// বর্ষবরণ //
✍ অনিমেষ
চৈতি রাতের শেষে
সময়ের কোল থেকে
টুপ করে খসে পড়ে গেল
একটা বছর।
ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে
তারিখের ঘর মেপে
এক্কাদোক্কা খেলা
একটা গোটা বছর।
অকাল মৃত্যু, নক্ষত্র পতন,
পরিযায়ী, সাধু-চোর,
রাজা-রাণীর গল্পে ভেজা
জরাজীর্ণ একটা বছর।
পেয়ালা পিরিচ আর চায়ের
কেতলির সুরে সুর মিলিয়ে
বসন্ত দূত জানিয়েছে
ঝরা পাতার শেষে
শুকনো ডালে যখন
আবার ফুলের আগুন লাগবে,
বাতাসে ফাগ উড়বে,
তখন সে আবার ফিরবে
গানের ডালি সাজিয়ে
মন ভরাতে।
আমি সেই অপেক্ষায় রইলাম।
আকাশের বুক চিরে
উঁকি দেওয়া রাঙা রোদ
অবাক চোখে দেখে
বেল জুঁই গন্ধরাজের
সুবাসের মোড়কে
সময়ের গর্ভজাত
এক ফুটফুটে শিশু,
যার নাম চোদ্দশো আঠাশ।
বয়স তখন তার
ঘণ্টা খানেক পার।
খবর ছড়ায় নতুন সকাল
বৈশাখী ঐ হাওয়ার বেগে
কাঁচা মিঠে আমের স্বাদে
সাড়া জাগে দিকে দিকে
আজ নববর্ষ।
যত পুরনো যা কিছু বিষাদ
ঘুচিয়ে দিয়ে সব অবসাদ
নতুন আশায় নতুন দিশায়
মনে প্রাণে নতুনের স্পর্শ।
ঘর দুয়ার নিকিয়ে
উঠোন সাজে আলপনায়,
ব্যবসায়ী দোকান সাজায়
মঙ্গলঘটে চন্দনে, ফুল মালায়।
হালুইকরের ভিয়েনে পাক
মাছ মাংসের গলা কাটা হাঁক,
দোকানে বাজারে ভিড় বাড়ে
ক্রেতার থলির হাঁ-মুখ বাড়ে,
ঘরে ঘরে ভোজের পাত পড়ে ।
চা পান তামাকে বিকেল যায়
মজলিসে বৈঠকি আড্ডায়।
অবশেষে সন্ধ্যা যখন
জোড়হস্ত দোকানির আপ্যায়ন,
সপরিবারে বাবু বিবি হেঁটে যান,
ক্যালেন্ডার ও প্যাকেট কালেকশন,
হৈচৈ জমজমাট ব্যস্ততা,
আজ বছর পয়লা,
বাঙালির হালখাতা।
–~০০০XX০০০~–