদের কোন হোটেল বুকিং করা ছিল না।সকাল আটটার আগে কোন রুম ভাড়া পাওয়া যাবে না তাই দু’আড়াই ঘণ্টা প্লাটফর্মে টাইম পাস করে সেখান থেকে লোকাল ট্রেন ধরে পৌঁছালো সান্তাক্রুজ স্টেশন। খিদেয় তখন তাদের পেট জ্বলছে। উপায়ান্তর না দেখে প্লাটফর্মের কাছেই একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্টে চারটে ক’রে পুরি সঙ্গে ছোট এক প্লেট চানা নিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিল। লাগলো ৩৫ টাকা। তাতেই টনক নড়লো ওদের।বুঝতে শুরু করলো দ্রব্যমূল্যে কলকাতা আর মুম্বাইয়ের ফারাকটা।কিছুক্ষণ পর ওরা যোগা- যোগ করলো “হোটেল গ্রীন হাউজ”এর সাথে। রাস্তা- ঘাটে যত যোগাযোগ সবই করছিল সরোজ। আগেও কয়েকবার সে মুম্বাই যাতায়াত করেছে। তার উপরে ছিল আমার ভরসা।হাওড়ায় তার হাত ধরে অনুরোধ করেছিলাম বারবার-ওদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য। লক্ষ্য সে রেখেছিল কিন্তু——–!
মুম্বাই CST স্টেশনে পৌঁছেই ছেলে বুথ থেকে ফোন করে তাদের পৌঁছানো সংবাদ আমাকে জানিয়ে দিল। আমরা স্বস্তি পেলাম তবুও ভীষণ চিন্তিত ছিলাম যেহেতু সম্পূর্ণ নতুন শহরে প্রথম পদার্পণ। অচেনা অজানা জায়গায় কি করছে,কেমন আছে জানার আগ্রহে সবসময় উদগ্রীব থাকতাম। সকাল ১১ টা নাগাদ গ্রীন হাউসে ওরা রুম পেল। সেখানে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে ছুটলো RKHS এর অফিসে। আন্ধেরিতে এই কোম্পানির অফিসে পৌঁছে ওরা সকলে অবাক হয়ে গেল। বিশাল এই অফিস এশিয়ার মধ্যে তৃতীয়। অফিসে ঢুকতে প্রথমে ওরা ভয় পাচ্ছিল। পরে সরোজ সাহস করে ঢুকে যোগাযোগ করে এসে জানালো একটু পরেই সকলের ইন্টারভিউ হবে। ইন্টারভিউর কথা শুনে সকলের ভয় আরও গেল বেড়ে। কিছুক্ষণ পর এক এক করে সকলের ডাক পড়লো। কিন্তু ইন্টারভিউতে কেহই পাশ করতে পারল না। তিনদিন পর ভালোভাবে তৈরি হয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। ওরা ফিরে আসলো রুমে। শুরু হল ডাইরি ঘেঁটে পড়াশোনা। সবাই পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত। তিনদিন পর কিছুটা তৈরি হয়ে আবার অফিসে গেল। যথারীতি ইন্টারভিউর জন্য অফিসে গিয়ে অপেক্ষা করছে।এত বড় অফিস আর এত লোকের আনাগোনা দেখে ওরা সকলেই আরো ভয় পেয়ে গেল। ইন্টারভিউ হল কিন্তু সেদিনও সিলেক্ট হতে পারল না। দুদিন পর আবার আসতে বললেন। সেদিনও গেল কিন্তু রেজাল্ট সেই একই- সিলেক্ট হলো না। মনের দুঃখে যেন আরও ভেঙ্গে পড়লো। বাড়িতেও এ কথা তখন বলতে পারছে না। নিজেও সহ্য করতে পারছে না। পরে জানতে পারি সেদিন রাত্রে রুমে ফিরে ক্ষোভে দুঃখে নিজের চুল নিজে টেনে স্বস্তি পাবার চেষ্টা করছিল। ভাগ্যের কষাঘাতে তখন সে জর্জরিত। ওই দিন ওদের মধ্যে একজন সিলেক্ট হওয়ায় তার ব্যক্তিগত আনন্দে রুমে একটা পার্টি দেবার জন্য জোড়াজড়ি করে। ছেলে সহ অন্য দুজন তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নানারকম বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে। অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে ছেলে তাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায় দিল। চলল মদের ফোয়ারা। কিন্তু ছেলে তা স্পর্শ করলো না।তার ফাঁকে বারবার মনে পড়ছিল বাড়ির কথা। নিজেকে যেন সেদিন মনে হচ্ছিল- সে বাপের কুসন্তান! মনে বড় কষ্ট পাচ্ছিল। ব্যয়বহুল মুম্বাই শহরে সীমিত পয়সা নিয়ে পৌঁছে সেখানে তখনও চাকরি অনিশ্চিত অথচ তার মাঝে ওরা সেই অর্থব্যয়ে করছে ফুর্তি। রাগে অভিমানে রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করল কিন্তু ঘুম আসতে চায়না। কিছুতেই মন মানছে না। ৺মায়ের উপর ভরসা রেখে নিজের মনকে নিজে শক্ত করলো। ভাবতে লাগলো সামনে আগত ঘাত প্রতিঘাতের কথা!আর তার মাঝে কখন যে চোখের পাতা দুটি একত্রে জুড়ে গেল তা ঠিক পেল না।
তার তিনদিন পর আবার অফিসে ইন্টারভিউ। সেদিন ছিল ওরা চারজন। এবং চারজনেই সিলেক্ট হ’ল। কোম্পানি নির্দেশ দিল তাদের মেডিকেল করতে আন্ধেরি ওয়েস্টে DR. R.G.SUCHAK এর কাছে ।১৫-১২-২০০৫ তারিখে medical assessment report হাতে পেলে সবাই জমা করলো অফিসে কিন্তু ঠিক ওই মুহূর্তে এসিস্ট্যান্ট কুকের পোস্ট খালি না থাকায় ওদের কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হল। আর এই সময়ে কোম্পানির খরচে তাদের কুকের ট্রেনিং করিয়ে উপযুক্ত করে নিতে চাইল। সেই মতো শুরু হলো কোম্পানিতে কুকের ট্রেনিং। একুশ দিন ধরে ট্রেনিং দিয়ে বাইশ দিনের দিন ওদের পরীক্ষা নেয়া হলো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত আইটেম রান্না করে ডিশগুলি তৈরি করতে হলো।কোম্পানির অভিজ্ঞ চারজন স্যার সমস্ত ডিশগুলি টেস্ট করে যখন বললেন ভেরি গুড! তখন ছেলের আনন্দে বুক ভরে উঠলো। সাথে সাথেই বাড়িতে ফোন করে আমাদের জানিয়ে সে যেন এতদিন পর একটু আনন্দ অনুভব করতে পারল।
ট্রেনিং চলাকালীন রোজ অফিসে যাতায়াত, খাওয়া দাওয়ায় তাদের সীমিত পয়সা যখন কমতে লাগলো তখন ওরা সিদ্ধান্ত নিল হোটেল ছেড়ে কোথাও একটা ঘর ভাড়া নেবে।সেই মতো ওরা খুঁজে নিল সান্তাক্রুজ ওয়েস্টে লিমা বিল্ডিংয়ের কাছে শামসুর ভাইয়ের ছোট্ট একটা রুম।সেখানে একটা রুমে ওরা ছিল চার জন।আর দুইজন ছিল পাশে অন্য একটা রুমে।