উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ ( পঞ্চম পর্ব )
✍ কাকলি ঘোষ
২৪ তারিখ সকালে ব্রেকফাস্ট করে ই বেরিয়ে পড়লাম আলিপুর দুয়ারের উদ্দেশ্যে। নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশন নাগরাকাটা। প্রসাদজি শুধু পৌছে দিলেন তাই নয় নিজে দাড়িয়ে থেকে গাড়িতে মাল পত্র তুলে দিলেন। আর কখনো কি দেখা হবে এই সব মানুষ গুলোর সাথে! হায় ! এ জীবনে কত ঋণ জমা হয়ে থাকে কতজনের কাছে!
ধুবড়ি ইন্টার সিটি এক্সপ্রেস যথা নির্দিষ্ট সময়ে পৌছে দিল আলিপুর দুয়ার জংশনে। পথে পেরিয়ে এলাম মাদারিহাট, বানারহাট, হাসিমারা, কালচিনি এই স্বল্প সময়ে এত জায়গা ঘুরে দেখার সম্ভব নয়। তাই আমরা চলেছি আলিপুর দুয়ার জংশনে। যেখান থেকে আমাদের দ্রষ্টব্য জয়ন্তী, বক্সা, রাজা ভাত খাওয়া। স্টেশন থেকে টোটো ধরে পৌঁছলাম পূর্ব নির্ধারিত বাদল বীনা রিসর্টে। পৌঁছনো মাত্র হাসিমুখে এগিয়ে এলো চৌকিদার মন বাহাদুর আর রেখাদি।
সামনে সবুজ গাছ গাছালি , পিছনে বক্সার জঙ্গল, তারই মধ্যে কাঠের মনোরম বাংলো। কর্ণধার রানা বোস। অতি অমায়িক সজ্জন এবং প্রকৃত অর্থে আদ্যন্ত ভদ্রলোক। গরম চা সহযোগে আতিথেয়তার পর প্রোগ্রাম সেট করে দিলেন। দুপুরে রেখাদির হাতের চমৎকার একটি মধ্যাহ্ন ভোজের পর শরীর বিছানা চাইছিল কিন্তু মন উৎসুক অজানাকে দেখার জন্য। তাই আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়া গেল জয়ন্তীর উদ্দেশ্যে। বক্সা রিজার্ভ ফরেস্টের বুক চিরে ছুটে চলল গাড়ি। মাঝে একবার এক ফাঁকে দেখে নিলাম ছোট্ট সংগ্রহ শালা। দু ধারে ঘন জঙ্গল। শাল সেগুন জারুল এর নিবিড় সমারোহ। প্রতি মুহুর্তে আশা বন্য জন্তুর দর্শনের। পাহাড়ের গায়ে ঝিঁঝি পোকার আশ্চর্য ঐক্যতান। গাড়ি গিয়ে থামল এক অসম্ভব সুন্দর উপত্যকায়।
দূরে জয়ন্তী পাহাড় আশ্চর্য সবুজে ঢাকা আর তারই পাদদেশে কল কল করে বয়ে চলা নদী। এক অপূর্ব নিসর্গ! যেন পটে আঁকা ছবি। চলে যেতে পা সরে না। মন চায় সময় থমকে দাঁড়াক ,দু চোখ চায়
প্রাণ ভরে দেখে নিতে প্রকৃতির এই অনুপম সৌন্দর্যের সুষমা। পাহাড়ের মৌন মহত্ব, নদীর অকৃপণ জলধারা, দুর বনানীর শ্যামলিমা।
অসীম সৌন্দর্য শালিনী জয়ন্তী কে আরো বেশি উপলব্ধি করতে চাইলে যেতে হবে মার্চ এপ্রিলের মাঝামাঝি__ জানালেন গাইড অজয় ভটচায। যত্ন করে দেখালেন ওয়াচ টাওয়ার। তবে দেখা মেলে নি বন্য জন্তুর। ফেরার পথে স্থানীয় মানুষের মুখে শোনা গেলো দুদিন আগেই বুনো হাতির সামনে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন এক আদিবাসী মহিলা। দেখা হল না মাগুর মাছে ভরা পুকরি লেক। রাস্তা খারাপ। গাড়ি যাতায়াত বন্ধ। দূর থেকেই পুকরি মাই এর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে এলাম জঙ্গল থেকে।
এবার গন্তব্য বক্সা। ফোর্ট এ ওঠা সম্ভব হল না কারণ ততক্ষণে বিকেল গড়িয়ে এসেছে। যেতে যেতে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বক্সার পাহাড়ী পাথরে ভরা রাস্তায় পা রেখে একটু একটু করে উঠলাম জিরো পয়েন্টে। অনুপম প্রকৃতিক সৌন্দর্য প্রাণ ভরে উপভোগ করলাম। গাইড শিবু ছেত্রি শোনালেন বক্সার কথা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন পাথরে ভরা এবড়ো খেবড়ো পথে।
অসীম নিস্তব্ধতায় দূরের বিশাল বিশাল শৈল শিখর আর দিগন্ত ছোঁয়া বিটপী, এই নির্জনতা, এই বিশালতা, এই মন কেমন করা গোধূলির মাঝে নিজের অস্তিত্ব যেন অতি ক্ষুদ্র, অতি নগণ্য।
(এরপর… ক্রমশ…)