শোকার্ত শ্মশান কুরুক্ষেত্র
রণজিৎ মন্ডল
অধার্মিক, দাম্ভিক, নির্দয় যুবরাজ গদাযুদ্ধে পরাজিত,
পঞ্চপান্ডব ও সখা বাসুদেব সমুখে,
দূর্যোধন গদার আঘাতে মৃত্যুমুখে
পতিত।
আঠারো দিনের ধর্ম বনাম অধর্মের
যুদ্ধ হল সমাপ্ত।
একে একে কৌরব পক্ষের সব বীর
সেনারা পরাজিত,
অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের একশত
পুত্রের শবদেহ শায়িত,
সূর্যপুত্র কুন্তেয় কর্ণ, সেও আজ
অধর্মের শবে পরিণত।
গুরুশ্রেষ্ঠ দ্রোনাচার্য, কূলগুরু
কৃপাচার্য, জয়দ্রোথ, শকুনি
কেউই আজ আর কূট কৌশলে
পারে না করিতে নিজেদের জীবিত।
রাতের অন্ধকারে হাতে মশাল নিয়ে
কে? কে কাঁদিছে অবিরত?
গান্ধারী জননী, আর মাতা কুন্তী
খুজিছে প্রীয় পুত্রদের শবদেহ
কোথায় শায়িত?
জননী গান্ধারী কাদিয়া দূর্যোধনের
শবদেহ জড়াইয়া হয় মুর্ছিত।
ওদিকে মাতা কুন্তী খুজিয়া
পাইয়াছে সূর্যপুত্র কর্ণের শবদেহ
যে পুত্রকে জানিত সবাই সূত !
কি নিদারুণ, নির্মম, নিষ্ঠুর পরিণতী
পুত্র…
যুধিষ্ঠির ডাকিয়া কয়, মাতে
কেন কাদিছ মাতে? ও যে
সূতপুত্র!
না, না, ও সূতপুত্র নয়, ও আমার
পুত্র, তোমাদের জেষ্ঠ ভ্রাতা,
কি বললে মাতা, কর্ণ তোমার
জেষ্ঠ পুত্র? সখা বাসুদেব কি
এ কথা জানিত?
অবশ্যই জানিত।
বাসুদেব প্রীয় সখা, তুমি কি
জানিতে? এই সত্য?
হ্যাঁ, তবে কেন তুমি বলনি
এই সত্য?
যে ধর্মকে ত্যাগ করিয়া অধর্মের
পক্ষে যায়, সে ধর্মের শত্রু,
তোমাদেরও শত্রু বলে
কথিত।
সত্য গোপন করিতে হয়
সৃষ্টিকে রক্ষার তাগিদে,
ধ্বংশ নইলে হইত তোমাদের
অবধারিত।
ওঠো কুন্তী, দেখ চেয়ে কুরুক্ষেত্র
আজ হয়েছে শ্মশাণে পরিণত!
কিন্তু আমি যে নিরুপায়, ধর্মকে
রক্ষা করাই বীরের কর্তব্য,
অধর্মের বীর যোদ্ধাদের শব
সবাই শায়িত।
জননী গান্ধারী বৃথা ক্রন্দন
করিছ আজিকে কেন?
অন্ধ পুত্রস্নেহ পিতা ধৃতরাষ্ট্রকে
যদি একটু বিবেক হইত
জাগ্রত,
কখনো দূর্যোধনের ইচ্ছায় আজ
তোমার প্রীয় পুত্রদের শবদেহ
দেখিতে না হত।
তবু আমি ক্ষমিব না তোমায়
বাসুদেব, হে ভগবান কৃষ্ণ,
তুমি পারিতে এই যুদ্ধ হইতে
করিতে বিরত,
তুমি পারিতে হস্তিনাপুরকে
রক্ষা করিতে, যদি তোমার
ইচ্ছা ও বিচার নিরপেক্ষ হত!
হে গান্ধারী তুমি দুষিছো আমারে,
কিন্তু তুমি কি ভুলে গেছ?
খন্ডপ্রস্তের মাত্র পাঁচটি গ্রাম থেকেও
পান্ডবদের করিল বঞ্চিত,
পাশাখেলায় শকুনির কূট কৌশলে,
তোমার রাজপরিবারের বধূ
হইল নির্যাতিত, অপমানিত,
বস্ত্রহীনা লাঞ্ছিত,
চোদ্দ বৎসর বনবাস ও এক বৎসর
অজ্ঞাত বাস সহ
শুচাগ্র মেদিনি নাহি দিব
বিনা যুদ্ধে পান্ডবেরে হইল
প্রতিজ্ঞারত।
তথাপি দূর্যোধনকে কহিয়াছি
যুদ্ধ হইতে হও বিরত,
যুদ্ধ কোন মিমাংসার সূত্র নহে,
ইহাতে কৌরব ও পান্ডব উভয়ের সৈন্য
আত্মীয়, নিজ ভাইয়েরা
হইবে নিহত।
আমাকে অসম্মান করিয়া দাম্ভিক
দূর্যোধন কহিল,
পান্ডবদের জন্য মায়া হইতেছে
কেশব, কাঁদো কাঁদো আরো
কাঁদিবে হইলে পাঁচ ভাই নিহত।
মাতা গান্ধারী, এসবই নিয়তি,
বিলাপ কর কিন্তু নিস্ফল ক্রন্দনে
হও বিরত।
না, না, কেশব, হে কৃষ্ণ,
তোমাকে অভিশাপ দিলাম,
তোমার যদুবংশ হইবে নির্মূল
এহেন আত্মকলহে হইয়া রত।
তথাস্তু, কেশব যুধিষ্ঠিরকে লইয়া
অন্তীম শরশয্যায় শায়িত
গঙ্গাপুত্র পিতামহ ভীষ্মের
আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য অগ্রসর
হইলেন, তখনো ভীষ্ম জীবিত।
বন্ধুদের পড়ার অনুরোধ রইল।
–~০০০XX০০০~–