উষ্ণ ছোঁয়ায় ভাল্কিমাচান
দীননাথ চক্রবর্তী
দম বন্ধ করা একঘেঁয়েমির মেঘ যদি জমে ওঠে মনে, একবার ভ্রমণের হাত ধরতে পারলেই ফাগুন বৃষ্টি। সেই একই মন তখন রেঙে ওঠে,বেজে ওঠে। তাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে লং ড্রাইভ। মানে প্রেম। আর প্রেমটা ভাল্কিমাচানের সঙ্গে। বেশি বলা হয় আগুন ফাগুন অরণ্যের সঙ্গে।আবার সেই অরণ্যকে সঙ্গী করে ফ্যামিলির সঙ্গে, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে ও প্রেম করা যায়। আর প্রেমিক প্রেমিকা হলে তো কথাই নেই।পিকনিক প্রেম ও যেন রাতের জ্যোৎস্না।অরণ্যকে একান্তভাবে কাছে পেতে চায় যদি কেউ ,দু একদিনের আদর্শ স্থান ভাল্কিমাচান। একদিনেও গিয়ে ফিরে আসতে পারে উদ্দাম তরুণ তরুণীরা। তবে একটু হেকটিক হয়ে যাবে। অরণ্য লাগোয়া থাকার জায়গা অরণ্য সুন্দরী। নিজেদের টেন্ট থাকলে আলাদা রোমাঞ্চ।
হাওড়া থেকে ট্রেনে আসলে গুসকরা নেমে গাড়িতে ২২কিমি। এছাড়াও দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হয়ে গুসকরা বা পানাজ হয়ে১৬ কিমি। হাওড়া থেকে ১৫৫ কিমি। ভাল্কিমাচান একটি গ্রাম। আদিবাসী এলাকা দিগনগর রোড ধরে গেলেই পড়বে গুসকরা থানা।বাঁ দিকে চলে গেছে অভিরামপুর।সিদে ভাল্কিমাচান ১৩ কিমি।
ভাল্কি নামের পিছনেও আছে একটা রুপকথা।এক সময় ভল্লু রাজা নিয়মিত এই জঙ্গলে শিকার করতে আসতেন ।মহুয়া ফলের নেশায় ভাল্লুক ও আসতো। মাচা বানিয়ে রাজা ভাল্লুক শিকার করতেন। সেই ভাল্লুক মাচান থেকেই, লোকমুখে জায়গাটিরই নাম হয়ে যায় ভাল্কিমাচান। সেই মাচা বা মাচান এখনও বর্তমান। সেটি এখন দুর্গ নামে পরিচিত। মাচান এখন একটা দেখবার মতো বিষয়। দেখবার মতো প্রযুক্তি। উচ্চতায় গগন চুম্বি। ছোট ছোট পোড়া ইটের তৈরী। নিঃসন্দেহে একটা নতুন অভিজ্ঞতা।
ভাল্কির অরণ্য অন্যান্য সব অরণ্যের চেয়ে পৃথক।বড়ো বড়ো রঙীন ছাতার অরণ্য যেন। আলো ছায়ায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার স্পট। সেখানে এতটুকু অভাব হবেনা স্বাধীনতার গোপনীতার। নেই উৎপাত ঝুট ঝামেলা।এমনকি কুকুরের ও না। সেই ছাতার সিক দিয়ে টপ টপ করে ঝরে পড়ে ফাগুনের উষ্ণতা। বাতাসে কার যেন পায়ের নূপুর। পাখির কূজনে বসন্তের রোম্যান্টিকতা। আর শাল পিয়াল মহুয়া কেন্দুর আবহসঙ্গীত। সোনাঝুরির ফুল যেন বুকের ঘামে ভেজা চিঠি।গুনগুন করে ওঠে হেমন্ত “পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি…”
খারাপও আছে। পিকনিক করতে এসে ,নোংরা ফেলে যাওয়া। একদিন হয়তো দূষিত হয়ে উঠবে জায়গাটা।
বাস্তুবিকই ভাল্কির জঙ্গল ভুল ভুলাইয়া। হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনন্য। লুকোচুরি খেলতে খেলতে ফিরে পেলাম হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলাকে।
অরণ্যের বুক চিরে চলে গেছে একটাই ঘন কালো পীচের রাস্তা। তিরতির করে হারিয়ে গেছে জঙ্গলে দুর্গাপুর থেকে আসা ক্যানেল। এই পথ ধরে গাড়ী ছুটলে প্রতাপপুর রামনগর ভাতকুন্ডা হয়ে অজয় নদের তীরে পৌঁছে যাবে। ইচ্ছে করলে বিহার ও করা যায় ভাল্কির জলাশয়ে।
বলার মতো বৈভব হয়তো ভাল্কির নেই,কিন্তু আছে আটপৌরীয় সরলতা ,উষ্ণতা। যেন জীবনান্দের কবিতা, পিকাসর আঁকা ছবি। ফেরার সময় ঝড় ওঠে মনে ।ভাল্কিকে বিদায় জানিয়ে গাড়ী ছোটে শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্যে। পিন্টু গান চালিয়ে দেয় “ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা …”
দীননাথ চক্রবর্তী
গ্রাম ও পোষ্ট দুইল্যা
জেলা হাওড়া, সুচক ৭১১৩০২
মোবাইলঃ ৮৪২০১৯৮৫৪৮
—oooXXooo—