অবসরকথন
✍ পাখী রায়
একটু একটু করে বড়, ছোট, মাঝারি সিঁড়ি ভাঙছি
ভুলে যাচ্ছি সর্ষে ক্ষেতের গন্ধ মাখা বিকেল
ফাল্গুনের রোদ পড়ে আসে
ছায়ারা দীর্ঘতর হয়
মাথার ওপর সামিয়ানার মত আকাশ
যেহেতু পাহাড় এবং সমুদ্র দুটোই আমার প্রিয়
একসঙ্গে কাছে পাব বলে
উবু হয়ে বসে পড়ি
তারপর উন্মুক্ত ছাদে চুল এলিয়ে শুই
আকাশের দিকে মুখ করে
যেন মনে হচ্ছে বালিয়াড়ির মধ্যে পড়ে আছি
তোমাদের ধুলোমাখা পায়ের থেকে
রেণু রেণু বালি মাখছি শরীরে
বিস্তীর্ণ নীল, মনে হচ্ছে যেন ঢেউয়ের পর ঢেউ
এসে ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছে বেলাভূমি
মুছে দিয়ে যাচ্ছে যা কিছু মনে রাখতে চাই না
অথচ কুরে কুরে খাচ্ছে দিনরাতের ঘুম
এখানে যত্রতত্ৰ কাঠবাদামের গাছ
পাতাগুলি বৃহৎ এবং নানান রকমের
বাদামি, সবুজ আর মরিচ রঙা
অলপ্পেয়ে কাকগুলো এক এক করে
রেলিংয়ে এসে বসছে
কাওতালি করছে নিজেদের মধ্যে
এমন মানুষ হয়তো আগে দেখেনি যেন
অথচ শুঁড়িখানার সামনে হরবখত এমন দেখেছে
শুধু ওদের কাঠামো থাকে ওল্টানো,
ঘাড় থাকে গোঁজা নর্দমার ঘোলা জলে
বিপরীত কিন্তু দুর্লভ নয়
মাঝে মাঝে উড়ন্ত মেঘের দল
জল ছিটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে চোখের পাতায়
ঢেউগুলি ভেঙে যাচ্ছে
গুঁড়ো গুঁড়ো বাষ্প মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে
এখানে এখন বর্ষা, ঘোরতর
এমন বর্ষায় অতলান্তিকের মতো আকাশ মানায়?
একটাও সাদা পাখি দেখছি না
নিদেন পক্ষে শঙ্খচিল
হয়তো শীঘ্রই কোন খবর নিয়ে আসবে
একটি এলবাত্রাস পাখি
ততদিনে বাদমকাঠের একটা ডিঙি নৌকো বানাবো
মাস্তুলে বেঁধে নেব লন্ঠন
উপুড় হয়ে শুয়ে তারা গুনবো
কথা বলবো মৃত মানুষের সাথে
বৃষ্টির জল ধরে রাখবো,
নিপুণ হাতে হারপুন চালিয়ে
মাছ ধরে আনবো
নোনা বাতাসে ঝলসানো মাছ
খুব ভালো লাগে
এসবের মধ্যে ভুলে যাব পাড়ের কথা,
বাড়ির কথা, মেঘডুম্বুর জলছাদের কথা
যেখানে আমাদের নিভৃত আলাপটুকু
ফেলে এসেছি
অনর্গল গল্প করবে সে, প্রেমের কথা,
দাম্পত্য জীবনের কথা, বীজ বপনের কথা
কেননা ওখানে এখন বর্ষা, ঘোরতর
আর আমি?
তখন মাঝ সমুদ্রে একলা নাওভাসিতে
লিখে রাখবো দীর্ঘ কবিতা
কবির মতোই।
–~০০০XX০০০~–