অবয়বের আড়ালে
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
(১)
শরৎআকাশ আজকাল তাহার রৌদ্রজ্জ্বল প্রভাটির কথা ভুলিয়া কিছুদিন হল মুখটি লুকাইয়া আছে। যদিচ বর্ষণধারার এই প্রাবল্য গঙ্গাবিধৌত পূর্বদেশে বিরল নহে, তথাপি শ্রাবণের দিনযাপনের সময়সীমা যে পক্ষকাল পূর্বেই গত হইয়াছে তাহা আজিকার আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিলে গগনবিহারী অতি কল্পনাবিলাসী কবি’টির পক্ষেও এক অলীক সংশয়ের জন্ম দিবে।
……..
গৌড়দেশে সর্বদা এই মেঘ ও রৌদ্রের বপ্রক্রীড়ার আয়োজনটি শাহী হিন্দুস্তানের অন্য প্রদেশগুলির মত নহে। উত্তরাপথে প্রখর গ্রীষ্মের তপঃশ্চর্যার গম্ভীর তাপপ্রবাহ যদিচ অতীব প্রাসঙ্গিক, তবুও সেই দমবন্ধকর বায়ুমন্ডলের প্রভাবটি গৌড়দেশের ভৌগলিক অবস্থানটি যেহেতু পানিপথের অপর প্রান্তে, সেজন্য বড় একটা খাটে না।
অবাক লাগে যখন সমগ্র দেশের আবহাওয়া তাহার প্রাবল্য ও উষ্ণতাটিকে রাজনীতির নিগঢ়ে আনিয়া সেই উত্তপ্ত বাতাবরণটিকেই ইন্ধন যোগাইতে দেখা যায় তখন গৌড়বঙ্গে মেঘমল্লার রাগে চপলা বর্ষাসুন্দরী তাহার পেলব নূপুরনিক্কণে সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্যটি নাচিয়া চলিয়া যায়।
এক্ষণে স্বয়ং দিল্লীশ্বর আকবর মরুপ্রদেশীয় বীর রাজপুতদিগের সহিত বিবাহের দ্বারা মিত্রতাজোট বৃদ্ধি করিতে ব্যস্ত বলিয়া তিনি তাঁহার একনিষ্ঠ পার্ষদ টোডরমল্লকে আদেশ করিয়াছেন যেন তিনি গাঙ্গেয় উপত্যকার অধীনস্ত সুবাহ্ গুলিতে একজন করিয়া বশংবদ ও সমরপটু ” সুবাহ্দার” নিযুক্ত রাখিয়া আপাতত শাসনভার সামলাইয়া রাখেন।
……….
গৌড়দেশ আসলে কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল।
তাই এখানে লোকে কৃষি ও মৎস্য আহরণে পটু বলিয়া সেভাবে খাদ্যাভাব উত্তরাপথের মত তেমন একটা এইখানে দেখিতে পাওয়া যায়না। সাধারণ লোকে সুখ দুঃখে ও শান্তিতে আপাতভাবে কালাতিপাত করিয়া থাকে।
সম্রাটের আদেশে একদল শাহী ফৌজ এখন সদলবলে রাজমহলের পথ পশ্চাতে ফেলিয়া ক্রমে দিল্লীর দিকে প্রত্যাগমন করিতেছে।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে তাহাদের সেনানায়কটি কিন্তু যবন নহে। সে একজন “বঙ্গালী”! তাহার নাম বিষ্ণুপাল। কুম্ভকার জাতির এই যুবকটি স্বধর্মের মৃৎপুত্তলীর ব্যবসা ছাড়িয়া বর্তমানে মোগল রাজসভায় অসিচালনায় পটু ও সমরকুশলী বীর বলিয়া বেশ খ্যাত।
ভাগ্যাণ্বেষণের অমসৃণ পথ ধরিয়া তাহার মত একজন সৎ ও সদালাপী এক যুবা সম্রাটের সেনাদলে কি করে যে আসিয়া পড়িল তাহা যেন সত্যই বিস্ময়কর!
……….
