বারবণিতার জীবন যুদ্ধ
মিতা ঘোষ
প্রতি রাতে চারদেওয়ালের মধ্যে বাবুদের তার শরীর নিয়ে খেলা করা পুষ্পিতার নিত্য পরিচিত, তবুও আজ খুবই বিরক্ত লাগছে যেন! তার মনটাও বড়ই অস্থির। কারণ আগামীকাল তার মেয়ে বহ্নির মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। তাই পুষ্পিতা চেয়েছিল আজ রাতটা মেয়ের সঙ্গে কাটাতে। কিন্তু বারবণিতার আবার ইচ্ছা অনিচ্ছা!! মাসি এসে বলল “বাবু অনেক পুরানো কাস্টমার ওনাকে ফেরানো যাবে না।” মাত্র দু হাজার টাকার বিনিময়ে আজ রাতটাও বাবু পুষ্পিতার জীবন থেকে কেড়ে নিল। পুষ্পিতা বড়ই অসহায়, বেশি বাড়াবাড়ি করলে হয়তো মাসি তার রোজগারই বন্ধ করে দেবে।”পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। কেউই পারেনা একে জয় করতে।” তাই বাধ্য হয়েই বাবুকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো পুষ্পিতা।
মাকে ছেড়ে শোয়া বহ্নির ছোট থেকেই অভ্যাস। কিন্তু আজ যেন তার বড়ই কষ্ট হচ্ছে মায়ের জন্য। দিনের পর দিন মায়ের যন্ত্রণা আর অপমানের পোকাটা তার বুকের মধ্যে কুরে কুরে খাচ্ছে। তাই তার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়তে লাগল। সেটা দেখে কমলা দিদা বলল,”চল বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি।” বাইরে মৃদুমন্দ ঠান্ডা হাওয়া বইছে। আজ চাঁদ ও যেন লজ্জায় মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়েছে। বহুদূরে দপদপ করে জ্বলছে একটা ল্যাম্পপোস্ট। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের অনিশ্চিত চিন্তায় মগ্ন ছিল বহ্নি । হঠাৎই দিদা বললো,”অনেক রাত হয়েছে ঘরে চল”।
পুষ্পিতা ভোর চারটের সময় উঠে বাবুকে ডাকতেই বাবু বিরক্ত হয়ে বললেন,”তুই এত তাড়াতাড়ি উঠে আমাকে ডাকছিস কেন? আমি তোকে ছটার আগে ছাড়বো না”। সে বাবুর পা জড়িয়ে ধরে বলল,”বাবু আজ আমার মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা ,একটু দয়া করুন”। বাবু রেগে গিয়ে এক লাথি মেরে তীক্ষ্ণ কঠিন দৃষ্টি বর্ষিত করলেন পুষ্পিতার প্রতি যাতে কোনো করুনার ছাপ নেই। তারপর ব্যাঙ্গার্থক সুরে বললেন,”ওর পরীক্ষা দিয়ে কি হবে? ওকে বল আমার সঙ্গে রাত কাটাতে । আমি অনেক পয়..সা…. সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পিতা চিৎকার করে বলল.”খবরদার ! আর একটা কথাও বলবেন না। আজ মেয়ের পরীক্ষা তাই আপনি প্রাণে বেঁচে গেলেন। একটা কথা কান খুলে শুনে নিন আমার মেয়েকে যদি আমি আপনাদের ঘরের মেয়েদের মত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না করতে পারি তাহলে আমার নাম ও পুষ্পিতা নয়”। রাগে তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো ।পুষ্পিতার এই রণচণ্ডীরূপ দেখে বাবু তাড়াতাড়ি জামা পরতে পরতে বেরিয়ে গেলেন।
