আজও হেনরিরা খাটে
সুপর্ণা দত্ত
কালো পাথুরে শরীর ছোট্ট হাতে ধরেছিল হাতুড়ি,
আমৃত্যু খেটেছিল সেই শ্রমিকের নাম জন হেনরী।
হাসিমুখে চালিয়েছে হাতুড়িটা রেলপথের সুড়ঙ্গ কাটতে,
প্রতিযোগিতা করেছে সাহেবের স্টিল ড্রিল মেশিনের সাথে।
হাতুড়িতে বিদ্যুত ঝরিয়েছে কেটেছে ভার্জিনিয়ার সুড়ঙ্গটা একা,
স্ত্রী,মেরি ম্যাক ডেলিন কতদিন পায়নি তো হেনরির দেখা।
কান পেতে শুনেছিল সুড়ঙ্গের বাইরে শুধুই হেনরির হাতুড়ির শব্দ,
মনে মনে পেয়েছিল ভয় এই বুঝি হয়ে গেল চারিদিক নিস্তব্ধ।
সাদা সাহেবটা ভেবেছিল হেনরি নামের কালো নিগ্রোটা,
পারবেনা করতে কোনোমতেই মেশিনের সাথে মোকাবিলাটা।
গ্রানাইটে গড়া পেশী থামেনি সে কোনোমতে সেইদিন,
হাতুড়ির ঘায়ে ঘায়ে ভেঙ্গেছে পাথর যেন সে এক জীবন্ত ইঞ্জিন।
হয়েছে জয়ী মেশিনের কাছে সেই কালো মানুষের পেশী,
মানুষের সৃষ্টি দুরন্ত স্টিল ড্রিল মানুষের কাছে মানে নতি।
মায়ের কোলে তার পথ চেয়ে থাকা হেনরির সেই ছোট্ট মেয়েটি,
বোঝেনি তো কাজ শেষে স্তব্ধ হয়েছে তার বাবার হৃদ যন্ত্রটি।
পাখিদের কলরবে রাঙানো পূবালী আকাশে ভেসেছিল গান সেইদিন
হেনরির বীরগাঁথা গেয়েছিল সেদিন ব্রিটিশের সিটি দেওয়া রেলইঞ্জিন।
নীল আকাশের নীচে মানুষের সুরে সুরে প্রতি মে দিবসের গানে
হেনরির হাতুড়ির সেই সুর শোনা যায় শ্রমিকের গাওয়া জয়গানে।
আজও পৃথিবীর সভ্যতা বাঁচে হাজার হাজার হেনরির শ্রমে,
যতই আসুক না আধুনিক মেশিন সেওতো চলে মানুষের দমে।
শ্রমিকের শ্রমে গড়া পৃথিবীর সভ্যতা আজও দেয়না সঠিক মূল্য তার,
তাকে করে রাখে পদানত,অপব্যবহার হয় তার অদম্য ক্ষমতার।
শ্রমিকের সম্মানে প্রতি বছর সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় মে দিবস,
স্কুল কলেজ অফিস আদালত সর্বত্র গাঁথে তারই যশ।
ছুটি পায় তারাই প্রতি বছর করতে পালন মে দিবস,
হেনরিরা আজও হাসিমুখে কাজ করে পায়না কোনো নাম যশ।
অর্থনৈতিক,সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপে
বাড়েছে বেকারত্ব,বাজারে জিনিসের বাড়েছে মূল্য ধাপে ধাপে।
আন্দোলনে পা মেলাচ্ছে আজ গ্রামে-গঞ্জে,শহরে যারা ন্যায্য দাবিদার
চাকরি হারিয়ে পথে নেমেছে তারা ফিরে পেতে নিজ অধিকার।
যোগ্য কাজের অভাবে শিক্ষাও আজ শ্রমের কাছে করছে মাথা নত
দুমুঠো ভাত দুবেলা পেতে আজ শিশু শ্রমিকও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
বাস্তব বড়ই কঠিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরে জীবন ওষ্ঠাগত
চোখে পট্টি পড়া সমাজের ক্ষমতাশালীর দিনদিন বাড়ছে দৌরাত্ম্য।
হেনরিরা আজও আমৃত্যু অক্লান্ত পরিশ্রম করে নীরব যন্ত্রণা সয়ে
শরীরের শোণিত কণা প্রতিনিয়ত মাটিতে ঝরে নোনা ঘাম হয়ে।
কালও পায়নি,আজও পায়না হেনরিরা তাদের শ্রমের যোগ্য মর্যাদা
পরাধীনতার গ্লানি নিয়ে তারা খেটে মরে আর রেখে যায় বিজয় গাঁথা।
—oooXXooo—