বৈশাখ মাসের কিছু পর হইতে একজন সদ্য বিধর্মী হিন্দু ফৌজদার হঠাৎ দিল্লীশ্বরকেও চিন্তায় ফেলিয়া দিয়াছিল। তখন তাঁহারা সেই তরুণ সেনানায়ক বিষ্ণুপালের পরামর্শে অতি দূর্নিবার সেই ফৌজদার কালাপাহাড়ে’ র জয়রথটিকে থামাইতে অগত্যা জোট বাঁধিয়াছিলেন। সিন্দুরীর রাজা ঠাকুর কালীদাস রায়, সাঁতোরের রাজপুত্র গদাধর সান্যাল ও দিনাজপুরের রাজভ্রাতা গোপীকান্ত রায়ের সহিত আসিলেন তাহেরপুর পরগণার ভুস্বামী কংসনারায়ণ। ইঁহারা সকলে সম্মলিত হওয়ার পরে সেনাধ্যক্ষ বিষ্ণুপাল একান্তে সম্রাটকে জানাইলেন, যে মূলতঃ পাঠান শাসনের দূর্লক্ষণ হেতু নবাবের সেনাপতি কালাপাহাড় এই অত্যাচার চালাইতেছে। আর তাহার বিক্রমের ফলেই ইদানীংকালে গৌড়ভূমির বহু দেবালয় আজ বিনষ্ট হইয়া যাওয়ায় তাহার দেবমূর্তিগুলি ভূলুন্ঠিত ও ভঙ্গুর হইয়া গিয়াছে। একইসাথে অপশাসনের প্রাদূর্ভাবহেত সুজলা সুফলা-শস্যশ্যামলা গৌড়দেশে এখন প্রবল অন্নাভাব ও তাহার যাবতীয় দূর্লক্ষণগুলিও ক্রমে বড় প্রকট হইয়া উঠিতেছে।
বিষ্ণুপাল তখন সম্রাটের সমর্থন লাভ করিয়া গোপনে সৈন্য প্রেরণ করিয়া কালাপাহাড় বিরোধী ক্ষুব্ধ রাজপুরুষদিগকে একজোট হইতে প্রভূত সাহায্য করিলেন । মোগলফৌজ আসিয়া তাহাদের সংকল্পটিকে আরো দৃঢ় করিল।
এদিকে নবাব সুলেমান কররানির মৃত্যুর পর তখন বাংলার তৎকালীন নবাব হইয়া তাহার পুত্র দাউদ খাঁ তখন সবে গদীতে আসিয়া বসিয়াছেন। এক্ষণে মোগল ফৌজের সহিত ঠাকুর কালীদাস রায়, গদাধর সান্যাল, গোপীকান্ত রায়ের সাথে কংসনারায়ণ এর মিলিত সৈন্যবাহিনী একত্রে নবাবের এই লোকবলকে আক্রমণ করিলে এক ভয়াবহ যুদ্ধের পর কালাপাহাড়ের ভবলীলা সাঙ্গ হইল।
এইভাবে বিষ্ণুপাল তাঁহার বুদ্ধিমত্তায় ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজমহলের নিকটে তাহাদের সম্মিলিত বাহিনীর হস্তে পরাজিত করিয়া নিজে শেষমেশ হত্যা করিলেন কররানির পুত্র দাউদ খাঁ’কে । অতঃপর এই সুযোগে তাহার বশংবদ রাজপুরুষ মুনেম খাঁ কে সিংহাসনচ্যূত করিয়া গৌড়ের সিংহাসনে অবশেষে অধিষ্ঠিত হইলেন মহারাজা কংসনারায়ণ রায় । তখন বাঙ্গালায় পুনরায় শান্তি ফিরিয়া আসিল বটে কিন্তু সে ইতিহাসের পাতায় আজ আর বিষ্ণুপালের নাম কেহ মনে রাখিল না।
……..
