অবতরণিকা
✍ ফৈয়াজ আহমেদ ফৈয়াজ
স্বপ্ন পাল্টে যেতে কেমন কম সময় লাগে। বোঝাই যায় না, মানুষটি পাল্টে যাচ্ছে না তার স্বপ্নগুলো। গভীর জ্ঞানের কথা আমি বলতে জানি না,নিজের ঘটেই নেই, তাই। কিন্তু আজকে যার পিছনে দৌড়াচ্ছি, যেটাকে পাখির চোখ করে বিসর্জন দিয়েছি বাকি সব কিছু, সেটা কি আদতেই সেই devotion সেই কমিটমেন্ট এর লায়েক? কদিন বাদেই মনে হবে না, শুধু শুধুই দৌড়ে গেলাম, আদতেই আমি ওটা চাইনি?
যখন ছোট ছিলুম, আর্থিক কষ্ট তখন চরমে, বাবার একটার পর একটা ব্যবসা ফেল করার পর, রেশনের চালের ভাত আর আলু সেদ্ধ, পুকুর পাড়ের সমস্ত edible পাতা, সজনে পাতার ভর্তা খেয়ে ইস্কুল যেতুম, তখন মনে হত, একদিন আমার কাছে অনেক টাকা হবে, সেদিন ইচ্ছা গেলেই বিরিয়ানি কিনে ফেলবো মূহুর্ত্তের ইচ্ছায়, মিষ্টি দই কিনে খেয়ে ফেলব এক হাঁড়ি (বাড়ন্ত বয়সে এমন রাক্ষুসে খিদেই লাগে) বা কোল্ড ড্রিংকস, যা তখন শুধু পেতুম ধনী আত্মীয়দের বাসায়, কিনে গটগট করে গিলে আহহ বলবো ঠিক যেভাবে বিজ্ঞাপণে দেখায়।
আজ আমার কাছে সে টাকা আছে, ঈশ্বর দয়াবান, কিন্তু সে ইচ্ছাগুলো আর নেই। জোর করেও সে তমন্নাগুলো আর ফিরে আসে না। এখন মনে হয়, যা সাহীন বানাচ্ছে,যা এখনো মা রান্না করছেন, সেগুলোই একদম ঠিক আছে।
আরো যখন বড় হলুম, পৌরুষ ও যৌনচেতনা জাগ্রত হলো, মনে হত, সুন্দরীদের আনাগোনা থাকবে চারপাশে, সর্বদা। ঠিক, আবারো, বিজ্ঞাপণের মতো, তারা আমার জন্য পাগল হয়ে থাকবে। আমি সে দিওয়ানগী মন ভরে উপভোগ করবো, হাজারো সুন্দরী আমার জন্য পাগল, এই বোধটুকুই চরম তৃপ্তি দেবে। সে সুযোগ যে আসেনি তা নয়, এককালে আমার টাকেও চুল ছিল, যৌবনে তো ঘটোৎকচকেও খাপসুরত লেগেছিল নিশ্চয়, কমসেকম সে নিজে যখন নিজেকে, সে যুগে আয়না ছিল কি না জানি না বা রাক্ষসে আয়না ব্যবহার করত কি না জানি না, পুকুরে বা নদীর জলে দেখতো।
এখন, সারাদিন আর অর্ধেক রাত কাজ করার পর, মন ফিরে যেতে চায় সে চেনা স্পর্শের কাছে,যে আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমার প্যানপ্যানে জীবনের ভ্যানতারা শোনার থেকে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, আমি জানি। কিন্তু, হয়তো এটা আপনারও গল্প। হয়তো আপনি স্বপ্ন অন্য দেখেছিলেন, কিন্তু সেই স্বপ্নগুলোর দিকে পিছু ফিরে চাইলে, হয়তো আপনারও নিজের বোকামিতে, সারল্যে হাসি পায়। কি যে বোকা ছিলুম আমি, আপনিও নিভৃতে বলে ওঠেন। কিন্তু আমার ওই স্বপ্নগুলোর মতোই, আপনার সেই স্বপ্নগুলোও আপনাকে দৌড় খাটিয়েছে, রাতে জাগিয়েছে। এখন, যখন আপনি আমি চালাক, বুদ্ধিমান, বোধসম্পন্ন, mature হয়ে গেছি, এখন ওগুলো নিয়ে হাসি পাওয়াই স্বাভাবিক।
তবে সাধু সাবধান। এই গল্পে শুধু একটাই ফাঁদ। যখন আমি যা ইচ্ছা তাই খাবার সামর্থ্য রাখার স্বপ্ন দেখতুম, তখন ঐটি আমার সর্বস্ব ছিল, যখন নারীর স্বপ্ন দেখতাম তদ্দিনে খাবার কেনার সামর্থ্যের স্বপ্ন হাস্যকর হয়ে গেছে। তারপর, এখন, যখন আমার স্বপ্ন আবার পাল্টে গেছে, তখন ওই অগণিত সুন্দরীদের সাহচর্য্যের স্বপ্ন হাস্যকর হয়ে গেছে। এই নিয়মেই, আজ থেকে দশ বছর পর, যদি তদ্দিন টিকে থাকি, এখনের স্বপ্নও হাস্যকর হয়ে যাবে।
তাহলে কি আপনি আমি সারা জীবন হাস্যকর স্বপ্নের পিছনেই দৌড়ে বেড়াই?
–~০০০XX০০০~–