“হাঁসজারু”
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা। আমি একজন অর্বাচীন এবং আনকোরা লেখক হিসাবে গল্প লিখতে উদ্যোগ নিয়েছি। আমার এই প্রতীতি জন্মেছে যে হাঁসজারু দের নিয়ে কিছু লিখবো।এই শব্দ টি এক বিখ্যাত কবির কবিতাতে পেয়ে এটা নিয়ে গবেষণা শুরু করে বর্তমানে আমি একজন বৈজ্ঞানিক বলা যায়।এখন কথা হচ্ছে এই হাঁসজারু কারা সেটা খোলসা করা প্রয়োজন।
যাঁরা আমার গবেষণায় নাক সেঁটকাবেন বা ভ্রু কোঁচকাবেন তারা গল্পটা পড়া এখানেই বন্ধ করুন। মানুষের মতো দেখতে,কথা বলে,নড়ে চড়ে এই হাঁসজারু রা। তবে তীব্র রূপে সুযোগ সন্ধানী।অনেকটা চিল বা শকুনের মতো বলা যায়। খুব ভালো ছোঁ মারতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সাহিত্য রচনায় এনাদের ব্যুৎপত্তি আছে।
কিছুদিন আগে এক হাঁসজারু যখন বলেছিল আমাকে একটা গান শোনাতে আমি গেয়েছিলাম। ও মা!তারপর শুনি সকলকেই নাকি ও এমনি করে গান গাইতে বলে পালিয়ে যায়।আমার এক বান্ধবীর সাথে এক হাঁসজারু বৌ পাতিয়েছিল। ওর একটা ফুটফুটে বৌ আছে। তবুও।
হাঁসজারু দের মেপে কথা,পাকা মাথা।আমি যে এতটা বুদ্ধিদীপ্ত হয়েছি তা ওদের প্রভাবে। ওদের দেখতে কেমন?সে এক একজন এক এক রকম। আমার ভুল ছিল।ভাবতাম এদের লিঙ্গভেদ নেই।পরে দেখেছি এরা পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রী লিঙ্গ উভয় রূপেই বিরাজিত। সেদিন নারীবাদী বলে পরিচিত স্ত্রী লিঙ্গের হাঁসজারু দেখলাম। যার কাজ কিছু নারীর সম্মান নিয়ে খেলা করা। ব্যঙ্গ এবংবিদ্রূপে এরা প্রথম শ্রেণির ডিগ্ৰিধারী। আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে ওদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। বলেছেন হাঁসজারু দের থেকে দূরে থাকতে আমার মতিভ্রম এতটাই চরমে যে তার সাথে আমি ঝগড়া করেছি। হাঁসজারু রা ভীষণ প্রভাবিত করেছে আমায়।
দেখুন। সাহিত্য হল গিয়ে সমাজের দর্পণ। একথাটা আমি ইস্কুলে রচনা লেখার আমল থেকে জানি। তাই সামাজিক যা কিছু লেখা তে আসবেই। কত গোপন কথা আছে বুকের মধ্যে হ্যাঁচোর প্যাঁচোর করে মরে।ভাবলাম হাঁসজারু রা সামাজিক জীব। ওদের কথাও থেকে যাক সাহিত্যের পাতায় পাতায়।
স্কুলে পড়ার সময় একটা প্যাঁচের বক্তব্য ছিল। সব ক্ষারক ক্ষার নয় কিংবা সব অব্যয় উপসর্গ নয়। তেমনি সব সাহিত্যিক হাঁসজারু নয়। আর হাঁসজারু মানেই সাহিত্যিক নয়। এমন প্যাঁচালো বক্তব্য মা এর কাছে বলতে গিয়েছিলাম। হাতপাখার বাঁটে করে এমন ঘা দিলে যে দাগ বসে আছে।