আমাদের কাহিনীর সূত্রপাত কংসনারায়ণের গৌড়ের সিংহাসন আরোহণের অব্যবহিতকাল পরে যখন সৈন্যদল সবে দিল্লী অভিমুখে প্রত্যাবর্তন করিতেছে সেই সময়কার।
বিষ্ণুপাল যে একদা তাহেরপুর পরগণারই জাতক তাহা সে আর কাউকে জানিতে দেয় নেই। তাহার অষ্টাদশ বৎসর বয়সে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় তাহাদের গ্রামটির সাথে সাথে তাহার নিরুপদ্রব কুসুমিত মনটিও ভাসিয়া যায়। তখন সে সর্বস্ব হারাইয়া একজন আউলিয়া ফকিরের সাহায্যে কোনওমতে দিল্লী আসিয়া পুনরায় জীবনাচারণের স্বপ্ন দেখিতে বসে। এই দূর্যোগে শুধু সে তাহার পিতা-মাতা-পরিজনকে হারায় নাই সে একান্ত প্রাণপ্রিয়া কৌশানীকেও এই ডামাডোলের বাজারে হারাইয়া ফেলিয়াছিল।
আজ যখন জ্যোৎস্না পুলকিত নিশীথ অম্বর আগ্রায় বহতা যমুনার উপরে মায়াবলোকন করিয়া যায় তখন নিভৃতে সে তার বিগতজীবনের প্রিয়ার কথা ভাবিয়া এখনও কষ্ট পাইয়া থাকে। যদিও আজ সে একজন প্রতিষ্ঠিত সমরনায়ক ও স্বয়ং আকবরের দেহরক্ষী, কিন্তু সে একদা যখন সে মৃৎপাত্র ও মাটির পুতুল বানাইয়া কৌশানীর বিস্মিত চক্ষু’র দৃষ্টিপাতে হৃদয়াবেগে একেবারে স্বয়ং রাজা হইয়া উঠিত, তখন তাহার সেই আনন্দের কথা কি আর আজ কাউকে বলিয়া বুঝানো যায়!
(২)
গৌড়ের সাম্প্রতিক নবাব দাউদ খাঁ’র হারেমে সাতান্ন জন লুন্ঠিতা রমণী ছিল। তাহাদের মধ্যে একজনের নাম নূরউন্নিসা। তবে ইহা তাহার পিতৃদত্ত নাম নহে। সে একজন নামী “তওয়াএফ ” জীবিকার নারী। দাউদ খাঁ যৌবনের প্রারম্ভেই বড় ইন্দ্রিয়াসক্ত হইয়া উঠিয়াছিল বলিয়া তাহার রাজ্যে এইরূপ জেনানাকে পর- নিবৃত্তিতে না রাখিয়া সে প্রলুব্ধ ও হীনবুদ্ধি হইয়া নূরউন্নিসাকে শেষমেশ তাহার হারেমে উঠাইয়া আনে। তবে অকস্মাৎ তাহার মৃত্যুটি আর নূরউন্নিসাকে আর তাহার মুথা-বেগম হইয়া উঠিতে দেয় নাই। বস্তুত দাউদের অকাল- মৃত্যু সাথে সাথে এইরূপ সাতান্নজন প্রমীলাদিগের ভাগ্যটিকেও আজ বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলিয়া দিয়াছে।
মোগল সেনাদল সম্প্রতি যুদ্ধজয়ের উল্লাসে পারিতোষিক হিসাবে দাউদের হারেমটিকেও স্বমহিমায় তাহাদের উৎসর্জনের কাজে লাগাইয়াছিল। তাহারা এখন বিজেতা বলিয়া নারীমাংসের এই সামান্য উপঢৌকনটি তাহাদের জন্য অবশ্যবিধেয় বলিয়া সেকালে সকলেই মানিত। তবে সেনাধ্যক্ষ বিষ্ণুপাল এমত ব্যবহারে অতটাও উদগ্র নহে। রাত্রে সে শিবিকার গবাক্ষ পথে এক সুন্দরীকে দেখিল বটে, কিন্তু সেই ভ্রূবিলাসিনী রমণী যে তাহাদের লবজে “বঙ্গালন্ ছোঁড়ি” তাহা অবশ্য সে তখন সেইভাবে বুঝিল না।
…….
