তবু তুমি বলেছিলে তাই হৃদয় বিদারী কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি – সব কিছু কি মুখে বলা যায় নাকি বলেছি কখনোও ক্লিশে হয়ে যাওয়া শব্দ বন্ধের নিরিখে ভালোবাসা মেপো না – বড় দুরূহ শব্দের মতো মধ্যযামে যারা আসে তাদের গোপনীয়তা রক্ষা করার দায় আমার একার ছিলনা – তোমারও ত কিছু সীমাবদ্ধতা আছে – আমি বরাবর নদী বিলাসী – তারকাছে উন্মুখ হয়েছে অব্যক্ত কথামালা সকরুন আবেগের আবেশিত গন্ধঢালা তুমি একবার হৃদয় ভেজাও, পুর্ণস্নানে সর্বস্ব নিবেদন করে দেখো কে তোমায় কতটা কাছে টানে একবার পুর্ণ সমর্পণ করো কার্পণ্যহীন – ভালোবাসার অর্থ দমরুদ্ধ বাঁক ঘাত প্রতিঘাত, আর নদীর গতিবিধি – আমাকে আগেও যেভাবে দেখেছো, এখনোও তাই ভালবাসা বেঁচে আছে আজও যথারীতি – এটুকুই বলার ছিল, নদীকে বলেছি নিস্পৃহতার নিরিখে একখানি আস্ত হৃদয় যেটুকু তোমায় সঁপেছি সেটুকু ফেরতযোগ্য নয় আমি জানি —
………..
কবিতার অনুধ্যান:
কলমে – শ্যামাপ্রসাদ সরকার
প্রতি রোববারে এই অনুধ্যান লিখতে গেলে আবার নতুন করে আখরযাপিত সেই ইন্দ্রজালের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাই।
দেখি সব সময় বা জীবনের সংলাপে সেই Ultimate Surrender এর প্রসঙ্গটাই এসে যায়। আসলে যখনই কবিতা নিয়ে লিখতে যাই তখন এই অনুষঙ্গটাকেই সার্থকপ্রাণে পেয়ে যাই বলে আনন্দ হয়।
কবি মধুমিতা দি’ অনেকদিনই পাঠকদের কবিতার মাধ্যমে জারিত করেন অন্তরাত্মার গহীনতম অন্দরযাত্রায়। আর সেই পথ ঐহিকতার অনেক উর্দ্ধে।
এবারেও তাঁর কবিতা যেন চেনা অন্তর্জগতে প্রবেশ করে জীবনপ্রদায়ী সেই শ্বাসবায়ুকে অতি আপন করে বলে,
“কে তোমায় কতটা কাছে টানে একবার পুর্ণ সমর্পণ করো কার্পণ্যহীন – ভালোবাসার অর্থ দমরুদ্ধ বাঁক; ঘাত প্রতিঘাত, আর নদীর গতিবিধি – আমাকে আগেও যেভাবে দেখেছো, এখনোও তাই, ভালবাসা বেঁচে আছে আজও যথারীতি -“
এই আশ্বাসবাণীই তো শুনতে চেয়ে বারবার ক্ষত ঢেকেছে মানবসভ্যতা। আবার তার বুকের পাঁজরটিকে জ্বালিয়ে নিয়েই এগিয়ে গেছে বিস্তীর্ণতার অন্য জগতে। সে এসব ভালো করে জানে বলেই তার অস্তিত্বের সবরকমের সংকটময়তা থেকে সে বেরিয়ে এসেছে আজন্মকাল।
তাই পরিশেষে অগমপারের দূতী এসে আর্ষপ্রয়োগে হলেও অতিপরিচিত আবেগসঞ্চিত স্বরে উচ্চারণ করে,
” এটুকুই বলার ছিল, নদীকে বলেছি নিস্পৃহতার নিরিখে একখানি আস্ত হৃদয় যেটুকু তোমায় সঁপেছি সেটুকু ফেরতযোগ্য নয় আমি জানি –“
মধুমিতা’দি এখানেই অতিপরিচিত সার্থক কলমসেবী হয়ে আমাদের পাশে এসে দু’দন্ড এসে বসে যান।
কারণ তিনিও যে জানেন একমাত্র সমর্পণ সব শেষে এসে অন্ধকারের একদিন ঠিক ঐশী আলোটি এসে জ্বালাবেই।
” এসো যুগান্তের কবি, আসন্ন সন্ধ্যায় শেষ রশ্মিপাতে দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে, বল – ‘ক্ষমা করো’ । হিংস্র প্রলাপের মাঝে সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।”