ননীগোপাল নিজের মনে বকবক করতে থাকে। ভবেশ বলে “কী হচ্ছে কী ননীদা। একশবার বলছি একটা ব্যবস্থা ঠিক হবে”।আবোলতাবোল বকে যায় ননীগোপাল। ভবেশকে উদ্দেশ্য করে বলে “জীবনের এটাই সত্য ভবেশ। সংসারে আমি শুধুই সং। টাকা উপায়ের যন্ত্র ভেবে রেখেছে। তুই একবার ভেবে দেখ আমার মৃত্যুতে ওদের কিছুই যায় আসে না। কী করে এসব বলল”!
ভবেশ বললে “এসব নিয়ে এত ভাবনা। তোমাকে নিয়ে আর পারি না গুরু। সত্যিই! কী যে বলি! একটা ব্যবস্থা করবই। বৌদিকে শুধু লাইনে আনতে হবে। উনি পুত্র স্নেহে অন্ধ। ব্যাপার টা ঠিক আঁচ পাননি”।
ননীগোপাল এর সন্দেহ দানা বাঁধছে। তার বাড়িতে কী একটা যেন ষড়যন্ত্র চলছে। কিছুতেই সে এসব বরদাস্ত করবে না। মনের মধ্যে কতদিনের কত ভালোবাসার কথা উদয় হচ্ছে। এই সংসার এর কথা ভেবে নিজের চাওয়া পাওয়ার বিসর্জন দিয়ে জীবনের মাঝরাস্তায় তার দাম কানাকড়িও নয়। একি নির্মম বাস্তবতা।
আজ অফিস থেকে দুপুর দুটোতে বেরোলো ননীগোপাল। বাড়িতে পৌঁছে দেখল সেখানে হৈ হৈ কান্ড। রীতিমতো খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার চলছে মনে হল। না না। ননী এখন বাড়িতে ঢুকবে না। ওদের শলাপরামর্শ শুনতে হবে ওকে। এরা চলে ডালে ডালে,ননীগোপাল চলে পাতায় পাতায়।
বাড়ির পিছনে বাগানে আশ্রয় নিল ননীগোপাল। ঘরের মধ্যে একটা মেয়ে। নিশ্চয়ই ওই কুহকিনী। গিন্নি তো গদগদ । যেন ছেলের বৌ হয়েই গেছে। ননীগোপাল মনে মনে গজরায় “ক্যামন মেয়ে গা তুই। শ্বশুর ঘরে আসার আগেই শ্বশুর এর মৃত্যু চাইছিস। তার মানে টাকা তোর কাছে ইহকাল পরকাল।
গিন্নিমার একটাই বক্তব্য “সন্তানের জন্ম দিয়েছে তাই কর্ম করাই উচিত। আর বাঁচেনি একদম তাতো নয়। অতদিন বাঁচলে। চাকরি করলে। এখন যদি মরলে ছেলেটা স্বাবলম্বী হয় তাতে সব দিক দিয়েই মঙ্গল।
“বল বল।বলে যা। একদিন বুঝবে স্বামী কী জিনিস। এখন বুইতে পারছিসনা”।ননীগোপাল এইসব ভাবে আর চোখটা নাচায়। মনে হয় পাগল হয়ে যাবে এবার। উফফ! কী সাংঘাতিক! এবার ছেলে মুখ খুলল। বললে “চুপ করো সোনা। আমার বাবা রাজি হবে না। সে নিজেকে ভালোবাসে। ছেলের ব্যাপারে তার ভাবতে বয়ে গেছে। “ কুহকিনী বললে “তবুও আমার মনটা তেমন নয়। কিছুদিন টাইম দিচ্ছি। এর বেশি আর কী বা করতে পারি বলো ডিয়ার। পাগলেও নিজের ভালো বোঝে। তোমার বাবা আত্মসর্বস্ব।”
ছেলের মা কেঁদে ওঠে “তোমার গুণের তুলনা নেই মা। আমার কপালটাই খারাপ। কোনও দিন সে ছেলে বৌ কে ভালোবাসেনি। তুচ্ছ মানুষের জীবন। আজ আছে কাল নেই। এমনিতেই আর দশ বারো বছরের খেল ছিল জীবনের। সে মানতেই চায় না। তবুও আজ বাড়িতে আসুক। বুঝিয়ে বলবো। আমি মরলে যদি হোতো তবে তো মিটেই যেত। দেখি। কী বলে আজ।”