হাবিজাবিকথা
✍ বৈশাখী রায়
কখনও কখনও ভীষণ ভীষণ ভীষণ হিংসে পায় জানেন! গলা থেকে বুকের মাঝ বরাবর অবধি জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যায় একদম। কলজের ঠিক মাঝখানটায় তুষের আগুন জ্বলে অহর্নিশ। মনে হয় আঁচড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে দি দয়িতকে বা হাতের নীলচে শিরাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র আক্রোশে চালিয়ে দি ধারালো একটা ব্লেড। একপোঁচ, দুইপোঁচ, বা তিনপোঁচ।
কখনও বরং চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে ঘন্টার পর ঘন্টা। জানালার পর্দা ফেলা, আবছা অন্ধকারে ভেসে বেড়ায় অতীতচারী বেহায়া স্বপ্নগুলো, মরণ হয় না ওদের? লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে এখনও হানা দেয় কেনো? ওরা কি জানে না এখানের স্বপ্নের প্রবেশ নিষেধ।
মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো মনে হয় নিজেকে। কথা জড়িয়ে যায়, মাথার মধ্যে প্রবল ঝিমভাব! যে মানুষটা অ্যালকোহলের গন্ধে বমি করে দ্যায়, তাকে কি সবটা ভুলতে গেলে আরেক জন্ম নিতে হবে গো শরৎবাবু?
কানের কাছে কে যেন অবিরত বলতে থাকে,
“বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি…. ধর্মং শরণং গচ্ছামি…..”
ভরাট, উদাত্ত এক কন্ঠস্বর, সেই আকর্ষণ বড়োই অমোঘ। জাগতিক আয় ব্যয়, পাওয়া না পাওয়া গুলিয়ে যায় কিছুক্ষণ। কিন্তু তারপরেই মনে পড়ে….
ব্যালকনির দোপাটি গাছগুলোয় জল কে দেবে?
মিনি বিড়ালটা রোজ এসে বসে থাকে যে, এঁটো সকড়ি কাঁটাগুলোর জন্য!
ঢ্যাং ঢ্যাং করতে করতে স্বর্গে চলে যাওয়া মানুষটার ফটোটাই বা মুছবে কে?
আর, আর, পুরুষটিকে ভাতই বা কে বেড়ে দেবে? সে যে আজও নিজে নিয়ে খায়না কিছুই….
ছাড়া যায় না, ছাড়তে পারি না আমরা। তাই দুমড়ে, মুচড়ে শেষ হলেও ঝুলে থাকি, বাঁচাতে চেষ্টা করি সবটা। ক্ষমা করি দোষতাপ যত, চোখ মুছে আবার পাঁচ পদে থালা সাজাই সযত্নে। হাতপাখাটা সামলে রাখি। ভাজা মৌরি, মোরোব্বা, সুগন্ধি জর্দা , এলাচ দানা দিয়ে সাজিয়ে রাখি খিলিপান। আর হাসির আড়ালে প্রাণপনে ঢেকে রাখতে চাই দগদগে ক্ষতগুলো! অভিনয়টুকু বড়ো সুনিপুণ টানে উৎরোতে থাকে দিনের পর দিন।
অতঃপর?
আমার কথাটি ফুরোলো, নটে গাছটি মুড়োলো!
এক আটপৌরে অতি সাধারণ মেয়ের ততোধিক সাধারণ বারোমাস্যা শোনার ধৈর্য্য তোমার আছে নাকি শরৎ বাবু!
–~০০০XX০০০~–