‘জৈব কৃষি’ মানে শুধুই চাল-ডাল বেঁচা-কেনা কর্মসূচী পালন নয়
পার্থ চ্যাটার্জী
“এখন গম্ভীর থেকো না গুমোট থেকো না অন্তরালে হাসো, হেসে ওঠো শিশুদের দেখে, পাখিদের দেখে নক্ষত্র আর আকাশ… এমনকি বিশ্বাসের ঘাতক নেশা দেখে অকারণে, উদ্দাম পাগলের মতো হেসে ওঠো খিলখিল… আজও হাসিমাখা মুখ দেখলে মানুষের স্পর্ধা জন্মায় ভালোবাসার…” – পালা পাব্বন
এমনই এক সংস্কৃতি গড়তে চায় নালিকুল, হুগলির বন্ধুরা। ওরা বলে উৎসব। তিনমাস ধরে চলে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে। গান, নাটক তাদের হাতিয়ার। তারপর দুদিন অনুষ্ঠান। গোটা দেশজুড়ে চলতি রাজনীতি-সৃষ্ট যে অপসংস্কৃতির রমরমা, বিভাজনের রাজনীতি তারই বিরুদ্ধে তাদের জেহাদ। লড়াইটা অসম। কারণ প্রতিক্রিয়া শক্তিরা অর্থের বলে বলীয়ান।তাদেরই কথায় “আমরা আছি কোনরকমে টিকে। আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছি আমরা – জীবন হচ্ছে কঠিন”। বিশ্বায়নের হামলায় স্থানীয় সংস্কৃতি ভেসে যাচ্ছে ও ধ্বংস প্রাপ্ত হচ্ছে। তবুও “কোন এক দমকা বাতাস জাল তছনছ করে দিলেও আবার জাল বুনে নেয় মাকড়সা”। এগিয়ে চলে তাদের প্রচেষ্টা।
‘পশ্চিমবঙ্গ সুস্থায়ী কৃষি বিকাশ মঞ্চ’ কৃষিটাকে বিষমুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছে। কিন্তু কৃষি-সমাজে যে অরাজকতা বিরাজ করছে তার সুষ্ঠু সমাধান না হলে এই লক্ষ্যটা কি সহজে পূরণ করা যাবে? তাই জৈব চাষ এবং তার বিক্রয় করাটাই মঞ্চের একমাত্র কর্মসূচী নয়। কোন একটা বিষয় জানার পর যদি আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী না থাকে তাহলে আজকের দিনে সেই জানাটার কোন মানেই দাঁড়ায় না।যেমন ধরা যাক বনাধিকার আইন বা জিন শস্যের চাষ বা বৃক্ষ নিধন। এটা জানার পর আমরা কি করবো? নয় নিজেরাই মঞ্চ বানিয়ে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো অথবা অন্যের দ্বারা সংগঠিত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তাকে শক্তিশালী করবো।ডানকুনি, হুগলির ঐ বন্ধুটি যে হতাশা যুক্ত অভিযোগগুলো রেখেছে এই পাতায়, প্রকৃতপক্ষে সেগুলি আমাদের প্রত্যেকরই কর্মসূচী। কারণ ‘অন্ন চিন্তা চমৎকারা’ ।তার সমস্যাটা আসলে একটা সার্বজনীন প্রতিক চরিত্র মাত্র। জৈব আন্দোলনে এই সব বন্ধুদের পাশে থাকার পরিকল্পনা যদি আমাদের না থাকে, তাহলে শুধুই আদর্শের কথা বলে তার লাভ কি? আমি কত কিছু জানি সেটা জানানোর জন্যই কি ‘পোস্টে’ ‘পোস্টে’ পাতা ভরিয়ে দেওয়া ! সাধারণ সদস্য হিসেবেই আমি আমার মতামতটা রাখছি।যদিও সুস্থায়ী কৃষি বিকাশ মঞ্চের প্রস্তাবনায় এই কর্মসূচীগুলিই লিখিত আকারে আছে। সেই কর্মসূচী অনুযায়ী আমরা যদি না এগোই তাহলে সেই বন্ধুটির ভাবনায় সৌখিন মজদুরীই হবে। যাইহোক লেখা শেষ করার আগে আমরা একবার দেখে নিতে পারি দেশের জনগণের জ্বালা যন্ত্রণার উৎসগুলি কোথা থেকে আসছে। তাহলে ঐ বন্ধুটির সমস্যাগুলো আমরা রিলেট করতে পারবো এবং আমাদের কর্তব্যগুলোও মঞ্চের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ১) উদারীকরণ,২) ভর্তুকি বিলোপ, ৩) বেসরকারিকরণ,৩) সরকারি ব্যয় সংকোচন, ৪) মুদ্রার অবমূল্যায়ন,৫) সাম্রাজ্যবাদি পন্য পরিসেবা ও পুঁজির মুক্ত অবাধ চলাচল,৬) রপ্তানিমুখী নীতি এবং আরো অন্যান্য জনবিরোধী নীতি। এইসব অনিয়মের কারণেই সমস্যা এবং তাদের লড়াই আমাদের উৎসাহিত করে। যেমন কৃষিক্ষেত্রে চলা দীর্ঘ স্থায়ী সংকট, কারখানা শ্রমিকের প্রতিবাদ, বিপুল অসংগঠিত ক্ষেত্রের দৈনিক বেঁচে থাকার লড়াই, পরিবেশকে লুঠ করার বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই, জাতপাত ব্যবস্থার আমূল বদলের লড়াইয়ের জটিল চরিত্র, পিতৃতন্ত্র আর পুঁজির জোয়ালে আটকে থাকা মেয়েদের সংগ্রাম ইত্যাদি ইত্যাদি।