অসহায় চিরকাল শোষিত
কৌশিক গাঙ্গুলী
একটা বড় মাছ ছোট মাছকে পক করে গিলে ফেলল।
এই হাতুয়া গ্রামে সবাই অবাঙালি, মতি কোন ছোটবেলায় কোথা থেকে ট্রেনে চেপে এই গ্রামে হাজির হয়েছিল। একটু হাবাগোবা, সাতকুলে কেউ না থাকায় ছন্নছাড়া।
এখন তার বয়স ২৮ এর কাছাকাছি মনে হয়, সারাদিন এর ওর তার ফাই ফরমাশ খেটে কোনরকমে আধপেটা খেয়ে বেঁচে থাকা, হাবাগোবা বলে সবাই ঠকাতে চায়, তাতেয় মতির মুখে হাসি লেগে থাকে। কেউ কেউ বলে পাগলাটা সবেতেই হাসে। তারা জ্ঞানী,মানি, পন্ডিত লোক সরল মানুষকে পাগল বলে দেগে দিতে পারে।
এতে কোন সামাজিক অন্যায় নেই।
যাইহোক যার খাবারের ঠিক নেই, তার আবার শোবার ঘর। সারাদিন পরিশ্রম করে ধনীরামের মুদির দোকানের সামনে রোয়াকে গামছা পেতে শুয়ে পড়ে সে, পাশে রাস্তার কোন কুকুরও শুয়ে থাকে। ধনীরাম সেই সুযোগে মোতিকে দিয়ে বিনা পয়সায় ফাইফরমাশ খাটায়, যেন তার ঘরে মতিকে শোবার জায়গা দিয়েছে। ধনীরামের টাকা থাকলেও তার দোকানের কোন কর্মচারীকে মাইনে দিতে চায় না, তাই তার দোকানে কাজের লোক টেঁকে না।
আর মতি তার দোকানের সামনে রোয়াকে শোয় বলে, ধনীরাম ভাবে সে কত না উপকার করেছে মতির। তাই বিনা পয়সায় ফাইফরমাশ খাটাটা মতির কর্তব্য।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত একটা আশ্রয়ের ভরসায় মতির রাত কাটে।
একদিন ঘটে গেল নির্মম রসিকতা। সকালবেলা দেখা গেল ধূর্ত ধনীরামের দোকান ভেঙে বড় ধরনের চুরি হয়েছে। আর দোকানের সামনে পড়ে আছে অসহায় মতির রক্তাক্ত লাশ। হয়তো বাঁধা দিতে গিয়েছিল চোরেদের দলকে।
একটু দূরে ভেলু কুকুরটা করুন সুরে কাঁদছে।
—oooXXooo—