চার পুরুষ
***********
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
(কবিতা সংকলন)
:: ভণিতা ::
প্রেমের সার্থকতা কি পূর্ণতায় না বিচ্ছেদে না কি বিরহে? এরই উত্তর খোঁজা এই চারটি ভিন্ন সময়ে রচিত কবিতায়। আজ উপলব্ধি করলাম চারটির সুর আসলে একই। সেই অজরা প্রেমকেই অণ্বেষণ করাই এই শব্দাক্ষরে হয়েছে। এই প্রেম নামক বস্তুটিও আসলে আর সব কিছুর মতই প্রেক্ষিত বদলে পরিবর্তনশীল। তাই বোধকরি প্রেমের মূল্যে গোটা জীবন এখনো বিক্রী হয়।
************************
১) প্রথম পুরুষ
***********
চোখের মায়ায় দিয়েছে ধরা জানি
চিরকালের বদ্ধ খাঁচা ছেড়ে
লজ্জা অরুণ প্রথম পরশ আনি।
নিলাজ নিঠুর বালিকা বুকে তার
কৈশোরেতেই স্বপ্ন চুরমার !
কোথায় গেলে পাব সুজনসখা,
যৌবনতেও পেলেম না আর দেখা।
হয়তো কোথাও, কোন সে অন্তরালে,
মন দিয়েছে আমায় মনে মনে
বুকের ভিতর পদ্মকুঁড়ি মেলে!
মেঠো বাঁশী সেই বাজিয়েছিলে বটে
সেই সুরের ওই সর্বনাশী ধ্বনি
শরীর মনে দাপিয়ে রাহাজানি !
তবুও সুজন দিলেনা আর দেখা
বৃথাই মুছি চোখের জলের রেখা !
সেদিন ছিল সর্বনাশী আলো
চাঁদের গায়ে উঠল ফুটে ভালো
সেই ছেলেটাই অবয়বে যায় চেনা
মনখারাপের পথহারা, আনমনা।
উনিশপ্রহর, কচি কোমল অতি
ঘুম পাড়ালাম বিছিয়ে শীতলপাটি।
আজকে যখন ব্যস্ত ঘরের কাজে
কখন যেন ভুলিয়ে দিল আজএ
কোথায় আমি? চন্দ্রপ্রহর কালে
সেই তো আজও দেহের মধ্যে জ্বলে…
প্রথম পুরুষ আগুন দহন ঢালে…
২) অন্য পুরুষ
*************
অন্য পুরুষ,নটভৈরব
লুব্ধক মন, বিলম্বিতে
আলাপ সেরে বিস্তারে সেই
কাজলকাঠির ঘোর লাগা ওই
নিন্দাবাদের হইচই আর
সলাজ কোমলগান্ধারে তাই
চড়ছে পারদ পরকীয়াই
সবাই জানে ফিস্ ফিসিয়ে
বলছে কথা মন বিষিয়ে
নষ্ট মেয়ে ! কূলত্যাগী
কোথায় ঘোরে ! কোথায় ফেরে
আর কে থাকে ! কারুর সাথেই
সদ্ভাব কই ! রাতেই আসে
লম্বা সেডান, মিশকালো রাত
কাঁচ তো তোলাই ! বিষম বালাই !
পাড়ার হাওয়ায় একলা শনি
নটমল্লার! বিলাসখানি
প্রেমিক পুরুষ ! চওড়া বুকে
পাতলে মাথা ! আহা কি সুখ
বউও আছে, ফ্যামিলিম্যান
তবুও থাকে, খুব শয়তান
বোতাম ছেঁড়া, সেলাই করি
মাছের মাথার মুগের ডালও
বারণ করি আসতে, কালও
তবুও ঘড়ির সময় জানে
প্রতীক্ষারই আকূল মানে
শুদ্ধবেহাগ,ইমন বাহার
প্রেমিক পুরুষ চক্ষে আঁধার
সত্যি করে স্নানের ঘরে
কল খুলেছি জলও পড়ে
প্রেমিকপুরুষ… কোথায় গেলে
জ্ঞান ফেরেনি হসপিটালে !
