তারপর তো ওদের চোখের সামনে দিয়েই তেজ দেখিয়ে বেরিয়ে এসেছে শিখা। কিন্তু বেশি দিন চলবে না। ওর বাপ আর সৎমা উঠে পড়ে লেগেছে ওই নিকুঞ্জ বাবুর বাজারের ঘরে ওকে তুলে দেবে বলে। লোকটা নাকি বলেছে কী দরকার কারখানায় কাজ করার। ওসব ছোট লোকের কাজ। নিকুঞ্জ ঘোষের যাকে মনে ধরেছে সেকি ওসব আজ বাজে জায়গায় কাজ করে? বলুক না শিখা কত টাকা দরকার? এক্ষুনি বার করে দেবে নিকুঞ্জ ঘোষ। আর ওর সব দিকেই তো নজর রাখবে ও। ব্যাংকে টাকা রাখবে ওর নামে। বাজারের যে বাড়িটা ভাড়া নিয়েছে সেটাও লিখে দেবে ওর নামে। আর কী চাই? ব্যস শিখা শুধু একটু কাছে বসবে। সেজে গুজে সন্ধেবেলা ওর জন্য অপেক্ষা করবে। উনি কাজ সেরে সন্ধ্যেটা ওর সঙ্গে কাটিয়ে আসবে। মানে পাক্কা বেশ্যার জীবন যাপন তুলে ধরেছে নিকুঞ্জ ঘোষ ওর চোখের সামনে। আজ কাল খুব ভালো ভালো বাজার হয় ওদের। রোজ মাছ। সৎমার পরনে নতুন শাড়ি। কানের কাছে সব সময় বলছে ওর বাপ টা। তুই যদি যাস তাহলে বাকিরা খেতে পাবে।ওদের কথা ভাব। তোর ভাই বোন। সব মিলিয়ে ভীষন চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ওর ওপর। রাতে ঘুমোতে ভয় করে। কী জানে কখন ঘরে লোক ঢুকিয়ে দেয় বাপ আর সৎ মা মিলে। কিন্তু শিখাও ওদের কথা শুনবে না। “ সে তো একশোবার। ” জোর দিয়ে বলে ওঠে সুখেন। “ধনাইকে আমি অত কেয়ার করিনা। আমার ভয় নিকুঞ্জ ঘোষকে। পয়সা আছে লোকটার। ক্ষমতাও আছে। বাড়ি ফেরার পথে লোক লাগিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে তুলে নিতে যেতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে সরে যেতে পারলে ভালো। ” বিপদের গুরুত্ব টা ভালই বুঝতে পারছিল সুখেন। আর খুব কষ্টে ওর ভেতরটা মোচড় দিচ্ছিল । আহা রে ! কী ভয় আতঙ্কে বাঁচছে মেয়েটা ! মনে মনে স্থির করে ফেলে ও। নাহ ! ওকে ভয় পেলে চলবে না। আজ রাতেই নিমাইদাদের হয়ে সব বলবে ও। মনে মনে প্ল্যান ছকে নেয় ও। কালকের দিনটায় হবে না। কারখানাতে না জানিয়ে যাওয়া যাবে বা। অনেক গুলো টাকা মার যাবে তাহলে। কালকে ছুটির ব্যবস্থা করে নেবে। কোনদিন ছুটি বা কামাই করে না বলে কারখানায় ওর রেকর্ড খুব ভালো। তাই ছুটি পাওয়া খুব একটা অসুবিধে হবে না। আর হাতে বেশ কিছু টাকাও পেয়ে যাবে। গোবিন্দ দাকে। বললে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। পরশু ভোর ভোর মানে প্রায় রাত থাকতে বেরিয়ে যাবে ওরা। সোজা হাওড়া ইস্টিশন। সেখান থেকে তারকেশ্বর। হ্যাঁ। পিসি অবাক হবে। দুঃখ ও পাবে। কিন্তু বুঝিয়ে বলল বুঝবে না এমন মানুষ নয়। ঠিক বুঝবে। বিয়ে টা ওখানেই সেরে নেবে সুখেন। পিসি দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দেবে সেটাই ভালো। এখন শিখা কি পারবে? চুপি চুপি ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে ? এখনো দুটো রাত। পারবে তো? “ এক কাজ করলে হয়না ?” গালে হাত দিয়ে বসে সবটা শোনার পর মালতী বলে উঠল, “ এই দু’টো দিন তুই যদি পারুলের বাড়ি থাকিস ? কেমন হয়? কী রে পারুল চুপ মেরে গেছিস কেন ? কিছু বল।” সত্যিই পারুল এতক্ষন চুপ করে বসেছিল। এবার ঘাড় নাড়ল। “ আমার কোন অসুবিধে নেই। থাকতেই পারে। তবে আমাদের খোলার ঘর। মাটির দেয়াল। শিখার কষ্ট হবে।” ভ্রু ভঙ্গী করে তাকালো শিখা। যত বাজে কথা। “ আমার তো পাকা ঘর। কিন্তু উপায় আছে? হতচ্ছাড়া মিনসে রোজ গলা পর্যন্ত গিলে আসে। আর তারপর শুরু হয় পিরিত করার ন্যাকামি। ও সব তোরা সহ্য করতে পারবি না। ছোট ছোট বাচ্চা গুলোর সামনে বিছানায় টেনে নিয়ে যাবে বলে –” বলতে বলতে থমকে যায় মালতী। বোধ হয় খেয়াল পড়ে সুখেনের সামনে এসব কী বলে ফেলছে ও। “ তাহলে পারুলের বাড়িতে এই দুটো দিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে কি?” আপনি তুমি বাঁচিয়ে এটুকুই জিজ্ঞেস করতে পারে সুখেন। “ নাহ !” , ঘাড় নাড়ে শিখা। এখন হঠাৎ যদি বাড়িতে না ফেরে দুদিন তাহলে বাড়ির লোকের সন্দেহ হবে। খোঁজাখুঁজি লাগিয়ে দেবে। আর তারপর জোর করেই ওই নিকুঞ্জ ঘোষের বাড়িতে তুলে দেবে ওকে। এখন কিছু করার দরকার নেই। এই দুটো দিন চোখ কান খোলা রেখে কাটিয়ে দেবে ও। কাল কাজে আসার সময় দুটো কাপড় জামা ব্যাগে করে এনে সুখেনের কাছে দিয়ে দেবে বরং। পরশু ভোর বেলা খালি হাতে চুপি চুপি বেরিয়ে আসবে।
খুব সুন্দর এগিয়ে চলেছে … আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম …