সজনেফুল
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
(প্রথম পর্ব)
এই গ্রামের নাম কানাইপুর। এখানে কুড়িঘর বামুন বাস করে। কেষ্ট চাটুজ্জে এই গাঁয়ের হোতা কর্তা বিধাতা বলতে হয়। মানুষ টাকে সবাই মান্যি করে। ভয় আর ভক্তি দুটোই বলা যায়। চাষাভূষো গাঁ। আর বামুন দের নিয়ম কানুন তো একটা নয়। কেষ্ট চাটুজ্জে এ চত্বরে বেশি জমির মালিক। তার আবার ছটা ছেলে। বাড়িতে পূর্বপুরুষ এর আমলের রাধা দামোদর এর মন্দির। তার উপরে আবার পশুপতিনাথ আছেন। তবে আজ বড় ই উদ্বেগ কেষ্ট চাটুজ্জের গলায়।
পাশের গাঁয়ের নাপিত হরিপদ ভরসা। কেষ্ট চাটুজ্জের খুড়িমা মরেছে। আজ দশদিনে ঘাটে ওঠা। বারোটা বেজে গেল এখনও হরিপদ র দেখা নেই। সবাই মিলে মানে গোটা গুষ্টি ঘাটের মাথায় বসে আছে।
হরিপদ হাসতে হাসতে এল সাড়ে বারোটার মাথায়। বললে “একটা কাজ কী আর কাকু। এই ক্ষৌরকর্মের সাথে ঘটকালিটাও করি কিনা। নৈলে সংসারের যা হাল। চুল দাড়ি কামিয়ে কটা পয়সা হয়”।
খুড়িমার মেয়েটা ইনিয়ে বিনিয়ে ঘাটের মাথায় কেঁদে যাচ্ছে। কেষ্ট ভাবে “কাঁদবে তো বটেই! হাজার হোক মা যখন। তবে গত দুবছর খুড়িমা শষ্যাশায়ী।
কেউ একবার উঁকি মেরে দেখেনি। আর এখন এত মায়া। খুড়িমার বয়স নয় নয় করে নব্বই তো বটেই। সব দায়িত্ব সামলেছে এই কেষ্ট। খুড়িমার ছেলে নেই। আর পশুপতিনাথের দেবত্র সম্পত্তির লোভ কেউ ছাড়তে পারে! অথচ পুজোর বেলায় সেই কেষ্ট।
হরিপদ একে একে চুল কাটতে লাগল।বললে “আপনাদের এত জন ঘাটে উঠবে। বড় সংসার
। একটা নাপিতে কি আর হয় ?”
কথাটা সত্য। কেষ্ট বলল “গাঁয়ে একটা নাপিত নেই। কথাতেই আছে নাপিত ছুঁয়ে দিলেই শুদ্ধ। “
হরিপদ বললে “একটা অভয় দেন তো কথা বলি। আমার শালি পতিভাই মুকুন্দপুরে থাকে। গরীব ছাপোষা। মাথার উপরে তিন তিনটে মেয়ে। একটু জায়গা দিলে এখানে রামকুঁড়ে বানিয়ে থাকবে। আপনাদের ছাতার তলায় এলে বেচারী মুক্তি পাবে”।
কেষ্ট চাটুজ্জের চোখ দুটো চকচক করে উঠল। বললে “সে আবার আসে কখনও। তার ভদ্রাসন ছেড়ে আসতে বয়ে গেছে!”
হরিপদ বললে “আসবে বাবু আসবে। ওরা যে ভিটেটায় আছে সেটা খাসজমি। ওর পাট্টা আছে সুদখোর দীনুর নামে। দীনু বলেছে উঠে যেতে। এখন ভীষণ নাচাড়ে পড়েছে বাবু। “
ঘাটের পাশ দিয়ে বিনয় ঘোষ যাচ্ছিল। কেষ্টকে দেখে বললে “ক দিনে ঘাট করলে ঠাকুর “!
হরিপদ বললে “ঠাকুর বলছেন অথচ জানা নেই কদিনে ঘাট হয়। একথা সবার জানা হলে হাড়ি, মলে ডোম, শুদ্ধু করতে নাপিত আর পুজোর জন্য বাউন। ওই কারণেই দশদিনে কাজ”।
কেষ্ট বললে “হলে হাড়ি মানে কি”?