কিন্তু স্বয়ং মনসিজ যেখানে মৌরুসীপাট্টা জমাইয়া রাখিয়াছেন সেখানে মনোবিকলন অতীব স্বাভাবিক ও সম্ভাব্য। দিল্লীর পথে সসৈন্যে ফিরিবার আগের রাত্রে নূরউন্নিসা তাহার ভাগ্যবিপর্যয়ের সমাপনের আশায় সেনাধ্যক্ষ বিষ্ণুপালের শিবিকায় নতমস্তকে প্রবেশ করিল।
……..
শিবিকামধ্যে মৃদু দীপালোকে বিষ্ণুপাল এতক্ষণে শুধু নূরউন্নিসা বেগমকেই কেবল দেখিলনা, সে আজ হইতে দ্বাদশবৎসর পূর্বের তাহার লুপ্তজীবনচর্যার একটি প্রতীকস্বরূপ একখানি মোহময়ী তিলটিও সে এক্ষণে নূরউন্নিসার গ্রীবাদেশে দেখিতে পাইল।
ইহার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। যদিচ এই চিহ্নটিকেই এতকাল ধরিয়া যে সে আপন হৃদিপদ্মে ধারণ করিয়া আছে সে বিষয়ে তাহার আজ আর কোনও সংশয় নাই। সে বুঝিল যে নারীটিকে এইকারণেই তাহার বড় অতিপরিচিত লাগিয়াছিল। সে আর কেহই নহে ; এ যে তার পূর্বপ্রণয়ী কৌশানী!
নূরউন্নিসা প্রথমে তাহাকে চিনিতে পারে নাই। তবুও অস্ফূট স্বরে বিষ্ণুপাল যখন তাহার কন্ঠে ” কৌশানী ” নামটি উচ্চারণ করিল তখন সেই আহ্বান যেন বহুদিনের বিস্মৃতির জাল কাটিয়া নূরউন্নিসার শ্রবণযন্ত্রে আসিয়া বীণার মত সুরশ্রাবে বাজিয়া উঠিল। বিষ্ণুপাল সস্নেহে চক্ষু মুদিয়া তাহাকে কাছে ডাকিয়া আনিল ও তাহার কানে কানে পুনরায় অস্ফূটস্বরে কহিল
” কৌশানী!”
……..
তবে আমাদের এই কাহিনীটি এতটাও সহজসরল নহে। তবে বিষ্ণুপাল যে কৌশানীর দেখা পাইল সে কথা অবশ্য সত্য। তবে আজ তাহার কৌশানী মরিয়াই যে নূরউন্নিসাতে উদ্ভাসিতা ও সে যে সমাজের চোখে একজন বহুভোগ্যা ও পতিতা নারীমাত্র তাহাও কি বিস্মৃতির?
তাহাদের সেই পূর্বেকার প্রণয়কুসুমের অর্ঘ্যটি এতদিনে হাতে পাইল বটে তবে তাহারা নিজেরাও সেটিকে প্রাণভরে আর গ্রহণ করিতে পারিল না। ইহা সত্যই বড়ো বেদনার।
তাহাদের প্রণয়ের স্মৃতি আজ ঈষৎ আবেগাপ্লূত আসঙ্গাভিলাষের পরিশেষে কেবল কান্না ও বিচ্ছেদের রূপ লইয়া তাহাদের সামনে আসিয়া কেবল দাঁড়াইয়া রহিল।
সেখানে তাহাদের ভাগ্যে বিরহের বাস্তবিক বিস্বাদটি তাহাদের প্রতীক্ষার পরিসমাপ্তির পথে কন্টকসম হইয়া উভয়কেই বিষম যন্ত্রণা দিতে লাগিল।
………
দিল্লী প্রত্যাবর্তনের পূর্বে অতি প্রত্যূষে বিষ্ণুপাল একবার কংসনারায়ণের সদ্য দখলিত এক দূর্গে তাহাদের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য গিয়াছিল। বহু বিষয়ে মনোগ্রাহী আলাপ-আলোচনার পর যখন সে সবে দূর্গের অলিন্দের চৌকাঠ পার হইয়াছে, সে দেখিল এক বৃদ্ধ কুম্ভকার একতাল মৃত্তিকা সহযোগে কিসের যেন একটা মূর্তি নির্মাণ করিতেছে।