পুষ্পিতা স্নান সেরে ঠাকুরকে প্রণাম করে বলল,”হে ঈশ্বর আমাকে তো অনেক কষ্টই দিলে ,তবে আমার বহ্নিকে তুমি ওই নরকেরকীট গুলির হাত থেকে রক্ষা করো”। তারপর মেয়ের কাছে গিয়ে দেখে সে পড়ছে। ওকে আদর করে হাসতে হাসতে বললো,”তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে ,হলে গিয়ে সিট নাম্বার খুঁজতে হবে না!” বেরোনোর আগে বহ্নি মাকে প্রণাম করলে পুষ্পিতা বলল আমি জানিনা আমার আশীর্বাদে কাজ হবে কিনা। তবুও বলছি “তুই যেন তোর সব জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করিস। কেউ যদি কখনো তোর কাছে অসৎ উদ্দেশ্যে আসে, তাহলে তুই যেন তোর প্রখর বহ্নিশিখার লেলিহানে সেইসব নরকের কীটগুলিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারিস।”
মেয়েকে পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় এসে পুষ্পিতা বসলো। হঠাৎই তার স্মৃতির পটে ভেসে উঠলো কুড়ি বছর আগের তার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনটির কথা।সকালে বাবা-মা বুকভরা আশা নিয়ে আমাকে পরীক্ষা দিতে পাঠালো আমার প্রাইভেট টিচার অমলদার সঙ্গে। সে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাকে অজ্ঞান করে পরীক্ষা হলে না নিয়ে সোজা শহরের একটা ছোট্ট হোটেলে নিয়ে গেল। জ্ঞান ফেরার পর আমি চিৎকার করে প্রতিবাদ করায় অমলদা আমাকে হাত, পা ,মুখ বেঁধে ঘরের এক কোণে ফেলে রাখলো। বিকেলের দিকে কয়েকজন লোক এসে অমলদা কে বলল “বাহ !খাসা মাল তুলেছিস তো!!” তারপর অমলদার হাতে অনেকগুলি টাকা দিয়ে বলল “দুদিন পর নিয়ে যাব ।এই দুইদিন তুই ওকে ভোগ করে নে!!” বলে হাসতে হাসতে চলে গেল। তারপর দুই দিন দুই রাত ধরে চলতে থাকে আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণ। সেখান থেকে তারা নিয়ে এলো এই পতিতালয়ে। প্রথমে একবার পালানোর চেষ্টা করায় ওরা আমাকে এত মার মেরেছিল যে আমি সাত দিন জ্বরে উঠতে পারিনি। তার উপর দুইদিন জল পর্যন্ত খেতে দেয়নি। তখন কমলা মাসি বলল “আমি ওকে বোঝাবো আর কষ্ট দিস না”। সেই থেকে সে আমাকে মায়ের মতো ভালোবাসে।
সময় কোনো কিছুর জন্য থেমে থাকে না,সে স্রোতস্বিনী নদীর মতোই দ্রুতগতিতে বইতে থাকে। পুষ্পিতার একঘেয়েমি জীবন প্রবাহ হারিয়ে যন্ত্রের মতই চলছে কোন অজানা চালিকা শক্তি দিয়ে। তার এই নিকষ কালো অন্ধকার জীবনে হঠাৎই কয়েক লক্ষ অন্ধকারের মেঘ সরিয়ে একটা এক চিলতে আশার আলোর রেখা সে দেখতে পেল। পুষ্পিতা বুঝতে পারল সে মা হতে চলেছে। বুকের ভেতরটা ভেঙে যায় জ্বলে যায় তবুও এক শুন্য নিস্তব্ধ শান্তির স্বপ্ন দেখে সে। একটা আদুরে ছোট্ট শিশুর গাল তাতে এক টুকরো স্বপ্নের চুমু পুষ্পিতা তারই অপেক্ষায় রইল।এই নিষিদ্ধ পল্লীতে মা হবার সময় সবাইকে খুব কষ্ট পেতে হয় কারণ তখন তাদের রোজগার থাকেনা। সেই জন্য পেটের জ্বালায় ফ্যান খেয়ে, জল খেয়েই দিন কাটাতে হয়।
