সেবা
কিশোর বিশ্বাস
এ বছর যখন করোনার মহামারি আরম্ভ হয়ে গেছে, পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোক মারা পড়ছে,কি ধনী কি গরীব, কি উন্নত কি অনুন্নত দেশ সবার সব প্রতিরোধ বালির বাঁধের মত ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে, কি বিগ্গান কি প্রযুক্তি সব বানের জলের মত ভেসে যাচ্ছে।বিগ্গানীরা আহার নিদ্রা ত্যাগ করে রাত দিন এক করে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু প্রতিরোধের উপায় বের করতে পারছেন না।রোগ ঝড়ের বেগে গ্রামকে গ্রাম শহর কে শহর উজাড় করে দিচ্ছে। আপন জন হারানোর দুঃখে চোখের জলের নদী বয়ে যাচ্ছে।
তখন অমৃতেন্দুর ও করোনা হলো প্রথমে জ্বর, গলা ব্যথা,খুস খুসে কাশি। করোনা টেস্ট পজেটিভ এলো।বাড়ির লোকেরা ভয় পেয়ে এম্বুলেন্স খোঁজা শুরু করল কিন্তু কেহ করোনার রোগীকে তুলতে রাজি নয়,শেষে একজন রাজি হলো ষোল কিলোমিটারে তাকে বত্রিশ হাজার টাকা দিতে হবে।সোনাদানা বিক্রি করে বাড়ির লোকরা তাতেই রাজি হয়ে গেল। এম্বুলেন্স সাগর দত্ত হসপিটালের সামনে ফেলে রেখে চলে চলে গেল কিন্তু সিটের বড়ো আকাল।এক অচেনা সিস্টারের সহায়তায় কোন মতে ভর্তি হলো।পরে জেনেছিল তার বাবা নাকি অমৃতেন্দুর মত দেখতে ছিলেন তবে তিনি বছর তিনেক পূর্বে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।মেয়েটি তখনও চাকরি পায়নি। মেয়েটির বয়সই বা কত, এই বছর পঁচিশ হবে।
এদিকে অমৃতেন্দুর অবস্হা অতি দ্রুত খারাপ হতে থাকলো, ওদিকে মেয়েটি বাবাকে সেবা না করতে পারার দুঃখ তাকে সেবা করে পূরণ করে নিতে চাইল। আরম্ভ করল সুস্থ করার লড়াই কিন্তু তাদের পি পি ই নেই, আছে ছেঁড়া রেইন কোট, N95 মাস্ক নেই আছে অতি সাধারণ কাপড়ের মাস্ক।তবুও সে সেবার জোরে, মনের জোরে, শ্রদ্ধার জোরে জিতে গেল।তার প্রচেস্টায় অমৃতেন্দু পনের দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে উঠলো। কিন্তু সেই কালান্তর রোগে আক্রান্ত হলো সেই মেয়েটি। বাবার মত দেখতে একজনের সেবার পুরস্কার স্বরূপ সে পেটে পাঁচ মাসের বাচ্চা নিয়ে চলে চলে গেল না ফেরার দেশে।
–~০০০Xসমাপ্তX০০০~–