তাহাকে বিস্মিত হইতে দেখিয়া জনৈক রাজকর্মচারী আসিয়া বিষ্ণুপালকে কহিল যে সিদ্ধতান্ত্রিক রমেশ শাস্ত্রীর বিধান অনুযায়ী মহারাজ শাস্ত্রানুমোদিত দুর্গোৎসব করিতে ইচ্ছুক। সেজন্য দেবীপক্ষে এই পরিবারসমন্বিতা প্রতিমা প্রবর্তন করিয়া পূজার আয়োজন।
মহাদেবীর অকালবোধন করিয়া ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র একদা যেমন তাঁহার আরাধনা করিয়াছিলেন, এতকাল পড়ে তাহাই শ্রীমন্মহারাজ কর্তৃক এই দেশে তাহাই পুনরায় শুরু হইতেছে।
বিষ্ণুপাল যদিও মৃত্তিকার স্তুপ হইতে সম্ভাব্য দেবীমূর্তির দেহলক্ষণ ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিল না বটে তবে সশ্রদ্ধ চিত্তে ওই পবিত্র মৃত্তিকার স্তুপ হইতে সামান্য অংশ অঙ্গুলিতে লইয়া কপালে বড় করিয়া তিলক আঁকিল আর মনে মনে স্তব করিয়া দেবভাষায় আবৃত্তি করিয়া উঠিল,
” ত্বং বৈ প্রসন্না ভুবি মুক্তি হেতুঃ ।
বিদ্যাঃ সমস্তা স্তব দেবী ভেদাঃ
স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলা জগতসু।
ত্বয়ৈকয়া পূরিতমম্ বয়ৈতৎ
কা তে স্তুতিঃ স্তব্যপরা পরোক্তিঃ ।
সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তি প্রদায়িনী ।
ত্বং স্ত্ততা স্ত্ততয়ে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ ।
সর্বস্য বুদ্ধি রূপেণ জনস্য হৃদি সংস্থিতে ।
স্বর্গাপ বর্গদে দেবী নারায়ণি নমোহস্তু তে ।।”
…….
আজি হইতে প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বেকার এই ঘটনাটি কেহ আর স্মরণে রাখিতে পারিবে না তবুও মহাকালের অলঙ্ঘনীয় স্মৃতিপটে রহিবে যে সেদিন বিষ্ণুপাল তিলক আঁকিবার সময় তাহার বটুয়া হইতে সামান্য মাটি লইয়া ওই স্তুপে মিশাইয়া দিয়াছিল। সে জানিত তন্ত্রশাস্ত্রের ‘গুপ্তসাধনা’ তন্ত্রের ১.১২-তে নবকন্যার বিবরণে আছে যে বিশেষ প্রকার নয়টি মাতৃকা হইতে প্রাপ্ত মৃত্তিকার সমণ্বয়ে আরাধ্যা দেবীমূর্তিটি গড়িতে হয়। আর তাহারা হইল,
১) নর্তকী/অভিনেত্রী, ২)কাপালিক, ৩)পতিতা, ৪) ধোপানী, ৫)নাপিতানী, ৬) ব্রাহ্মণী, ৭) শুদ্রাণী, ৮)গোয়ালিনী এবং ৯)মালিনী!
তাহার বিশ্বাস এই যে সকল ভিন্ন রমণীদের থেকে সংগৃহীত মৃত্তিকার মধ্যে তাহার কৌশানী তথা নূরউন্নিসার বাসগৃহের মাটিটিও একীভূত হইয়া রহিয়া যাইবে।
সে জ্ঞানত এই কাজটি সেদিন সম্পন্ন করিয়া বড় প্রীত হইল।নিতান্ত ভাগ্যদোষে যে রমণীকে সে ঈপ্সিত মর্যাদায় আর কখনোই পাইতে পারিবে না আজ তাহার এই সামান্য পদরেণু সংযোগে নির্মিত মহাদেবীর অঙ্গসৌন্দর্য্যের মহাপূণ্যধন আসিয়া কোনও না কোনও জন্মান্তরে তাহাদের এই ত্যাগ করে আসা কাঙ্খিত মিলনাবেশকে একদিন ঠিক স্বীকৃতি দিবেই।
……সমাপ্ত……