বহ্নিকে নিয়ে পুষ্পিতার দুই চোখে অনেক স্বপ্ন। তাই বহুবাবুদের হাতে-পায়ে পড়ল কিন্তু কেউ বহ্নির পিতৃ পরিচয় দিতে রাজি হলো না। তখন পুষ্পিতা অনেক ঝড় ঝাপটা কটূক্তি অপমান সহ্য করেও বহ্নিকে স্কুলে ভর্তি করলো নিষিদ্ধপল্লির বাবু দত্ত নামে এক দালালের পিতৃ পরিচয়ে। তাই সে যখন তখন মাতাল হয়ে পুষ্পিতার কাছে এসে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো তার শরীরটাকে ছিঁড়ে ভুড়ে খেত। পুষ্পিতা দাঁতে দাঁত চেপে এইসব অত্যাচার অপমান সহ্য করত শুধু মেয়েটাকে ভাল ভাবে মানুষ করার জন্য। রাতে যখন বহ্নি মায়ের বন্ধ দরজার সামনে পড়তে বসতো তখন ভিতরের বাবুরা প্রচন্ডভাবে বিরক্ত হতেন। তাই মাসিরা পুষ্পিতাকে বলতো “এই পড়া পড়া ন্যাকামো না করে মেয়েকে ব্যবসায় নামা তাহলে দুটি পয়সার মুখ দেখতে পাবি।”প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে অপমানের যত বিষ পুষ্পিতা পান করত ততই তার হৃদয়ে মেয়েকে মানুষ করার আগুন দাউদাউ করে জ্বলতো। পরীক্ষার শেষে বহ্নি হঠাৎ করে মাকে জড়িয়ে ধরায় পুষ্পিতার সম্বিত ফিরল। সে বলল “পরীক্ষা কেমন হয়েছে সোনা?”বহ্নি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আনন্দে নাচতে নাচতে বলল “দারু….ন।”পুষ্পিতার চোখে জল চলে এলো।
বহ্নির ইচ্ছা সে প্রফেসার হয়ে ওর মতো অবহেলিত সন্তানদের সমাজের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই আপ্রাণ চেষ্টা করে সে যখন এমএসসি পড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল তখন তো সবাই অবাক, নিষিদ্ধপল্লির মেয়ে কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে? বহ্নি পল্লীর সকল বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করল । আর তাদের বোঝাতো তোরা সবাই ভালো করে পড়াশুনা করে স্বাবলম্বী হয়ে মায়েদের দুঃখ মোচন করার চেষ্টা কর। কখনো কোনো মাকে কাজের জন্য অপমান করবি না। তাদের সম্মান করবি। পল্লীর সবাই এখন পুষ্পিতাকে সম্মান করে । কারো কোন সমস্যা হলে বহ্নি ঝাঁপিয়ে পড়ে। এটা দেখে পুষ্পিতার হৃদয় গর্বে ভরে ওঠে।
আজ পুষ্পিতার জীবনের সবথেকে আনন্দের দিন কারণ তার মেয়ে বহ্নি নিজের পছন্দমত চাকরি পেয়েছে। তাই সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যত খুশির পুষ্পাঞ্জলী যেন পুষ্পিতার উপর ঝরে পড়ছে। এ যেন এক অন্য পুষ্পিতা, ভোরের সদ্যফোটা পদ্মের মতো নিষ্পাপ, রৌদ্রোজ্জ্বল, হাসিখুশি তার মুখ। তার হাস্যময়ী মুখমণ্ডল বুঝিয়ে দিচ্ছে সত্যি সে আজ তার জীবন যুদ্ধে বিজয়িনী। বহ্নি তার মা ও দিদাকে নিয়ে পল্লীর কাছাকাছি একটা ছোট্ট ঘর ভাড়া নেয়। সে যৎসামান্য টাকায় সংসার চালিয়ে বাকি টাকা দিয়ে পল্লীর যেসব মায়েরা সন্তানসম্ভাবা তাদের এবং শিশুদের খাবার কিনে দেয়। যাতে তারা অপুষ্টির শিকার না হয়। বহ্নি ছুটির দিনগুলিতেও বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শেখায় স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য।
