“ শাক রান্না করতে পারো?” দ্রুত ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বলেছে রিন্টি। “ তাহলে ওখানে কড়াই আছে। আমি মাছের মশলা করতে করতে শাক টা বসিয়ে দাও। তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। ” আর দেরি করে করে নি রিন্টি। জিজ্ঞেসও করে নি কোথায় কী মশলা আছে। গ্যাসের ওপর কড়াই বসিয়ে তেল দিয়েছে। নিজের কাজ করতে করতে আড় চোখে দেখেছে শিখা। বড়ি ভেজে তুলে রাখছে ও। তারপর তেলে পাঁচ ফোড়ন দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে রাখা আলু বেগুন ছেড়েছে। সব কিছুতে বেশ একটা অভ্যস্ত হাতের ছোঁয়া। তাড়াহুড়ো নেই কিন্তু একটা ছন্দ আছে। ধীর স্থির আত্মস্থ ভাবে নিজের কাজটা করছে মেয়েটা। সুন্দর সুগন্ধ বেরোলো শাক ভাজার। বুঝে গেল শিখা। এই মেয়েকে কাজে দিলে যদনাম হবে না ওর। শুধু যে ভালো রান্নার হাত তাই নয় নজর ও আছে। ঠিক খেয়াল রেখেছে শিখা কোথা থেকে কী নিচ্ছে। মানে মেয়ের বুদ্ধিও আছে। দোলা বৌদি যদি কোথাও লাগিয়ে দিতে পারে তাহলে বাঁচা যায় । আবার একবার ওর দিকে চায় শিখা। দেখতে শুনতেও মন্দ না। গায়ের রঙটাও পরিষ্কার। তবে ঠাণ্ডা ঠান্ডা খুব। সাত চড়ে যেন রা নেই মেয়ের। কাল রাতে যখন এলো সেই যে চুপ করে দাওয়ায় বসে ছিল । তো বসেই ছিল। নড়ে নি একবারও। চুপচাপ পাথরের মূর্তির মত। শিখা সুখেন কে দিয়ে ডাকতে তবে যেন প্রাণ পেল। রুটি দুটো খেল একেবারে নিঃশব্দে। রাতে পাশে নিয়েই শুয়েছে শিখা। কিছুটা সুখেনের ওপর রাগ করেই। তখনও দেখেছে এক পাশে কাত হয়ে সেই যে শুলো মেয়েটা একটু নড়ল না। সারাদিনের ধকল,তার ওপর সুখেনের ওপর অভিমান এসব নিয়ে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল শিখা। একবার ঘুম ভেঙেছিল। তখন বোধ হয় মাঝ রাত। দেখেছিল। চুপ করে নিজের দুই হাঁটুর মধ্যে মাথাটা গুঁজে নিঃশব্দে কাঁদছে মেয়েটা। কোন আওয়াজ নেই। শুধু কান্নার দমকে কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর সারা শরীরটা। দেখে খুব মায়া হয়েছিল ওর। ইচ্ছে হচ্ছিল ডেকে পাশে শোয়ায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। পারে নি। সেভাবে তো ও চেনে না মেয়েটাকে। কে জানে কী ভাবে নেবে? তবে তখনই ভেবে নিয়েছিল পরের দিন কাজে যাবার সময় নিয়ে যাবে সঙ্গে করে। ঘুম থেকে উঠে দেখে ততক্ষণে ও মেয়ের স্নান টান সারা। উনুনে আগুন দিয়ে চায়ের জল চাপিয়ে দিয়েছে। এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে তৈরি করা চা পেল শিখা। আর বেশ সুন্দর চা। মেয়ের হাতে তার আছে। নিজেদের রান্না ভোর বেলাতেই সেরে নেয় শিখা। নাহলে ফিরে গিয়ে আর ইচ্ছা করে না। আজ তো ওই মেয়েই হাতে হাতে জোগাড় দিয়েছে সব। এমনিতে খুব বেশি কিছু ঘরে রান্না করে না শিখা। কাকিমা, বৌদি প্রায়ই এটা ওটা টিফিন বক্সে ভরে দিয়ে দেয়। দুটো মানুষ হয়ে যায়। ভাত আর একটা ডাল কী তরকারি করলেই চলে যায়। যেদিন সেরকম কিছু থাকে না সেদিন বাড়ি ফিরে একটু ভাজা ভুজি করে নেয় বা যাবার পথে বাজার থেকে একটু মাছ নিয়ে যায়। মাছ দেখলে সেদিন সুখেন বেশি ভাত খায়। “ আর কিছু হবে?” রিন্টির ডাকে চমক ফেরে শিখার। তাকিয়ে দেখে শিখা। শাক রান্না করে সুন্দর করে পাত্রে ঢেলে রেখেছে ও। ওপর দিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে বড়ি ভাজার গুঁড়ো। “ এবার গ্যাসের উনুন পরিষ্কার করতে হবে।” আঁচলে মুখ মুছে ঘুরে দাঁড়ায় শিখা। “তুমি সরে যাও।আমি করে দিচ্ছি। তুমি একটু বস। হাঁপিয়ে গেছ। আমি বাকিটা করছি।” শিখাকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই কাজ শুরু করে রিন্টি। বাধা দিতে গিয়েও পারে না শিখা। সত্যিই বেশ হাঁপিয়ে গেছে ও । দু রকম মাছ। মাংস। তরকারি ডাল। শাক ভাজা টা তবু মেয়েটা করেছে। এরপর আছে আবার দোলা বৌদির বাড়ি। সেখানে এত রকম রান্না নয় কিন্তু ঝামেলা প্রচুর। ভীষন সৌখিন বৌদি। কী সব ফোন দেখে দেখে রান্না শেখে আর সেগুলো ওকে দিয়ে করায়। কত রকমের জিনিস ! ক্যাপসিকাম যে এত রঙের হয় তার আবার এত রকম নাম ! এসব কি ও আগে জানতো ? তার পর ওই সবুজ রঙের ফুলকপি। কী যেন নাম ? হ্যাঁ হ্যাঁ। ব্রোকলি। বাপরে ! এসবও বাজারে পাওয়া যায় হ্যাঁ ? জানাই ছিল না। বৌদির রান্নার এসব লাগে। খেতে যে বিরাট ভালো লাগে তা নয় তবে বৌদি বলে খুব নাকি পুষ্টিকর। ধুস ! ওদের ঘরে ওসব পুষ্টিকর দেখলে চলবে ? মুখে স্বাদ না লাগলে এক থালা ভাত ঠেলবে কী করো ওটা দিয়ে ?