পুষ্পকে র্বিষ -কন্টক
— ডক্টর মদনচন্দ্র করণ
…………………………
বন্ধুরা এসেছিল পুষ্প হাতে
কি ভদ্র! কি মধুর! কি মহারথী প্রহরী!
তারা বলেছিল, “তুমি শুধু দেখো স্বপ্ন,
আমরা গড়বো তোমার সফলতার রাজপ্রাসাদ।”
ভেতরে ভেতরে তারা কষে রেখেছিল বিষাক্ত শুয়োপোকার বিছানা।
প্রতিশ্রুতির সোনালি সুতোয় আমায় বাঁধলো তারা,
টেনে নিল অবিরাম প্রতীক্ষার লাটাইয়ে।
“শীঘ্রই হবে! কাল হবে! আরেকটু অপেক্ষা!”
এভাবে দিনে দিনে পচে গেল সাধনার পবিত্র মাটি।
নিশি নামলো—
বন্ধুরা বিছানা সাজালো রঙিন ফুলের নরম প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
বললো, “শুয়ে পড়ো হে বিজয়ী! আজ তোমার রাজরাত্রি!”
কিন্তু ফুলের নিচে লুকিয়েছিল বিষাক্ত পুপার(pupa)অঙ্গসঞ্চালন,
কাঁটার চুম্বনে শুয়ে শুয়ে আমি রক্তাক্ত হলাম।
আমি শুলাম, নিথর শরীরে, ছটফটাতে ছটফটাতে,
শুয়োপোকার বিষে, ব্যথায়, ক্লেশে—
রাত্রি কেটেছিল প্রাণ বিদারক এক উল্লাসের মধ্যে,
যেখানে উৎসব ছিল কেবল ব্যথা আর নিদারুণ ব্যঙ্গ।
তারপর ভোর হলো।
আমি দাঁড়ালাম, নিজের শেষ শক্তি নিংড়ে দিয়ে।
জয় ছিনিয়ে আনলাম একেবারে একা হাতে—
আর বন্ধুরা তখন ফুল ছুঁড়ে বললো,
“তুমি তো অসাধারণ! আমাদের অনুপ্রেরণা!”
তাদের হৃদয়ের ভেতর তখনও ছিল কাঁটা আর বিষের সঞ্চার।
শিখেছি আমি—
বন্ধুরা মাটির পুতুল, ভেতরে খোঁড়ল;
প্রতিশ্রুতি টিকে থাকে ঠোঁটের ছলনায়,
আর কাঁটা জন্মায় হাতের তালুর ভেতর।
আমার রক্ত, আমার ঘাম, আমার ছটফটানো রাত—
সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে আগুনঝরা এক সত্যের মুকুট।
এখনো দেখি, মিষ্টি মুখের আড়ালে দাঁড়িয়ে,
নতুন নতুন পাখা মেলে বেড়ে উঠছে শুয়োপোকার নতুন প্রজন্ম—
তারা আবারও বন্ধু হতে চায়।
এতো শুয়োপোকা কষ্টযান্তায়
রাধারানী, প্রানপ্রিয়ার দুয়া…
গরুড় পক্ষী এলো বিপদ ভঞ্জন
নিভৃতে নির্জনে ঠেকাতে পিউপা!
দিন চলে যায় ছল বল কৌশলে
ঈশ্বর সুখে রাখুন তাঁদের যাঁদের
কাছে পেয়েছি বিষাক্ত বন্ধুতা!!
—oooXXooo—