হরিপদ আবার ফাঁকা ফাঁকা দাঁত বার করে হাসে। বলে “আগের দিনে জন্মের পর নাড়ি কাটত হাড়িরা। তাও আবার শামুক দিয়ে”।
কেষ্ট চাটুজ্জে খুড়িমার সব কাজ করলে। গুরুদশা নিয়ে গাঁয়ের লোকেদের নেমন্তন্ন করলে। পায়ে হেঁটে গেল হরিপদর বাড়ি। গিয়ে দেখলে সেখানে আর এক ব্যক্তির আগমন হয়েছে সপরিবারে। কেষ্টর মনে হল এ নিশ্চয়ই সেই হরিপদর শালিপতি ভাই হবে। একটা মেয়ে এসে প্রায় একটা ভাঙা চেয়ার এগিয়ে দিলে। বললে “বসুন দাদু”।
মেয়েটি বেশ সুশ্রী। গায়ের রঙটা ফর্সা ছিল। মনে হয় সংসারের জাঁতাকলে পুড়ে কিছুটা তামাটে হয়েছে। একটা বিশাল আকৃতির ফ্রক পরে আছে মেয়েটা যার কোমরের সেলাই আরও নীচে। তবে আশ্চর্য এই মেয়েটার শান্ত স্নিগ্ধ চলাফেরা। চোখ দুটো বড় ই করুণ।
হরিপদ কিছুক্ষণ পরেই এল। বললে “ঠাকুর আজ আমার বাড়িতে। আমার কত ভাগ্য। আমি ঠিক সময়েই পৌঁছে যাবো। আর এরাও এখন উপস্থিত। ওদের বাস্তু থেকে তুলে ছেড়েছে ওই দীনু। কথাতেই আছে জোর যার মুলুক তার। আর কোনও ঠাঁই না পেয়ে এখানে উঠেছে। আমি নিজেও তো ছা পোষা। অত জনের পেটের খোরাক আমি কী করে জোগাই! তাই আপনাকে বলছি ঠাকুর আপনার তো অত জমি জায়গা। যদি ওদের একটু ঠাঁই দেন”।
কেষ্ট বললে “সে দেখা যাবে। আগে তো কাজ মিটুক। এদের সবার নেমন্তন্ন রৈলো”। তারপর এদিক ওদিক চাইতে লাগল কেষ্ট। যেন কাকে খুঁজছে।
হরিপদ বললে “আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?”
কেষ্টর কেন জানিনা ওই মেয়েটির প্রতি একটা বাৎসল্য কাজ করছে। বললে “সেই মেয়েটিকে খুঁজছি”।
হরিপদ হাঁক দিতে লাগল “ও শঙ্করী। কোথা গেলি রে”!
শঙ্করীকে কোথাও পাওয়া গেল না। হরিপদ বললে “কোথায় যে যায় মেয়েটা। এই তো ছিল। “
হাঁক ডাকে আরও সবাই সামনে হাজির। হরিপদ বললে “এই মেয়েটা মেজো। এর নাম নন্দরাণী। আর ছোট্ট মেয়েটির নাম শোভা।”।
কেষ্ট দেখলে ওদের মাও হাজির। পরনে যেন ন্যাকড়া কুড়ানির পোশাক। চোখ দুটো হলুদ। বয়স আর কত! অপুষ্টি গ্রাস করেছে। মনটা বিষাদগ্রস্ত হয়ে গেল। একটা সময় কেষ্টর অমন কষ্ট ছিল। তার পর যখন তিনটে ছেলে হয়ে গেল তখন কেষ্টর হুঁশ হয়েছিল কিছু করতে হবে। সেসব দিন যেন ভেসে উঠল তার মনে। এখন তো ছেলেদের কর্মে আগ্রহ নেই। ছোট তিনটে দিনরাত গান গেয়ে আর পান খেয়ে বেড়ায়। বড় দুটো সরকারের চাকর। একজন রেলে আর একজন পোস্ট আপিসে। সেজোটাকে একটা হাস্কিং মেশিন করে বসানো হয়েছে। তিনটে বৌ নাতি নাতনি। কেষ্টর মনে হল এদের ঠাঁই দিলে অনেক উপকার হবে। ফাই ফরমাশের লোক তো চাই।
হরিপদ কে জিজ্ঞেস করলে “তোমার শালি পতি ভাই এর নামটা যেন কী?”
