“পরশ থাকুক”
✍️ কাকলি ঘোষ
ঃকী রে এরকম স্যাড স্যাড হয়ে বসে আছিস?
ঃধ্যৎ ! ভাল্লাগে না।
ঃআরে কেন ভাল্লাগে না? সেটা বলবি তো!
ঃতোকে বলে কী হবে?তুই কিছু করতে পারবি না।
ঃকে বলেছে পারব না? বলেই দ্যাখ!
ঃদূর!
ঃআবার বলে দূর! কী হয়েছে বলবি তো। এরকম মেলানকোলি হয়ে বসে আছিস?
ঃথাক। আর ইংরিজি বলিস না।
ঃঠিক আছে।এই কান ধরলাম ।ইংরিজি ছাড়লাম। এবার বল।
ঃকী বলব? মন খারাপ।
ঃকেন মন খারাপ শুনি?
ঃআরে কলেজ থেকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে মাউন্ট আবু। তুইও তো যাচ্ছিস!
ঃহ্যাঁ। অবভিয়াসলি। তুই?
ঃনা রে। বাবা যেতে দেবে না।
ঃকেন?
ঃআর কেন? বাবা বলেছে আমার সাথে যাবি।কলেজ থেকে যেতে হবে না।
ঃএ কী রে! তোর বাবা একটা মাইরি—–
ঃএই! খবরদার মুখ খারাপ করবি না।
ঃনা না। ছি ছি। মুখ খারাপ করতে পারি?ফিউচারে ফাদার ইন ল হবে।
ঃইঃ! কত শখ! যা যা।
ঃ এই যা যা মানে? তুই ল্যাং মারবি না কি রে আমায়?
ঃউফ! আমি মরছি আমার জ্বালায়। আর উনি এলেন ফাদার ইন ল খুঁজতে!
ঃআরে শোন না। আমি সব ঠিক করে দেব
ঃ তুই! কী করে?
ঃসোজা চলে যাব তোর বাড়ী।
ঃ গিয়ে?
ঃগিয়ে আংকেলের পায়ে পড়ে যাব।
ঃ তাই? যদি বলে তুমি কে? তৃনার ব্যাপারে তোমার এত মাথা ব্যথা কেন?
ঃআরে এ তো সহজ প্রশ্ন। আমি এর থেকে কঠিন আশা করেছিলাম।.
ঃ সোজাটারই উত্তর দে।
ঃ উত্তর! ইয়ে — বলব আমি শুভম । তৃনার বন্ধু।
ঃ ব্যস! তারপর তোর কী হবে জানিস? এক চড়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবে।
ঃ এই। তোর বাবা টা এরকম অমরীশ পুরি মার্কা কেন রে?
ঃ তা আমি কী করে জানব? আমার হাতে না কী? আর মেয়েদের বাবারা একটু ওরকমই হয়।
ঃ আরে বাবা হল অনুপম খের। দেখলি না দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে তে? বাবা হো তো এয়সা।
ঃ হুম। সে তো বুঝলাম। কিন্তু আমার যাবার কী হবে?
ঃ সেটাই তো ভাবছি।
ঃ কচু ভাবছিস। তোর তো মজাই হোল। মহুল,প্রিয়া,সাবর্নী। খুব মজা মারবি ওদের সাথে।
ঃ ইঃ! কী ভালোই মনে করালি! মহুলটা না —–মাইরি—-জিনিস!!
ঃ কী! কি বললি? জিনিস! তবে রে!
ঃ আরে আরে করিস কী! মারধোর শুরু করলি? ওতে আমার কিছুই হবে না সখী। তোমার নরম হাতে ব্যথা হবে।
ঃ তুই বললি কেন? মহুল জিনিস! আর আমি? আমি কী তোর চোখে?
ঃ তুই!! দাঁড়া দাঁড়া। তোকে ভালো করে দেখি একবার।
ঃ আবার ! আবার অসভ্যতা!
ঃ এই দেখ। এতে অসভ্যতার কী দেখলি? শুধু তো দেখব বলেছি। আর তো কিছু——
ঃ যাঃ। তোর সাথে কথা বলব না।
ঃএই
ঃ উঁ
ঃএই শোন না
ঃ কি?
ঃ মন খারাপ করিস না।
ঃ যাওয়া হবে না যে
ঃ নাই বা হোল। যেতে হবে না।
ঃ মানে?
ঃ মানে আংকেল যখন বারন করছেন যেতে হবে না।
ঃ সে তো তুই বলবিই। তোর তো সুবিধা।
ঃ দূর পাগলি! তুই না গেলে আমি ই যাব ভাবছিস?
ঃ যাবি না? অতগুলো টাকা জমা দিলি?
ঃ তো?
ঃ নষ্ট হবে তো?
ঃ হোক।
ঃ কিন্তু
ঃ কিন্তু কিছু নেই রে। উল্টোদিক দিয়ে ভাব একবার। তোর তো বারন করার জন্য একটা বাবা আছে ,আদর করার জন্য মা—-
ঃ সে তো তোর ও আছে।
ঃ হা হা হা
ঃ হাসছিস যে!