অফিসে যাতায়াতের পথে বহ্নির আলাপ হলো ব্যাংকে চাকরিরত সূর্যের সঙ্গে। সদা স্মিত হাস্যময় সূর্য উচ্চ মানসিকতা সম্পন্ন উদার মনের মানুষ। তাই কিছুদিনের মধ্যেই সে বহ্নিকে বেশ ভালোবেসে ফেলল।বহ্নিও যে সূর্যকে পছন্দ করেনা তা নয় কিন্তু সে ধরা দেয়না। কারণ সে জানে এই সমাজের মানুষ তাকে কোনোদিনও মেনে নেবে না। হঠাৎ একদিন সূর্য বহ্নিকে বললো “আমরা দুজন কি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি না?” কথাটা শুনে বহ্নি চমকে উঠে বলল “আপনি আমার সম্বন্ধে সবকিছু জানলে এ কথাটা বলতে পারতেন না”। তাই অফিসের পরে তারা একটা কফিশপে বসে সূর্য বহ্নির সব কথা শুনল। তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলল “কাল সকালে ফোন করবো।”
কলিং বেলের শব্দে পুষ্পিতা দরজা খুলতেই বহ্নি কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে গেল।পুষ্পিতা লক্ষ করল বহ্নির মুখ ঘন তমসাচ্ছন্ন, চোখের কোনগুলি চিকচিক করছে। মায়ের মনে অজানা ঝড়ের আশঙ্কায় সমুদ্রের ঢেউয়ের মত তোলপাড় করতে লাগলো। টেনশনে তার হাত-পা যেন অসাড় হয়ে এলো।তাই হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেওয়া উৎকণ্ঠা নিয়ে কম্পিত হাতে এক কাপ কফি করে মেয়ের ঘরে গেল। ঘরে যেতেই বহ্নি মাকে জড়িয়ে তার বুকে মাথা দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল। পুষ্পিতা সস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত রেখে নীরবে ভাবতে লাগলো আমি জানি মা ,তোর বুকে কত যন্ত্রণা। প্রতি পদক্ষেপে স্কুলে ,কলেজে ,অফিসে এই সমাজের মানুষ তোর পরিচয়ের জন্য তোকে যন্ত্রণা থেকে যন্ত্রণাতর বিশ্বে ঠেলে ফেলে দেবে। এর জন্য দায়ী আমি। পুষ্পিতা বহ্নিকে বলল”নীরবতারও যে বড় কঠিন মর্মস্পর্শী ভাষা আছে সেটা আমি মা হয়ে মর্মে-মর্মে অনুভব করতে পারছি।
সারা রাত মা মেয়ে দুচোখের পাতা এক করতে পারলো না। ভোরের দিকে একটু চোখটা লেগে আসে। হঠাৎ ফোনের শব্দে বহ্নি তড়িৎ গতিতে ফোনটা ধরতেই সূর্য বলল “মাই সুইট হার্ট,আজ বিকালে চারটের সময় মা-বাবার সঙ্গে আমি তোমাদের বাড়ি যাবো।” কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে। বহ্নির মন আনন্দে ময়ূরের মতো নেচে উঠলো। সে একটু বেশি জোরেই মাকে ডাকতে লাগলো। পুষ্পিতা মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে এবং তার রৌদ্রোজ্জ্বল মুখ দেখে বুঝতে পারল রাতের ভয়াবহ অন্ধকার কেটে নতুন সূর্য উঠেছে।
