কবিতার নিরন্তর অবগাহন আমায় সর্বদা দেয় প্রশান্তি। তবে এইসব কবিতা কেবল খ্যাতনামা কলমের অক্ষরবৃত্ত শুধু নয়, অনেক সমকালীন সুহৃদ রচনাকারের লেখাও আমায় প্রাণিত করেছে মুগ্ধতায়। এইসব একান্ত কবিতা যাপন নিয়ে এই ই-বইটির অবতারণা।
এসব অর্থহীন লেখা পড়েও যদি কারুর মন থেকে তন্মধ্য কবিতার আলোকদ্যূতি না চলে যায় তবে যে সেটা কাব্যচর্চার বৃহত্তর মানসক্ষেত্রে যে একটা সোৎসাহ জয়সূচক ঘটনা হয়ে থাকবে, সন্দেহ নেই।
বিনীত,
শ্যামাপ্রসাদ সরকার।
…………………………………
উৎসর্গ – কবিতাপ্রেমী মননগুলিকে….. ……………………………………
সুখে আমায়…..
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সুখে আমায় রাখবে কেন, রাখো তোমার কোলে। যাক-না গো সুখ জ্বলে যাক-না পায়ের তলার মাটি, তুমি তখন ধরবে আঁটি– তুলে নিয়ে দুলাবে ওই বাহুদোলার দোলে ॥ যেখানে ঘর বাঁধব আমি আসে আসুক বান- তুমি যদি ভাসাও মোরে চাই নে পরিত্রাণ। হার মেনেছি, মিটেছে ভয়– তোমার জয় তো আমারি জয়! ধরা দেব, তোমায় আমি ধরব যে তাই হলে ॥
কবিতার অনুধ্যান-
কলমে /শ্যামাপ্রসাদ সরকার
বিচরণ আর অস্তিত্বযাপনের মধ্যে সর্বদাই অমিলের রাজত্ব আর মনকষাকষি আছে বলেই সেই যে ‘হলুদ বনে’ নাকছাবিটা হারিয়ে গেল, আজন্মকাল তার আর ফিরে আসলনা।
বাধ্য হয়েই যেন ১৬০বছরের এই প্রাজ্ঞ কবিটিও তাকে খুঁজতে বেরিয়েছেন আমাদের সাথে একজন সহযোদ্ধার মত। নেহাৎ এই স্বেচ্ছা দায়টি তিনি যেচে নিয়েছেন বলে বুঝতে পারি যখন তিনি প্রকাশ্যে এসে ” আমি তোমাদেরই লোক” একথা নিজের মুখেই উচ্চারণ করে ফেলেছেন।
আর তাই তো তিনি ব্যক্তিজীবনের পাওয়া না পাওয়াকে দূরে সরিয়ে আরো বড়, আরো মহৎ উৎসর্জনের পথটার সন্ধানী হয়েছেন।
সে পথে চলতে চলতে দ্বিধাহীনভাবে বলে উঠতে পেরেছেন, ” হার মেনেছি, মিটেছে ভয়– তোমার জয় তো আমারি জয়!”
আসলে তাঁর পথে অনুসরণকারী সব মুগ্ধচিত্ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহুবার চেয়েও সেই বৃহত্তর জয়টির চিহ্নপ্রকাশ খুঁজতে গিয়ে আরও বেশী করে পথভ্রষ্ট হয়েছে। যদিও সেটাকে দেখবার পরে আজ উনি বেঁচে থাকলে তাকে মেনে নিতেন আর পরমুহূর্তে নতুন দিশার সন্ধানে ব্রতী হতেন।
যে বেদ আর উপনিষদের শিক্ষা ওঁর প্রাজ্ঞতাকে অনন্তগমনের পথে নতুন করে খোয়াই আর শ্রীনিকেতনকেও চিনিয়েছে তিনি তো আর কেবল জয় পরাজয়ের সামান্য আক্ষরিকতায় আটকে থাকবেন না সেটা ২০২১ এ এসে আমরাও আজ জেনে গেছি।
তাই বলে যে ঐশ্বরিক আলোকরশ্মিকে উৎসমূলে গিয়ে যে তিনি একবার দেখে আসতে চেয়েছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ তাঁর এই অভিযাত্রার উদ্যমটি তো আমাদের মতো নিতান্ত ক্ষুদ্রপ্রাণের সবার প্রতিনিধি হয়ে।
তাই সোচ্চার কলমে তিনি অবলীলায় ঘোষণা করেন, ” ধরা দেব, তোমায় আমি ধরব যে তাই হলে”
এ আসলে সেই পথ যা আমাদের সব সীমাবদ্ধতাকে টেনে এনে পরম বৃহৎের সংসারে বন্দী করে উজ্জীবনের দ্যূতিতে।
এই দৈব আয়োজনটির ঋত্বিক সেই কবিগুরু।তবে তিনি বিশ্বাস করে গেছেন যে এই পথ অনিশ্চয়তার অন্যপারে একদিন ঠিক ভাস্বর হবে একমাত্র ঐশী নিবেদনের ন্যায্যতায়।