“অভিনয়”
–:: ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায় ::–
বালির পঞ্চানন তলার কাছেই যেখানে বিষহরির মাদুলি আর কবচ বিক্রি হয় তার উত্তরদিকে লাল রঙের দোতলাটা আমাদের যতীন দার। যতীন দা মানে যতীন গুহ। খুব ই নিরীহ। যাকে বলে একেবারে গোবেচারা। লম্বা সুড়ুঙ্গু দেহে হাড়ের উপর চামড়া জড়ানো যতীনের নাকটি অনেকটা টিয়াপাখির মতো।সে তুলনায় চোখ দুটো গুলি গুলি।
বাড়িতে তার ধর্মপত্নী নন্দরাণী ছাড়াও একটি বিড়াল আর দুটো খরগোশ আছে। নিঃসন্তান যতীন সামান্য চাকুরে। যা হোক করে সংসারটা চালায়।
নন্দরাণী দিনরাত বকবক করে। এই বকবকানি যতীনের একেবারেই পছন্দ নয়। কিন্তু আপত্তি করলে মহাফাঁপড়। নন্দরাণীর গাল ফুলে ঢোল হয়ে যায়।তখন তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে কালঘাম ছোটে যতীনের। এমন যে কতবার হয়েছে।
বাপের বাড়িতে বেশি না গেলেও অতিথি হিসেবে নন্দের ভাই বোনেরা প্রায় সবসময় ই পালা করে করে হাজির। যতীন স্পিকটি নট। রক্ষা আছে।
হ্যাঁ। নন্দরাণী যতীনের গিন্নি কাম অভিভাবক। পিতৃ প্রদত্ত বাজখাঁই গলা নিয়ে নন্দরাণীর গর্ব থাকলেও যতীনের কানমাথা দপদপ করে।
যতীনের শ্যালিকা পুষ্পরাণী ক’দিন হল এসেছেন।এবেলা ওবেলা মাছ মাংসের খরচ জোগাতে যতীনের নাভিশ্বাস। মুহুরী স্বামী তাকে হীরে বসানো আংটি উপহার দিয়েছে।
কিন্তু ব্যাপার টি এখানে থেমে নেই। নন্দরাণীর আব্দার পুষ্পের মতো অমন আংটি সামনের মাসে বিবাহ বার্ষিকীতে তাকে দিতে হবে।
একেবারে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। যতীনের তো যাকে বলে কাচা খোলা অবস্থা।
শ্যালিকা পুষ্পরাণী এর সঙ্গে যোগ দিয়ে বলে ওইদিন দিদির আঙুলে আংটি পরিয়ে আপনি আই লাভ ইউ বলবেন জামাইবাবু। আর পনেরটি বাতি নেভাবেন ফুঁ দিয়ে।সবমিলিয়ে পঞ্চাশ জনকে মাংস ভাত আর মিষ্টি।
কথাগুলো শুনে পর্যন্ত যতীনের খিদে ঘুম সব গেছে।উফফফ!
যাইহোক। পুষ্প চলে গেলে নন্দকে বোঝাতে বসে যতীন। হীরে বসানো আংটি ওদের সংসারে বিলাসিতা। বলছে বটে। তবে বুকে যেন বাইশ কুড়ি বাজনা বাজছে।
হায় রে। চোরা না শোনে ধর্মকাহিনী। নন্দ বলে বসে “তাহলে কোনো মুরোদ ই যদি নেই তবে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে সাধ হয়েছিল কেন?”
এই বলে পাড়া মাতিয়ে কাঁদতে বসলো নন্দরাণী। “ও বাবা গো! এ তুমি কার হাতে দিলে গো”
যতীন পরেছে মহা ফাঁপড়ে। সত্যি। নিজেকে অপদার্থ মনে হয়।মনে মনে স্বপ্ন দেখে। আংটি নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছে যতীন। নন্দের মুখ আহ্লাদে গদগদ। যেন টিউবলাইট জ্বলছে।
সম্বিত ফিরে পায় যতীন। একটা চাপা কষ্ট অনুভব করে। একটা মাত্র বৌ এর একটা মাত্র সাধ সে পূরণ করতে অক্ষম। সত্যিই তার পৌরুষ নেই। নিজেকে ধিক্কার দেয় মনে মনে।
পরের দিন যথাসময়ে অফিস যায় যতীন। কাঁচুমাচু যতীনকে দেখে ভবেশ বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে।
যতীন ভাবে ভবেশ ই এখন ভরসা। যতীনের কথা শুনে চোখ দুটো কপালে উঠে যায় ভবেশের। বলো কী গুরু। এখন স্রেফ অভিনয় করতে হবে।
অভিনয়। মানে যতীনের মাথায় কিছুই ঢোকে না।
ভবেশ বলে নন্দরাণীকে থামাতে গেলে এটাই পথ।
হাতে চাঁদ পায় যতীন। বড়ো খলিফা ছেলে এই ভবেশ।
ঘড়িতে ঠিক তিনটে বাজছে। নন্দরাণী সবে দিবানিদ্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন সময় ল্যান্ডফোন বেজে উঠলো। এই অসময়ে ফোন তো কেউ করে না।নন্দ উঠে এসে ফোনটা ধরতেই পুরুষকণ্ঠ শোনা গেল। হঠাৎ কাজ করতে করতে অফিসের চেয়ারে বসেই অজ্ঞান হয়ে যায়। ডাক্তার বলেছেন অত্যধিক মানসিক চাপে এমন হয়েছে।
নন্দ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে “ওগো তুমি চলে এসো গো।আমার হীরের আংটি চাই না। ও গো তুমি ই আমার হীরে”।
নন্দরাণীর বুকফাটা আর্তি ফোনে শুনেছে ভবেশ।পাশে যতীনও চোখ টিপে দেয় ভবেশ। ওষুধে কাজ হয়েছে। তবে গুরু তোমার অনেক টাকা বাঁচিয়েছি।এখন পাঁচশো ছাড়ো। সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া। রোগী সাজিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।
ভবেশের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসতে থাকে যতীন।
–●●◆【∆■∆】◆●●–
Beautiful stroy
Beautiful story