“কবিতার একটি চরিত্র”
✍ মোহাম্মদ আল্লারাখা
সেদিন তুমি বললে
তোমার অনেক কবিতা
এক একজন নারীকে নিয়ে।
শেলিনা সাবিলা বা অনামিকা কেউ।
একটি কথা বলবো?
আমি বললাম, বলো।
আমাকে নিয়ে লিখবে?
যদি তোমার ইচ্ছা হয়।
তোমার যেমন স্বভাব
কখনো কিছু পাওয়ার জন্য
সরাসরি জোর করোনি
অনুচ্চারিত কথায়
পরিশীলিত আচরণে
যা বোঝাতে চেয়েছো
যা চেয়েছিলে
সে সময় আমি বোকার হদ্দ
বুঝতেই পারিনি
বুঝেছি অনেক অনেক পরে।
চাইতাম কেউ আমাকে ভালোবাসুক
কারও ভালোবাসা যেন পাই
চেয়েছি তৃষিতের মতো।
তখন অন্তর্মুখী স্মিতভাষী আমি
কখনো উৎসাহী হতে পারিনি
কিছু পাবার জন্য।
কখনো চাইনি শুধুই দেহ
সে তো চাইলে যখন তখনই পাওয়া যায়।
পরে পেলাম বান্ধবী বা প্রেমিকা।
যেমন চেয়েছিলাম
তেমন নয়।
কারো ভালোবাসা নয়
নিজের চাওয়া দিয়ে তৈরি
যেন এক যান্ত্রিক সম্পর্ক
চাহিদা নির্ভর হিসাবের দ্বিধাদ্বন্দে গড়া
যেমনটি চাইবো, তেমনই হবে
অথবা হবে না।
সব পাওয়া মনের মতো হয় না।
সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে
যেটুকু পাওয়া যায়
কিছু না পাওয়া থেকে অনেক ছিল।
তাতে একধরনের সাময়িক তৃপ্তি আছে
পরিতৃপ্তি ছিল না।
তুমি এলে, বুঝতে পারলাম পার্থক্য।
তুমি আমাকে নিয়ে যত ভেবেছো
আমি তো ভাবিনি।
রেমন্ডের দোকানে গিয়ে আমার জন্য
জামার কাপড় খুঁজেই চলেছো
আমি বলি, এতো কী খুঁজছো?
বললে, কবে কোথায় একটি লম্বা ছেলেকে
কী রঙের ডোরা জামা পরতে দেখেছিলে
তখনই সেটা আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছো।
এখন তাই খুঁজে পাচ্ছো না।
পূজোর আগে একদিন গড়িয়াহাটে নিয়ে গেলে
বললাম, কী করবে?
বললে, এবার পূজোয় তুমি চুনোট করা কোঁচানো ধুতি গিলে করা সিল্কের পাঞ্জাবি সাজা নাগরা জুতো পরবে।
খুঁজে বেড়ালে গড়িয়াহাট থেকে কলেজ ষ্ট্রীট
সেখান থেকে চিৎপুর।
জৌনপুরী খস্এ সুরভিত হয়ে
ময়ূরের পেখমের মতো কোঁচাটি ধরে
নমনীয় কমনীয় মানানসই সুসজ্জিতা
তোমার সাথে সে বার পূজোতে ঘুরতে হল।
শুধু উৎসবে আনন্দে নয়
আপদে বিপদে পাশে থেকেছো
ছায়া ও আলো দিয়েছো।
ভোরের শিশির নাইবা হলে
তুমি সকালের তৃষ্ণার জল
হৃদয় মন ভরে দিয়েছো
করেছো জীবন শীতল।
তোমার চাওয়া খুব সামান্য ছিল
তোমার দেওয়া অসামান্য ছিল।
তোমার সামান্য চাওয়া আমি দিতে পারিনি
বুঝতে পারিনি
হয়তো আমি স্বার্থপরের মতো বুঝতে চাইনি।
সেদিন গঙ্গার তীরে এক অবসন্ন বিকেলে
গল্প করছিলাম দুজনে।
ভাটির গঙ্গাকে দেখে
কেমন খালি পেট ক্ষুধার্ত অজগর মনে হচ্ছিল।
পাশে বসে গল্প করতে করতে
তুমি আমার জামার নীচের ঝুল
খামচে ধরলে
আমি বললাম, কী হল? ছাড়ো
তুমি আরও জোরে ধরলে
আমি যতই ছাড়াতে চেষ্টা করি
তুমি ততই জোরে ধরে থাকলে
আমাকে কী গোয়ার্তুমি পেয়ে বসলো
আমি জোর করে তোমার আঙুল মুচড়ে দিলাম।
তবুও তুমি ছাড়লে না।
তোমার আঙ্গুল ফুলে উঠেছিল।
জল পট্টি দিতে হল
তবুও ব্যথা কমল না
সেদিন বাড়ি চলে গেলে
হাতের জন্য ডাক্তার দেখিয়েছিলে
ডাক্তার জিজ্ঞেস করেছিল
কী করে এমন হয়েছে?
তুমি নাকি বলেছিলে,বন্ধুর সাথে
ধ্বস্তাধ্বস্তিতে হয়েছে।
আমি জানি, কোনো ধ্বস্তাধ্বস্তি নয়
আমারই গোয়ার্তুমি।
অতো জোর করে ছাড়ানোর
চেষ্টার কোনো দরকারই ছিল না।
তুমি আঙ্গুল নিয়ে অনেক দিন কষ্ট পেয়েছিলে
তবুও সময় করে আসতে, দেখা করতে
কখনো কোন অভিযোগ করোনি।
কিন্তু তুমি কি জানো?
তোমার সেই আঙ্গুলের ব্যথা
তোমার আঙ্গুলে হয়তো নাই
সেই ব্যথা আমার বুকে জমা হয়ে আছে
সময়ে সময়ে টন টন করে উঠে
কখনো কাউকেই বলতে পারিনি
তোমাকেও না।
–~০০০X X০০০~–
(COPYRIGHT © Mohammad Allarakha)