সমাজে যত অবক্ষয় এই হাঁসজারু দের জন্য। এক স্ত্রী হাঁসজারু ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়েছিল। কান্না কাটি করে সকলের থেকে সাহায্য আদায় করে বেঁচে গেছে। পে কমিশনে মাইনে বেড়ে যেতেই এখন কাউকে চেনেন না।ইস্টাইলে সে উপকারী বন্ধুদের ভুলে গুলে খেয়েছে।আর্থিক মাপকাঠিতে সে বড়ো নোক। এখন নায়িকা রূপে তার নতুন সিনেমা “ঢিল মারি তোর খোলার চালে”। ওকে দেখতে গিয়ে একদিন রাতে বাড়ি এসেছিলাম। কিন্তু ও এখন আমায় চেনে না।আমি যেন ওর গা এ আরশোলা পড়েছিলাম। ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।
আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে আমি ওদের ব্যাপারে এত আগ্ৰহী কেন? আমি পরীক্ষা করে দেখেছি এরা যেভাবে ডানা বিস্তার করছে তাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের পক্ষে সুখাবহ নয়।
দীর্ঘদিন ওদের নানা কার্যকলাপ আমার জীবনে বিশ্রি রকম প্রভাব ফেলেছে। মুখের আড়ালে অন্য মুখ। আমি একটি বিশেষ পদ্ধতিতে ওদের ডানা গুলো কেটে দেবো। এরা অসহনীয় হয়ে উঠছে
এই যে পরভৃ্ৎ জন্মেছে হাঁসজারু দের গা এ। এটা ভীষণ শক্ত আঁশটে গন্ধ যুক্ত পুতিগন্ধময়। আমি সনাতন পন্থী দের জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ওনারা যা বললেন সেটা হল আধুনিক সভ্যতার বিষময় ফল। আমি আমার স্বজাতি কে সাবধান করে দিচ্ছি। কারণ আমি রুদ্ররূপে স্বাজাত্য প্রেমিক।
হাঁসজারু যখন প্রেমিক সাজে তখন প্রেমিকার কালো বা অন্যান্য রঙের তিল এর খোঁজ করে। গোপন অঙ্গে যদি থাকে তাহলে তো কথাই নেই। ওগুলো দেখার জন্য স্তোকবাক্য, তোষামোদ চলে। ওগুলো তখন কাব্যি করে আকাশের তারা হয়ে যায়। কিন্তু আমার গবেষণায় আমি দেখেছি পরে ফোঁড়ার মতোই যন্ত্রণা দেয়।
বিশ্বময় জাল পাতা। মা কে বললাম। উনি বললেন হেসেছো কী ফেঁসেছো। তুমি দু্র্বল যদি হলে তবেই গেল। স্ক্রিন শট করে হাটে হাঁড়ি ভাঙবে প্রগতিশীল নারী সংঘ।
আমি তো বারবার বলি ওরে! আমার সাদা মনে কাদা নেই।ডান বলো আর
বাম বলো যে কেউ ভালো কাজ করলে আমি তার ফ্যান।একটা হাঁসজারু একবার নেতা হয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিল।কী সুন্দর তার বাচন ভঙ্গী।আমি অভিভূত হয়ে ঘরে ফেরার সময় ওর বাবার সাথে দেখা। উনি বললেন সকালে কুড়ি টাকা দিয়ে বিকেলে চেয়ে নিয়েছে ছেলে।কথাটা শুনে চোখ টা মার্বেল হয়ে গিয়েছিল।অনেক কষ্টে স্বাভাবিক করেছি।
হাঁসজারু দের গল্প শেষ হবার নয়। এক প্রতিবেশী ছিল।ওর বর নাটবল্টু কারখানা তে কাজ করতো।কিন্তু পাড়াতে বলতো আমি ইঞ্জিনিয়ার।অবশ্য এরকম আকছার হচ্ছে।এ প্রসঙ্গে ভুয়ো ডাক্তার প্রসঙ্গ মনে এসে গেল।এরাও কিন্তু হাঁসজারু বংশের।হাঁস যেহেতু মা সরস্বতীর বাহন তাই মনে মনে আহ্লাদিত।
পাঠক বন্ধু। অপরাধ নেবেন না। কাউকে আঘাত করতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু এই যে ডানার বিস্তার এটা কাটতেই হবে। এখন অস্ত্রে শান দিচ্ছি। তারপর ই ঘ্যাচাং ফু।কাটবো তোকে। গুল গুল্লা,গুল গুল গুল্লা। বাই বাই।
—০০০::XX::০০০—