ঃ এমনি। জানিস অনেক রাতে যখন আমাদের বিরাট প্রাসাদের মত বাড়ীটা নিঃশব্দ হয়ে যায়—— আমি একা বিছানায় হাঁটু দুটো বুকের কাছে গুঁজে নিয়ে নিঃসঙ্গতায় ছটফট করি….…
তখন ..,….
ঃ তখন…..
ঃ তখন শুনি দারোয়ান রাম সিং গেট খুলছে। আমার বাবা বাড়ী ফিরলেন। না দেখেও বুঝি বাবা টলমল পায়ে বৃন্দাবন দার কাঁধ জড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের শোবার ঘরে যাচ্ছেন।.
ঃ শুভ
ঃ বৃন্দাবনদা বাবার জুতো খুলে ,কোট খুলে ,স্লিপিং গাউন পরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছে। নিজের ঘরে শুয়ে সেলুলয়েডে ফুটে ওঠা ছবির মত সব দেখতে পাই।
ঃ তোর মা ? আই মিন কাকীমা……….
ঃ মা! (হেসে) মা ফেরে আরো রাতে। অপেক্ষা করতে করতে শ্রান্ত দেহে মনে আমি যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন হঠাৎ………..
ঃ হঠাৎ……
ঃ হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় এক তীব্র অস্বস্তিতে। টের পাই আমার গালে আলতো আঙুল ছুঁইয়ে আদর করছে কেউ। ঘর ভরে উঠেছে বিদেশী দামী পারফিউম আর মিষ্টি এক ঝিমঝিমে গন্ধে।
ঃ শুভ….
ঃ বিশ্বাস কর আমার বমি পায়। ভীষণ গা গুলিয়ে ওঠে।
ঃ শুভ
ঃ জানিস যখন ছোট ছিলাম রাত হলেই কান্না পেত। কেবলই মনে হোত আমার বাবা মা আর সবার মত নয় কেন? আমার বাবা এত ব্যস্ত কেন? আমার মা এত বেশী সুন্দর কেন? আমাদের এত টাকা কেন?
ঃ শান্ত হ শুভ।
ঃ হা হা হা। শান্তই তো রে। দেখেছিস কখনো রাগতে?
ঃ শুভ। কাকু কাকীমা দুজনেই খুব বিজি। কিন্তু তোকে ভালবাসে না এমন তো নয়?
ঃ বাসে। ভালোবাসে বৈকি। আমার নামে ব্যঙ্কে কত টাকা তুই জানিস? কটা কার্ড ইউজ করি? কোন ব্র্যান্ডের জামাকাপড় পরি? এগুলো তো ভালবাসাই।
ঃঁ এগুলো ছাড়া তুই চলতে পারতিস?
ঃ তৃনা। তুই পারছিস না এগুলো ছাড়া চলতে? তবে আমি কেন পারতাম না?
ঃ তুইও তো কম নোস। শোধ নিচ্ছিস না? এত ভালো রেজাল্ট মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকএ । পড়ছিস কী? পাস কোর্সে কমার্স।
ঃ তো কী করতাম? ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, আইআইটি……….
ঃ অবশ্যই। তুই পারতিস। তোর ক্যাপাসিটি ছিল।
ঃ তারপর? বিশাল প্র্যাকটিশ অথবা বিরাট চাকরি । অনেক টাকা! তাই না?
ঃ এমন করে বলছিস যেন টাকা দরকার লাগে না জীবনে?
ঃ দূর ক্ষেপি। সে কথা কখন বললাম? কিন্তু টাকাই কী সব রে?
ঃ শুভ……….
ঃ ( থামিয়ে দিয়ে) এই যে তোর নরম হাতটা তোর নিজেরই অজান্তে আমার হাতে ঘামছে, এই যে তোর মুখটা আমার কাঁধে ভর দিয়েছে, এই যে আমার চোখ তোর চোখে আশ্রয় খুঁজছে …. এগুলো কিছু নয়?
ঃ শুভ
ঃ নাই বা যাওয়া হল মাউন্ট আবু।.এই ! গঙ্গার ধারে পাশাপাশি বসে সূর্যাস্ত দেখা এই কী কম!
ঃ শুভ। তোকে আমি অন্যরকম ভাবতাম রে। তুই এত বড়লোকের ছেলে। আমি খুব সাধারন রে! মহুল ,প্রিয়া ওদের মত ……
ঃ( থামিয়ে দিয়ে) সাধারন হয়েই থাক তৃনা। নাই বা হলি ওদের মত। শিকড় হয়ে যা তৃনা। নোঙর হয়ে যা হালছেঁড়া নৌকোর।দিশা হয়ে যা পথহারা নাবিকের।
ঃ শুভ। আমার ভয় করে রে। আমি কি পারব?
ঃ ভয় কিসের? আছি তো তোর পাশে। চিরকাল থাকব।
ঃ কিন্তু তোর বাড়ীতে যদি
ঃ ওসব কথা থাক এখন।.আয় তোর কানে কানে সেই কথাটা বলি। যা আজ ও বলা হয় নি তোকে।
ঃ (অস্পষ্ট স্বরে) কোন কথাটা ?
ঃঁ আয় আরো কাছে আয়। হ্যাঁ। এবার ঠিক হয়েছে।.এবার বলি । বলছি কি আমি তোকে খুব…………….
—:: সমাপ্ত ::—