হরিপদ আশান্বিত হয়ে বললে “আজ্ঞে ওরনাম হল গিয়ে শ্যামাচরণ। “
কেষ্ট বাড়ির পথে রওনা হল। পথের পাশে একটা দৃশ্য দেখলে কেষ্ট। পথের দুদিক থেকে দুটো সজনে গাছ ফুলের ভারে ঝুঁকে পড়েছে। নীচে বিছিয়ে পড়ে আছে প্রচুর সজনেফুল। সাদা ধবধবে টোপাটোপা। আর একটা কিশোরী মেয়ে তার কোঁচলে কুড়িয়ে নিচ্ছে। কেষ্ট দেখলে সেই মেয়েটা। হরিপদ হাঁক পাড়ছিল “শঙ্করীইইইই”। লাল ফ্রক ভর্তি সজনেফুল। কেষ্ট বললে “এখানে ফুল কুড়াচ্ছো। আর আমি যে তোমাকে খুঁজছি। আমার বাড়িতে যেও গো মা শঙ্করী”।
শঙ্করী নিজের নাম শুনে আহ্লাদিত। বললে “তরকারির বড় কষ্ট। তাই। রোজ রোজ বেসনবড়ির তরকারি ভালো লাগে না।”
সজনেফুল কেষ্টর খুব পছন্দের। বললে “ঠিক আছে মা ঠিক আছে। একদিন আমাকেও তাহলে সজনেফুল দিও। সেদিন তোমার এই বুড়ো ছেলেটাও খাবে”।
শঙ্করীকে এমন ভালোবাসার কথা কেউ কখনও বলে নি। যেখানে গেছে সকলের মনে হয়েছে এই বুঝি কিছু চাইতে এসেছে। আজ মনে হল পৃথিবীতে এখনও কিছু মানুষ আছেন। যারা ভগবানের অংশ ।
খুড়িমার কাজে কোনও অভাব রাখলে না কেষ্ট। গোটা গাঁ খেলে কব্জি ডুবিয়ে। খুড়িমার মেয়েটা কাজের শেষে আমতা আমতা করে বললে “মায়ের সম্পত্তি আমি বুঝে নিতে চাই “। কেষ্ট বললে “ভিটের ভাগ আর দেবত্র পাবি না। তবে ভূবন গোয়ালার দরুন উপরমাঠের জমি অর্ধেক তোর প্রাপ্য। আর বাকি সব সম্পত্তি খুড়িমা আমাকে দলিল করে গেছে”।
খুড়িমার মেয়ে তেলে বেগুনে চটে গেল। বললে “ভাঁওতা দেবার জায়গা পাও নি। আমার সম্পত্তির লোভে ভক্তি পিরীত।মাগনা নাকি!আমি তোমাকে ভালোমানুষ ভেবেছিলাম। আর তুমি আমার সম্পত্তিতে লোভ দিলে। মা কখনও তোমার নামে করে নি। সব মিথ্যে। আমার পাইপয়সা হিসাব চাই “।
বলেই নিজের ছেলেদের ডেকে মারমুখী হল কেষ্টর খুড়তুতো বোন। তখন বেশিরভাগ মানুষ খেয়ে চলে গেছে এই যা রক্ষা। নৈলে গাঁয়ের মানুষ কী মনে করতো কে জানে! তবে হরিপদ তখনও ছিল। আর ছিল শ্যামাচরণ। কেষ্টর আশ্চর্য লাগল শ্যামাচরণ কে দেখে। ওরা মারমুখী হতেই সে এগিয়ে এসে হুঙ্কার ছাড়লে “খবরদার বলছি। মানুষ টার গায়ে হাত দিলে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। সম্পত্তির হিস্যা আদালতে বুঝে নেবে। এই সবে কাজ থেকে উঠেছেন ঠাকুর। পেটে যে দানাপানি পড়ে নি। বলি মা টা কার”?