যথাসময়ে সূর্যরা আসতেই পুষ্পিতা সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের ঘরে নিয়ে বসালো । সূর্যের মা অরুনিমা দেবী ঘরে ঢুকেই চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন ঘরটা ছোট হলেও ভীষণ সুন্দর করে রুচিসম্মতভাবে সাজানো। অরুনিমা দেবী পুষ্পিতাকে বললেন দিদি আপনিও বসুন আমাদের পাশে। তারপর মিষ্টি হাতে নিয়ে বহ্নি ঘরে ঢুকলো। সূর্যের মা বহ্নির হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বললেন “সত্যি আমার ছেলের চয়েজ আছে। ভারী মিষ্টি দেখতে তোমায় মা।”তারপর তিনি একজোড়া বালা বহ্নির হাতে পরিয়ে দিলেন। সেটা দেখে পুষ্পিতা বলল দিদি আপনি আমাদের সম্বন্ধে….সঙ্গে সঙ্গে অরুনিমা দেবী বাধা দিয়ে বললেন,”সব শুনেছি। আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই।”আমি ঘরের লক্ষী নিতে এসেছি । তার জন্ম পরিচয় দিয়ে কি হবে? সূর্য আমাদের দত্তক নেওয়া সন্তান। আমি সন্তানহীনা মা একটা সন্তান পেয়েছি। তার জন্ম পরিচয় আমরা একবারও কি জানতে চেয়েছি? সব থেকে বড় কথা আমি “মা” হয়েছি। আমার সূর্য মানুষের মত মানুষ হয়েছে এটাই কি যথেষ্ট নয়? আচ্ছা বলুনতো, আমরা যখন ঠাকুর কিনি সেটা কোথাকার মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে ,কে সেটা তৈরি করেছে, আমরা কি এক বারও জিজ্ঞাসা করি? তাহলে ছেলে মেয়ের বংশ পরিচয় কেন চাই? তাদের আসল পরিচয় হলো শিক্ষা-দীক্ষা,ব্যবহার,উচ্চ মানসিকতা প্রভৃতি। আমি সূর্যের মুখে শুনেছি এর প্রত্যেকটা গুনই আমার বহ্নি মায়ের মধ্যে আছে ,বলে তিনি বহ্নিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর একটা শুভ দিন দেখে বহ্নি ও সূর্যের বিবাহ দিলেন।
বৌভাতের দিন সুর্যের মা সবাইকে হাতজোড় করে বললেন,”আমি জানি এরপর আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজের অনেকেই বলবেন বহ্নি বারবণিতার সন্তান। কিন্তু কোন মেয়েই স্বইচ্ছায় বারবনিতা হয়না। আমাদের সমাজে কিছু লালসা যুক্ত, বিকার গ্রস্ত, স্বার্থান্বেষী, অর্থ পিপাসু নরাধম আছে যারা প্রানবন্ত, সরল সাদাসিধে, নিষ্পাপ বালিকাদের বিভিন্ন উপায়ে তাদের জালে ফাঁসিয়ে এই নরকের মধ্যে টেনে এনে টাকার বিনিময় তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। একবার এই নরকে প্রবেশ করলে শত চেষ্টাতেও তাদের পক্ষে এই নরকের ইন্দ্রজাল ভেদ করে বেরোনো সম্ভব হয়না। কিন্তু যদি কেউ এই অসম্ভবকে সম্ভব করে, তাহলে আমরা যেন তাকে সমাজে স্থান দেই। আসুন না আমরা সবাই আমাদের মনের দরজা জানলা গুলো খুলে দেই। যাতে হোমের বহ্নিশিখায় এবং ভোরের সূর্যের আলোক রশ্মিতে আমাদের মনের যত কালিমা সব ধুয়ে মুছে যাক।”এসব কথা শুনে পুষ্পিতা আর তার চোখের জল সামলাতে পারল না । অবুজ শিশুর মতো ঝরঝর করে কাঁদতে লাগল।
–~০০০XX০০০~–