উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ ( তৃতীয় পর্ব )
✍ কাকলি ঘোষ
আজ আমাদের গন্তব্য সমসিং, ঝলং, বিন্দু, প্যারেন, রকি আই ল্যান্ড, লালি গুরাস, সান্তালিখোলা। সক্কাল সক্কাল জম্পেশ ব্রেকফাস্ট সেরে চেপে বসলাম গাড়িতে। আজ সারথি দীপ সুব্বা। হাস্যমুখ, সুন্দর তরুণ। চমৎকার বাংলা বলেন। ভাব জমে উঠতে দেরি হলো না। গাড়ি ছুটে চলল পাহাড়ের বুক চিরে। দুপাশে ঘন জঙ্গল। রবার চাষ। পাহাড়ের গায়ে ধারে ধারে কমলালেবুর গাছ। ও পারে ভুটান পাহাড়। মাঝে সবুজ চোখ জুড়ানো চা বাগিচা। কোথাও কোথাও সবুজ চৌখুপি কাটা ধান ক্ষেত। সঙ্গে চলেছে জলঢাকা। তার উচ্ছল কলতান নিয়ে। আমরা যে চলেছি তারই উৎসে।
“ও নদীরে
একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে
বল কোথায় তোমার দেশ
তোমার নেই কি চলার শেষ_”
গাড়ি যত সমতল ছেড়ে উঠতে লাগলো দৃশ্য পট ততই বদল। পাহাড়ের গায়ে নাম না জানা অসংখ্য গাছ গাছালি, অগুনতি ঝরনা, পাখি , আলো ছায়ার মাখামাখি, সবার ওপরে এক আশ্চর্য নিস্তব্ধতা ! যা মনকে ভেতর থেকে ছুঁয়ে যায় । মাথা আপনিই নত হয়ে আসে এই মৌন মহান বিশালত্বের পায়ের কাছে। এই নিসর্গ, এই অজানা সংকেতের কাছে হারিয়ে যাওয়া, এই মেঘ রোদ্দুরের লুকোচুরির মধ্যেই গাড়ি ঝালং ছুয়ে পৌঁছালো বিন্দুতে। পথে পড়ল কত অজানা বসতি। নেপালি, ভুটিয়া, লেপচাদের বাসস্থান। অদ্ভুত সৌন্দর্য্য বোধ এদের। ফুল গাছ নেই এমন একটা বাড়ি ও চোখে পড়লো না।
বিন্দু। এক অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে অপেক্ষা করে আছে সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের জন্য। ও পারে ভুটান। মাঝে জলঢাকার হাইডাল প্রজেক্ট। এ এক অপূর্ব দৃশ্য !!! প্রকৃতি যেন এখানে অকৃপণ হস্তে ঢেলেছেন নিজের অনুপম রুপমাধুরি। নদী এখানে শত সহস্র ধারায় ছুটে যেতে চায় বন্ধন ছেড়ে। পাহাড়ের গায়ে আটকে থাকা মেঘ, নীচে অজস্র পাথর, নুড়ি র মধ্য দিয়ে অশান্ত, নিরন্তর গতিতে ছুটে চলেছে জলঢাকা। মন চায় সময় অনন্ত হোক এখানে। জীবন থমকে থাকুক কিছুক্ষণের জন্য।
কিন্তু তা হবার নয়। যেতে হবে অনেক জায়গায়। ভরে নিতে হবে ঝুলি এরই মধ্যে। চলা শুরু করতে হবে আবার।
মুখ দেখে আন্দাজ করলেন দীপ সুববা। বিন্দু থেকে নামার সময় গাড়ি দাড় করালেন পাহাড়ের কোলে এক ছোট্ট সুন্দর কাফে তে। চমৎকার মোমো সহযোগে চা পান করে আবার চলা শুরু।
এবার স্যামসিং। অনন্ত চা বাগান , পেখম মেলা ময়ূর, নীল আকাশের নিচে এই বিস্তীর্ণ সবুজের বিশাল আয়োজন শুধু চোখ নয় মন কেও ভরে দেয় অসীম প্রশান্তিতে। এ যেন এক অনন্ত চলা। প্রকৃতির মতই উদার সরল মানুষ জন ও এখনকার। রকি আইল্যান্ডে এক সরল পাহাড়ী গৃৃহবধুর সাদর ডাক, ” আস। ভাত খেয়ে যাও” শুধু মন ভরিয়ে দেয় না আজকের এই স্বার্থপর, ধান্ধাবাজ জগতের মধ্যে ও কোথাও যে এখনও ভালোবাসা, সরলতা বেঁচে আছে তা জেনে চোখে জল ও এনে দেয়।
এদের কি ভুলতে পারব কখনও?
(এরপর…ক্রমশ…)
–~০০০XX০০০~–