সেদিন সব থেমে গেলেও শ্যামাচরণ কেষ্ট চাটুজ্জের মন জয় করে ফেললে। আর সেদিন সন্ধ্যার সময়ই বললে “শোন হে শ্যামাচরণ। আমার গোয়ালবাড়ির সংলগ্ন যে ভিটে ওটা তোমাকে বাস করতে দিলাম। আমার গাঁয়ে নাপিত নেই ।তোমাকেই বসালাম। আর আমার কাজের জন্য তোমার খোরাক দেবো আমি”।
শ্যামাচরণ যেন হাতে চাঁদ পেলে। বললে “আপনার গোলাম হয়ে থাকব ঠাকুর। আপনি মনিষ্যি নন,যেন দেবতা”।
ওরা পরের দিন আসবে বলে চলে গেল। কেষ্ট খামারে গেল। এখানে কত সজনেফুল পড়ে আছে গাছের তলায়। কেউ কুড়ায় নি। বাড়িতে গিয়ে গজগজ করতে লাগল কেষ্ট “গতরে তোমাদের আমড়া পোকা লেগেছে। অমন সজনেফুল। কেউ কুড়িয়ে আনতে জানো না। বুঝবে বুঝবে। বড়লোকি চাল তোমাদের ঘুচে যাবে যেদিন এই কেষ্টর নিদেনকাল আসবে”।
বাস্তবিক কেষ্টর মুখের উপর কথা বলার সাহস কারো নেই। সবাই চুপ করেই থাকল। গিন্নি শুধু গুনগুন করে বললে “খেতে ইচ্ছে হয়েছে তা বললেই হয়। “বলেই একটা সানকি নিয়ে ফুল কুড়াতে গেল। দেখলে একটা মেয়ে আগে থেকেই সজনেফুল কুড়োচ্ছে। কেষ্টর স্ত্রী চোখ কপালে তুলে বললে “কে রে তুই “?
মেয়েটার মুখখানা খুব সুন্দর। যেন দুগ্গা প্রতিমে। আস্তে করে বললে “আমি শঙ্করী। শ্যামাচরণ পরামানিকের মেয়ে। ঠাকুরের জন্য সজনেফুল তুলছি”।
এবার গিন্নিমা বুঝতে পারল। বললে “তোরা এই তো এলি। এসেই ফুল কুড়াতে লেগেছিস। “
শঙ্করী নিপুণ হাতে অনেক ফুল কুড়িয়ে বললে “তুমি নাও ঠাগমা। “
গিন্নিমার আনন্দ আর ধরে না। বললে “ডুমো ডুমো করে আলু কেটে পোস্ত দিয়ে রাঁধবো। বড় সোয়াদ। আর তুই আমার সাথে আয়। এক চ্যাঙারি মুড়ি দেবো। আর ঘরের গোরুর খাঁটি দুধ। তোরা সবাই খেগে যা।”
গরম মুড়ি ভাজতে এসেছে একটা বুড়ি। খোলার বালিতে যেই ভাজা চাল দিচ্ছে নিমেষের মধ্যেই মুড়ি হয়ে যাচ্ছে। আর অমনি ঝাঁটা কাঠি দিয়ে তুলে নিচ্ছে বুড়িটা। শঙ্করী হাঁ করে চেয়ে আছে। ভারী আশ্চর্য লাগে ওর। ওই বুড়িটা একটা সাদা থান পরে আছে। শঙ্করীকে দেখেই বললে “কে লা তুই। কার মেয়ে”?