এসেছিলে কি সন্ধ্যাকালে?
এসেছিলে কি আগুন জ্বেলে
ধৈবতে তান সুর পঞ্চম
ধিকধিকিয়ে শ্মশানতলে?
৩) তৃতীয় পুরুষ
*************
অবোধ ছেলে, ঘুম পাড়ালাম
দামালপনায় হাত ভেঙেছ
দেহের ভিতর ক্ষত ভরেছ,
একটু খানি চিলতে হাসি
তাতেও নজর সর্বনাশী!
ব্যান্ডেজেতে করুণা মাখা
শুয়েই আছে ! যায়না দেখা !
তবুও ডাকি ডাকনামেতে
সাবধানে ছুঁই মলিন ক্ষতে।
এই তো সেদিন তমালবনে
একলা বাঁশী আপনমনে,
বাজিয়ে ছিলে ! রাই কিশোরীর পদ্মকুঁড়ি
একটি ফুঁয়েই ফুটিয়ে দিলে?
অনেক দ্বিধায় লুকিয়ে ছিলাম
ঠোঁটের কোণায় পরম সে স্বাদ
অবাধ্য খুব ! ঠিক হয়েছে
এখন তো বাদ ! এখন তো বাদ!
ইচ্ছে ভ্রমর বাগান জুড়ে
গুনগুনিয়ে আওয়াজ করে
অন্য নারী তাকেও কি চাই !
লোকলাজমান সব কি খোয়াই !
স্নানের পরে ঠাকুরঘরে
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
কি সে দামাল ! কালবোশেখী
আঁচলে দাগ লুকিয়ে রাখি
নিজের থেকে লুকিয়ে থাকি !
অবোধ ছেলে ! জ্ঞান তো নেই
পেতেই হবে? যখন যা চাই?
ইচ্ছে মতন ! যখন তখন?
না দেব না ! ফিরিয়ে দিলাম!
এখন আমি অন্য কারোর
অন্য শাঁখা, অন্য লোহা
অন্যখাটে জড়িয়ে শোয়া
তবুও তুমি জানান দেবে !
এঁটো আমি, তবুও নেবে?
অবোধ ছেলে ঘুমিয়ে আছে
নিথর মরণ ঝলসে নাচে,
সেই নীলশার্ট? আমার দেওয়া
সর্বনাশীর আগুন ছোঁয়া?
রক্তগুলো জমাট বাঁধে
যে প্রেম করে সেও কি রাঁধে?
অবোধ ছেলে হাল্কা দাড়ি
প্রবল চুমু কি সুড়সুড়ি !
মুখের রেশম রক্তে জমাট-
পড়লো বুকেই লৌহকপাট!
এই ছেলেটা ! কি নাম রে তোর
‘রাজা’ বলেই ডাকতে হলে
‘রাই’ টা তো বল ! চোখটা খুলে !
দুচোখ কেবল নিথর বোজা
হাসপাতালের ওয়ার্ড খোঁজা;
সকাল থেকে বসেই আছি
সারা জীবন থমকে গেছি
শুনছো তুমি ! ঘুম ভাঙলে
কানের ধারে বলেই যাব
কোথায় তুমি? রাজা? রাজা?
৪) প্রেমিক পুরুষ
***************
প্রেমিক পুরুষ!
এলোমেলো হাওয়ায়
ছড়িয়ে দিলাম প্রথম কদমফুল !
প্রেমিক পুরুষ
আদর করে দেহের উপর দাগ,
সোহাগ ঢেলে মিটিয়ে দিলাম।
প্রেমিক পুরুষ
যতই কাছে ততই দূরে
একটু কেবল যত্ন করে
নাই বা পেলাম!
ফুলদানীর ওই গুচ্ছ ফুলে
মধু থাকেনা ! সবাই বলে !
প্রেমিক পুরুষ !
শীত করছে
লেপের ভিতর নিঃশ্বাস নেই !
প্রেমিক পুরুষ !
দুইটি মানুষ
শরীর আছে, প্রেম কই?
—০০::XX::০০—