রাজা প্রতাপ সেন দীর্ঘকাল রাজপাট শেষে আজ বড় ক্লান্ত, বড় বিধ্বস্ত! রাজাসন-রাজমুকুট কোনোটাই নিষ্কণ্টক নয়! বড় অস্থির এ-মন!
সারাজীবন শুধু আধিপত্যের প্রতিযোগিতা আর পরিবার-প্রজাদের আশা পূরণের দায়! মন্ত্রীদের হিংস্র-অভিলাষ তলোয়ারের থেকেও ক্ষুরধার!
একটু একা হওয়া তাই আজ বড় প্রয়োজন!
কিন্তু এ-পাগলের প্রলাপ, রাজাকে ভিক্ষে দেবে এমন দুঃসাহস কার! তবুও আজ নিঃস্ব হতে চায় এ-মন!
একদিন ছদ্মবেশে ভোরের অন্ধকারে পথ হেঁটে চলেছেন দরিদ্র নারায়ণ…।
কয়েক ক্রোশ এগোবার পর একটি আম বাগান নজরে পড়ে, ছোট এক বালক এক টুকরি আম নিয়ে দৌড়ে পালায় রাজার পথ ধরে!
মুখোমুখি হতে রাজা সুধায় তারে-
“তুমি এভাবে ছুটে পালাও কেন হে বালক! এ-আম তুমি কোথায় পেলে”?
“কোথা’ আর পাব, কুড়িয়ে পেয়েছি সব। কাল উঠেছিল ঝড়, ঘুম থেকে উঠে তাই ছুটে আসি আর খুঁজে বেড়াই এ-নগর। এ-বাগানের মালি বড্ড পাজি, যা দেখে তাই কেড়ে নেয়, মুখে শুধু ওঁর গালি!
তুমি একটাও পাওনি বুঝি”?
“এই বুড়ো বয়সে তোমার মতো ছুটতে পারি নে যে, তাই কিছুই জোটে না এই অভাগার ভাগে”!
“তাতে কি, আমি তো পারি! ঝড় হলেই তুমি আসবে, আমি অপেক্ষা করব। কিছু দেব, আমি যা পাব! এই নাও, আজ শুধু কটা আম”।
“এত নয়, এত নয়, একটি দিলেই হবে”!
“সেকি! তোমার মা-বাবা, ছেলেমেয়ে, তারা কি অনাহারে রবে? না কি কেউ নেই তোমার এ-ভবে”?
রাজা খানিক অবাক হয়ে সামান্য ঝুঁকে পড়ে হাত পাতলেন-
“এভাবে নয়, তোমার গায়ের কাপড়টি আমার সামনে মেলে ধরো, সনাতন বৈরাগী যেভাবে ধরে সে-ভাবে ধরো”!
রাজপ্রতাপ ধুলায় লুটায়ে শেষে
বালকের সমুখে বসে’ সনাতন-বেশে!
দরিদ্র মিষ্টি বালক দুষ্টু হাসি হেসে
দীর্ঘ হতে দীর্ঘ হয় অপরূপ বেশে!
পরনে তার রাজবেশ,
মাথায় স্বর্ণচূড়,
এক হাতে চক্র-সুদর্শন,
আজ হল তাঁর….”রাজ-দর্শন…..!