।। ফুলটুসি ।।
✍🏻অনিমেষ
[ প্রথম পর্ব ]
দূর থেকে কানে এলো ডাক, ” ফুলি রে-এ-এ-এ-এ, ও ফুলু-উ-উ-উ-উ, মা আমার, কোথায় গেলি ? ” কান খাড়া করে শুনলো ফুলি, কে যেন ডাকছে। ঘুঁটে কুড়ুনি ঠাম্মা না ?? ওই তো, এদিক পানেই যেন আসছে ঠাম্মা তার খোঁজে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড় লাগালো গাঁয়ের দিকে, ফুলডুংরি গ্রামের ছোট্ট মেয়ে ফুলটুসি, সবার ফুলি। অনাথ মেয়ে, তার ওপর ফুলের মতো দেখতে আর মিষ্টি স্বভাবের জন্য গাঁয়ের মানুষ ভালবাসে ওকে। বয়স কতই বা হবে, বছর আট বা নয়, কিন্তু এরই মধ্যে নিজের গুনে সব্বাইকে বেশ আপনার করে নিয়েছে ফুলি। শুনেছে মা নাকি ওর জন্মের সময়ই মারা যায়। বাপটাও ফুলি ছোট থাকতেই কেমন করে একদিন মরে গেল। তারপর থেকে আপনার বলতে পাশের ঝুপড়ির ওই ঘুঁটে কুড়ুনি ঠাম্মা। লেখাপড়ার পাট নেই। সারাদিন টো টো করে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায় ফুলি। এর ওর বাড়ি হাতে হাতে দুটো কাজ করে দেয়। বিনিময়ে রাতের বেলা দুমুঠো খাবার জোটে, নইলে ঠাম্মার কাছে রাতে খায়। সকালে গাছের ফলমূল, এটা ওটা সেটা যা পায় খেয়ে নেয়। দুপুরে গাঁয়ের দুগ্গা মন্দিরের পুরোহিত দাদু আদর করে ভোগ প্রসাদ খেতে দেয়। বলে, ” ওরে তুই তো ছোট্ট দুগ্গা রে গাঁয়ের, তোর পেট ভরলে মা খুশি হবেন। এমন দুগ্গা প্রতিমার মতো মেয়ে কেমন করে যে এই গাঁয়ে এলি “। দাদুর মুখের পানে চেয়ে মন দিয়ে খেয়ে যায় ফুলি।
ডাক শুনে ছোট্ট ফুলি পৌঁছে গেল ঠাম্মার কাছে। ছেঁড়া জামার কোঁচড় ভরা একরাশ ভোরের শিশির মাখা সুবাসিত টাটকা শিউলি ফুল। পাকা গিন্নীর মতো বলে, ” ফুল তুলছিলুম গো দুগ্গা মায়ের মালা গাঁথবো বলে। কাটুর কুটুর বিরক্ত করে বেলা বইয়ে দিলে। একন বলো দিকি কি কত্তে হবে ” ? বেচারি ঠাম্মা বুড়ি হয়েছে, ঘরের কাজ ঠিক মতো করতে পারে না। ঠাম্মার ঘরে গিয়ে হাতে হাতে জিনিসপত্র এগিয়ে দিয়ে ঘরের কাজে সাহায্য করে ফুলি। ঠাম্মার পাশের ঝুপড়ির কাকি হাঁক দেয়, ” ও ফুলি, একবার আসিস তো মা “। ঠাম্মার কাজ সেরে কাকির কাছে যায় ফুলি। তারপর কাকির হাতে হাতে কাজ সেরে দিয়ে কাকির দেওয়া রুটি মুখে পুরে ফুল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পথে গোয়ালিনী মাসির ছাগল ছানাটাকে একটু আদর করে নেয়। এক দৌড়ে আলপথ পেরিয়ে প্রজাপতির ঝাঁক সঙ্গে নিয়ে সোজা দুর্গা মন্দিরে। কোলের মধ্যে কিট্টু, তার আদরের খরগোশ। দালানে বসে মালা গেঁথে পুরোহিত দাদুকে দিয়ে বলে, ” এই দে গেলুম গো, পরিয়ে দিও কিন্তু মা কে ” । পুরোহিত হাত নাড়েন হেসে। ……
[ এরপর… ক্রমশ… ]