শঙ্করী বললে “আমার নাম শঙ্করী। শ্যামা নাপিতের বড় মেয়ে।”
বুড়িটা বললে “অ বাবা। কী নাম শোনালি লো । ও তো আমার ভাসুরের নামে নাম। আমি জিভ বার করা ঠাকুর বলি। শালা হারামির হার। আমার সোয়ামীকে ঠক্কেছে। নৈলে আমার শ্বশুরের কী না ছিল। এই বড়ো বড়ো কাঁসার বাসনকোসন। তোতলাটা মরেও না। আর আমার মরণ। সেই কবে নিমাই এর বাপ মরলো। সেকি আজকের কথা রে। কিন্তু কোনও শালার বেটির খেমতা নেই যে বলে শরীর বেচে খেয়েছি। নোকের বাড়ি ঝি এর কাজ করিচি। তিন খোলা চার খোলা মুড়ি ভেজিছি। “
বুড়িটার টিকির উপর খোঁপা বাঁধা। ঘাড় নেড়ে নেড়ে বলেই চলেছে কত কথা। শঙ্করী কী বলবে বুঝতেই পারে না। গিন্নিমা আসলে বলে “ও ওরকম ই। যতবার কথা বলবি এক ই কথা আওড়াবে। তুই যা। এই বালতিতে আধ বালতি দুধ দিয়েছি। আর চ্যাঙারিতে মুড়ি। মুড়ি ঢেলে নিয়ে এখনই চ্যাঙারি নিয়ে আয়। আর দুপুরে আসবি। সজনেফুল কুড়িয়ে দিলি। একটু তরকারি নিয়ে যাবি।
গোয়াল ঘরের পাশে একটা বড় ঘর আজ শঙ্করীদের জীবনের ঘর। ওদের তো মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। আজ একটা খাটিয়া দিয়েছে এরা। কত বড় এই পাওয়া। ঘরে এসে গরম মুড়ি সবার জন্য আলাদা আলাদা বাটিতে দিল শঙ্করী। মায়ের মুখটা চকচক করে উঠল । ছোট্ট উনানে ঘুঁটের উতো দিয়ে দুধ ফোটাচ্ছে মা। অসীম মমতা ঝরে পড়ছে চাঁদের আলোর মতো । তার নাড়ি ছেঁড়া ধন আজ দুধের বাটিতে চুমুক দেবে। কতদিন ওরা দুধ খায় নি। কত দিন আগালি সিদ্ধ আর কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে ওরা খিদের জ্বালা মিটিয়েছে। এই তো সব পেয়েছির দেশ।
চ্যাঙারি দিতে গিয়ে কটা পাকা আমড়া কুড়িয়ে আনলে শঙ্করী। একটু পরেই কেষ্টর ডাক শোনা গেল। বললে “শ্যামাচরণ। গরু গুলোর জল জাবনা করে একবার এসো। ঘরের মাসুরী চাল একমণ আছে। নিয়ে যাও। তবে কাল গোলা থেকে ধান বার করে সেদ্ধ শুকনো করবে। এখন ছোটো দিনের বেলা কিনা। তাই ভোরে উঠে কাজ সেরো। বুঝতেই তো পারছ। রোদটা সেদ্ধ ধানে ঠিক মতো না খাওয়ালে চাল ভেঙে যাবে ভায়া”।
শঙ্করী দেখলে বাপ বস্তায় করে চাল আনলে। কী সুন্দর চাল। একটা কাঁকড় নেই। আজ বেশি করে চাল নিয়ে ভাত বসালে সে। ঘুঁটের গাদা এখানে। কী সুন্দর ভাতের গন্ধ। টগবগ করে ফুটছে ভাত। মানভাতে দিয়েছে শঙ্করী। অনেক টা। সাদা ধবধবে গোটা গোটা ভাত। শঙ্করীর চোখে কখন অজান্তেই জল নেমেছে। কত ভাত না খাওয়া দুপুর ওর সঙ্গী ছিল। কোথায় গেল তারা!
পাকা আমড়া নুন লঙ্কা দিয়ে মাখলে সে। আর গিন্নিমার কাছ থেকে আনলে একবাটি সজনেফুল এর পোস্ত। সবাই আজ তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে।
শঙ্করীর খুব মায়া হয় তার মায়ের জন্য। এরকম তরকারি তার মা কখনও করে নি। কী করে করবে। এই পোস্ত খুব দামী। খাবার পর এঁটো থালা মাজতে যায় মা। আজ শঙ্করী ঘুমিয়ে পড়েছে। ভাতঘুম।ঘুমের মধ্যেই স্বপ্ন দেখে কত ফুল। সাদা টোপা টোপা সজনেফুল। ঠাকুর হাসছে। গিন্নিমা হাসছে। আর শঙ্করী সজনেফুল কুড়িয়ে যাচ্ছে। বলছে “সবাই খুব ভাত খাবে। সজনেফুল থাকলে আর কী চাই!”
(ক্রমশ)