“ক্লিওপেট্রা”
✍ ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
(দ্বিতীয় পর্ব)
মানবজীবনের মহাকাশে কত তারা সময়ের সাথে খসে পড়ে। মহাকালের ইতিহাস সব কিছু গচ্ছিত করে রাখে।উত্তরপুরুষে সঞ্চালিত হয় তাদের অমর কীর্তি। হাজার হাজার বছরের পরেও তা বেদনা জাগায়। এইসব চিন্তায় আবিষ্ট হয়ে আছেন মিশর সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা।
আলেকজান্দ্রিয়া রাজপ্রাসাদে বাতায়নের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আজ শুধুই মনে উঁকি দিচ্ছে অলিম্পিয়াস আর আলেকজান্ডার দি গ্ৰেট এর জীবন। নিজেকে মাঝে মাঝে অলিম্পিয়াস এর সাথেই তুলনা করেন। কত উচ্চাকাঙ্ক্ষী, বিদূষী এই নারী। যার আদর্শে আলেকজান্ডার সৃষ্টি হয়েছেন। পারস্য দমনের আগে মিশরের ফ্যারাও তিনি। তবু রাজসুখ নয়। ত্যাগ জীবনের শ্রেষ্ঠ ব্রত। মৃত্যুর আগে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। মানুষ সব পারে।
আয়নার সামনে দাঁড়ালেন ।প্রকৃতি তাকে কত রূপ দিয়েছে ।এখন আটত্রিশ বসন্ত পেরিয়েছে ।শরীরে গ্রীক রক্ত ।আলেকজান্ডার এর সেনাপতি তাঁর পূর্বপুরুষ ।তার নাম ও টলেমি ছিল ।স্বামীর নামেই নাম ।পিতার মৃত্যু কুড়ি বছর অতিক্রম করেছে ।এর মধ্যে কত পরিবর্তন হয়েছে জীবন কাব্যের ।
ভূমধ্যসাগর এ সত্তরটি জাহাজ নোঙর করা। এত পুরুষ তার মোহাবিষ্ট অথচ অক্টোভিয়ান কে পারলেন না। তবে কী রোমের রাণী হবার ইচ্ছা জলাঞ্জলি দিতে হবে। না না। “আমি ক্লিওপেট্রা!পিতার গৌরব। আমি প্রমাণ করে যাবো নারী সব পারে। যুদ্ধে আর প্রেমে মিথ্যা বলা পাপ নয়। তাছাড়া আমি হেরে যেতে শিখিনি ”
যতদিন যাচ্ছে গভীর একাকীত্ব গ্ৰাস করছে তাকে ।মনে পড়ছে পিতার কথা ।মিশরীয় শুধু নয় ,আরো অনেক ভাষায় পারদর্শী করেছেন ।ভালোবাসতে শিখিয়েছেন মিশরীয় দের ।তাই তো নীল নদ থেকে খাল কেটে কৃষির উন্নতি করেছেন ।ব্যবসা বাণিজ্যে এগিয়ে দিয়েছেন মিশরকে ।
তখন কত আর বয়স ।আঠারো হবে ।তখন থেকে মিশরের ভালো মন্দে সাক্ষী ।অস্ত্রের ঝনঝনানি যখন সারা পৃথিবীতে রক্তের বন্যা ব ইয়ে দিয়েছে ,মিশরকে রক্ষা করেছি আমি ।আমি নারী ।পেশীশক্তি তো আমার ছিল না ।তবে লাস্য বিভঙ্গ ছিল ।ছিল চোখের জাদু,অসীম মায়া বিস্তারের ক্ষমতা ।ছিল যৌন রহস্যময়তা ।এটাও তো একটা কূটনীতি ।অসীম ক্ষমতা রোমান দের ।ওদের সন্তুষ্টি আমাকেই করতে হবে ।আমি মিশরের রাণী ।ব্যক্তিস্বার্থ আমাকে সাজে না ।
আইসিসের মূর্তি টাকে মনে মনে নিজের বলে মনে হয় ।সৌন্দর্যের রাণী আমি ।আমার ভালোবাসা পাবার জন্য সমগ্ৰ বীর পুরুষ লালায়িত ।মিশরীয় গ্রানাইট এ তৈরি এই আলেক জান্দ্রিয়া প্রাসাদ ।বড়ো মায়াময় স্থান ।ঝুলন্ত উদ্যান সংলগ্ন হয়ে আছে ।একটু দূরেই গ্ৰন্থাগার ।
ঈশ্বরের পুত্র আলেকজান্ডার ।পারস্যের হাত থেকে মিশরকে রক্ষা করেছেন ।তাঁর নামেই এই আলেকজান্দ্রিয়া শহর ।ভূমধ্যসাগরের তীরে মনোরম আবহাওয়া ।অন্ধকবি হোমার ওডিসি তে এই স্থানের উল্লেখ করেছেন ।এখানকার গ্ৰন্থাগার গ্ৰীক পন্ডিত দের জ্ঞানের ভান্ডার ।সব পড়া সেই ছোট্ট বেলা থেকে ।গণিত শাস্ত্রে এত আকর্ষণ ।তার পিছনে ওই গ্রন্থাগার ।শুধু নিজেকে আভিজাত্য আর শিক্ষার বেষ্টনীতে বদ্ধ করা ।এরাটোসথেনিস,ইউক্লিড সকলের গবেষণায় নিজেকে ঋদ্ধ করা ।খুব দুঃখ হয় যখন মনে পড়ে রোমান বাহিনী কীভাবে নষ্ট করেছে ওই জ্ঞানের ভান্ডার ।
লাল আঙুরে তৈরি মদে চুমুক দিলেন ।একটা বিপন্নতা ধীরে ধীরে গ্রাস করছে যেন ।অস্থির হয়ে পায়চারি করছেন ।এতকালের কূটনৈতিক চাল এবারে কাজেই লাগলো না ।তবে কী তিনিই মিশরের শেষ ফ্যারাও ।রোমানরা গ্ৰাস করে নেবে মিশরকে ।নেশাটা তীব্রতর হচ্ছে যেন ।যণ্ত্রণা ভুলতে এটাই এখন ওষুধ ।
(এরপর… ক্রমশ…)