দ্বিধা গ্রস্ত ভাবে ঘাড় নাড়ে রিন্টি। না বলবেই বা কী করে ? এদের ঘরে তো আর বেশি দিন থাকা যাবে না।।একটাই ঘর। কাল বৌদি ওকে নিয়ে আলাদা শুয়েছে। এরকম তো রোজ রোজ হতে পারে না। এদিকে কোন বাড়িতে কোথায় যেতে হবে কে জানে? কিছুই তো চেনে না এত বড় শহরটার। যাক গে। যা আছে কপালে তাই হবে। ছোট বেলায় যার বাপ মা মরে তার কপাল এর চেয়ে বেশি ভালো কী হবে? পেট ভাতায় একটা কাজ ওর দরকারই ছিল। “ হ্যাঁ। বৌদি। ও করবে বলছে। ” ব্যগ্র স্বরে বলে শিখা। “ ঠিক আছে। আজ বিকেলে অর্চনা আসবে বলেছে। তাহলে তুমি ওকে নিয়ে সন্ধ্যে নাগাদ চলে এসো।জামা কাপড় জিনিস পত্র যা আছে নিয়ে এসো।” জামা কাপড় ? চট করে মনে মনে ভেবে নেয় রিন্টি। মাত্র দুটো শাড়ি আছে ওর ব্যাগে। তার একটা পিসিমারই দেওয়া। সেটাই ভালো। কবেই বা আর কে ওকে কী দিয়েছে ! চিরকাল তো বৌদিদের ফেলে দেওয়া শাড়ি পরেই লজ্জা নিবারণ করা। দুটো ব্লাউজ। সায়া একটা ছেঁড়া একটা গোটা। জিনিসপত্র আর কিই বা আছে ওর? একটা চিরুনি। তাও তার প্রায় সবই দাঁড়া ভাঙ্গা। আয়না একটা। ব্যস। পায়ে সেপ্টিপিন লাগানো হাওয়াই চটি। এসব নিয়ে অত বড়লোকের বাড়ি যাওয়া যাবে তো ? কী জানি ? দেখা যাক শিখা বৌদি কী বলে? উপায়ই বা কী? ওরাই বা কী করবে ? নিজেদের অবস্থাও তো তেমন নয়। সংসারটা ঠিক মত চলার জন্যই তো শিখা বৌদি রান্না করে দু বাড়িতে। তবু তো এর মধ্যেও ওর জন্য করচে ওরা। সুখেন দা নিয়ে না এলে ওই লোকটার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিত ওরা। আর ওই বিয়ে হওয়ার থেকে তো ঢের ভালো নিজে রোজগার করে নিজের পেট চালানো। শিখা বৌদিও তো চেষ্টা করছে ওর কাজের জন্য। “ ঠিক আছে বৌদি। তাই আসব ” ঘাড় নেড়ে আবার নিজের কাজে মন দেয় শিখা। সুখেন কেও তো জানাতে হবে। অমত কিছু করবে না জানে। তবু – কী জানি কেন মনটা একটু খচখচ করতে থাকে শিখার। আজই চলে যাবে মেয়েটা ? বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলল না কি শিখা ? সবে তো কাল রাতে এসেছে মেয়েটা। কলকাতার মত শহর। কিছুই দেখল না। জানলো না। দুটো দিন ভালো করে খেলো না, মাখল না। আজই চলে যাবে ? সুখেন কিছু মনে করবে না তো? পিসিমা জানলে দুঃখ পাবে না তো? ভাববে না তো শিখা নিজেদের কাছে থাকতে দিতে হবে বলে তাড়াহুড়ো করে মেয়েটাকে একটা বাড়িতে চালান করে দিল। কিন্তু সেটা তো সত্যি নয়। হ্যাঁ। শিখা চেয়েছে ওকে একটা যে কোন কাজে ঢুকিয়ে দিতে । পিসিমা ও তো তাই চেয়েছেন। সেই জন্যই সঙ্গে করে নিয়ে বেরিয়েছে শিখা। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা হয়েও যাবে এতটাও ভাবে নি। যাক গে। ভালই হল। একটা হিল্লে হবে মেয়েটার। ওর কাছে পড়ে থাকার জন্য তো আসে নি। মিথ্যে মিথ্যেই এত ভাবছে ও। গরীবের বাপ মা মরা মেয়ে। একটা ভালো বাড়িতে কপালের জোরে জায়গা পেলে ভালই তো হবে। চট করে একবার দরজার কাছে রাখা ছোট্ট টুল টার দিকে তাকায় শিখা। কাকিমা মাছ মাংস সব দিয়ে দিয়েছেন।মনে মনে ভেবে রেখেছিল ও মাংস টা রাতে খাবে। তাহলে ও বেলা আর কিছু রান্না করতে হবে না। কখানা রুটি সেঁকে নিলেই চলবে। আর মাছ যে দুটো কাকিমা দিয়েছেন তার সঙ্গে সকালে নিজে যে ডাল তরকারি রান্না করে এসেছে ওই দিয়ে হয়ে যাবে। তিন জনে একটু একটু করে ভেঙে খেয়ে চালিয়ে দেবে। মনে এখন ঠিক করে নেয় শিখা। একটা মাছ মেয়েটাকেই দেবে। আর মাংসও। ওর না হলেও চলবে। কাকিমা প্রায়ই দেন সব ভালো ভালো খাবার। খায় তো ও। আজ মেয়েটাকে দেবে। তবু একদিন এক বেলা ভালো করে খাক। ওর সংসারে এসেছে। অতিথি তো বটে। কত রাগ করেছে কাল। আজ একটু যত্ন করবে না ? রান্না শেষ। রিন্টি গ্যাস পরিষ্কার করছে। চারদিকটা একবার দেখে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল শিখা। কাপড়টা কেচে মেলে দিয়ে যেতে হবে। মিনিট দশেকের মধ্যেই রিন্টি কে নিয়ে দোলা বৌদির বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে শিখা।