উৎসর্গ – কবিতাপ্রেমী মননগুলিকে…..
ব্যর্থ প্রেম
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমই আমাকে নতুন অহঙ্কার দেয়
আমি মানুষ হিসেবে একটু লম্বা হয়ে উঠি
দুঃখ আমার মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত
ছড়িয়ে যায়
আমি সমস্ত মানুষের থেকে আলাদা হয়ে এক
অচেনা রাস্তা দিয়ে ধীরে পায়ে
হেঁটে যাই
সার্থক মানুষদের আরো-চাই মুখ আমার সহ্য হয় না
আমি পথের কুকুরকে বিস্কুট কিনে দিই
রিক্সাওয়ালাকে দিই সিগারেট
অন্ধ মানুষের শাদা লাঠি আমার পায়ের কাছে
খসে পড়ে
আমার দু‘হাত ভর্তি অঢেল দয়া, আমাকে কেউ
ফিরিয়ে দিয়েছে বলে গোটা দুনিয়াটাকে
মনে হয় খুব আপন
আমি বাড়ি থেকে বেরুই নতুন কাচা
প্যান্ট শার্ট পরে
আমার সদ্য দাড়ি কামানো নরম মুখখানিকে
আমি নিজেই আদর করি
খুব গোপনে
আমি একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ
আমার সর্বাঙ্গে কোথাও
একটুও ময়লা নেই
অহঙ্কারের প্রতিভা জ্যোতির্বলয় হয়ে থাকে আমার
মাথার পেছনে
আর কেউ দেখুক বা না দেখুক
আমি ঠিক টের পাই
অভিমান আমার ওষ্ঠে এনে দেয় স্মিত হাস্য
আমি এমনভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও
আঘাত না লাগে
আমার তো কারুকে দুঃখ দেবার কথা নয়।
………….
কবিতার অনুধ্যান-
কলমে – শ্যামাপ্রসাদ সরকার
এতদিন সব লেখাতে সমর্পণের প্রসঙ্গটি না চাইতেও ঠিক খুঁজে পেয়েছি বলে এবারের কবিতাটিতে আবিষ্কার করলাম তার প্রস্তুতিটি।
তাই যখন কবি এখানে বলেছেন ,
“অভিমান আমার ওষ্ঠে এনে দেয় স্মিত হাস্য
আমি এমনভাবে পা ফেলি যেন মাটির বুকেও
আঘাত না লাগে
আমার তো কারুকে দুঃখ দেবার কথা নয়”
তখন অতি সাধারণ কবিতাপ্রেমী মানুষেরা বুঝতে পারি যে প্রাসঙ্গিক অবচেতনের মধ্যেও আমাদের সবশেষে সমর্পণের প্রস্তুতিটিকে শুরু করতে হয় বলেই এরকম একটা স্বীকারোক্তি ঠিক কবিতার মত গুঞ্জরিত হয়ে যায়।
তাই সেইসব আত্মকথনের অবিচল ধারাটিতে ফুটে ওঠে কালজয়ী অমোঘ পঙক্তিরা। কবি যেন সময়বোধের উর্দ্ধে উঠে গিয়ে বলতে পারেন আর্ষপ্রয়োগের যাদুমন্ত্রটি,
” প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমই আমাকে নতুন অহঙ্কার দেয়
আমি মানুষ হিসেবে একটু লম্বা হয়ে উঠি
দুঃখ আমার মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত
ছড়িয়ে যায়
আমি সমস্ত মানুষের থেকে আলাদা হয়ে এক
অচেনা রাস্তা দিয়ে ধীরে পায়ে
হেঁটে যাই “
তাই আমরা সব দীনতার মধ্যেও এরকম কবিতা পড়তে চাই আনন্দসাগরে উদ্ভাসিত হব বলে।
এই কবিতাটির রচয়িতা কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাই আমাদের মানসযাপনের আলোকবর্তিকা হয়ে সার্থক ভাবে জেগে থাকেন সর্বদাই।
—oooXXooo—
(এরপর ক্রমশঃ…)