[লেখক পরিচিতি : প্রকৃত নাম ক্যাথেরিন ও ‘ ফ্ল্যাহের্টলি (ফেব্রুয়ারী ৮,১৮৫০- আগস্ট ২২, ১৯০৪), কেট চপিং নাম খ্যাত আমেরিকান লেখক ছোটগল্প ও উপন্যাসের স্রষ্টা। মাতৃকুল ফরাসী , পিতৃকুল আইরিশ , মিসৌরিতে জন্ম ও মেয়েবেলা অতিবাহিত করার পর স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন নিউ অর্লিয়ান্সে ,পরে লুইসিয়ানা প্রদেশে। ওঁর লেখা উপন্যাসদুটির নাম At Fault (1890) and The Awakening (1899)। ওঁর ছোট গল্প সংকলন দুটির নাম Bayou Folk (1894) and A Night in Acadie (1897) ।মৃত্যর দশ বছরের মধ্যে সেরা গল্পকার হিসাবে ওঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এই গল্পটি গুটেনবার্গ ফ্রি অনলাইন স্টোরি কালেকশন থেকে নেওয়া। ] তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া ]
বাইরে এখনও বেশ আলো, কিন্তু ভারী পর্দা ঢাকা ড্রয়িং রুমে ফায়ার প্লেসের অল্প আলোয় ঘরটাকে ছায়াকুঠুরির মত রহস্যময় লাগছিল। এই ছায়াময় পরিবেশে ব্রেন্টেন বসেছিল -এই পরিবেশে ওর তো অস্বস্তি হচ্ছিলোই না, বরং এই আলো আঁধারি কেমন একটা গোপন মায়াজাল সৃষ্টি করেছিল ঘরের ভিতর -তাই ফায়ারপ্লেসের আলোয় উদ্ভাসিত মেয়েটির মুখের দিকে সে সাহসভরে একদৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। মেয়েটি খুব সুন্দরী -বলতে গেলে গায়ের রং ধবধবে ফর্সা নয় , কিন্তু একটা তামাটে বর্ণ তার চেহারায় একটা আলাদা জ্যোতি সৃষ্টি করেছে। ফায়ারপ্লেসটার কোণের চেয়ারে সে চুপচাপ পোষা বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে ,মাঝে মাঝে বিড়ালটার গায়ে সে বিলি কাটছে আর ছায়ায় বসে থাকা মূর্তিটিটর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। তাদের মধ্যে এটা সেটা কথাও হচ্ছে বটে , কিন্তু মনে মনে দুজনেই যা ভাবছিল তা তাদের কথাবার্তায় উঠে আসছে নাI মেয়েটি ভাল করে জানে যে তরুণটি তার প্রেমে মশগুল। ছেলেটি বলতে গেলে খোলামেলা , হৈ চৈ করা মানুষ – যার মনের কথা সহজেই বোঝা যায় , আর যেটা সে আড়াল করতেও চায় না। গত দু সপ্তাহ ধরে তরুনটি একনিষ্ঠ ভাবে তার পেছনে ঘুর ঘুর করছে এটা সকলেই জানে। কিন্তু মেয়েটি চায় , তরুণটি ওকে সরাসরি প্রেম নিবেদন করুক, আর এরকম কোন প্রস্তাব পেলে সে সম্মতি জানাতে দেরি করবে না। মেয়েটি মনে মনে ভাবছে , বাছাধন টাকার কুমির , আর এরকম একটা বর পেলে কী আরামেই না থাকা যাবে! একপর্ব চা শেষ হওয়ার পর ,পরবর্তী চা আসার আগেই , ওদের দুজনের কথাবার্তার মাঝখানেই কেউ একজন ঘরে ঢুকে পড়ল । যে ঢুকলো , তাকে ব্রেন্টেন ভাল ভাবেই চেনে। মেয়েটি মুখ তুলে আগন্তুকের দিকে তাকানোতে আগন্তুক এক পা দু পা করে তার চেয়ারের দিকে এগিয়ে গেল -আর সে কিছু বুঝে ওঠার আগে তার ঠোঁটে একটা গভীর চুম্বন এঁকে দিল। মেয়েটি চেয়ার থেকে উঠে গেল প্রায় লাফিয়ে উঠে গেলেও ব্রেন্টেন উঠল আস্তে আস্তে , আগন্তুক ওদের দুজনের মাঝখানে কিছুটা কৌতুক , কিছুটা হতভম্ভ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ব্রেন্টেন , আমতা আমতা করে মুখ খুলল , “আজ অনেকক্ষন বসা হয়ে গেছে -আমি যাই -আমি ঠিক জানতাম না -যাই হোক বিদায় !’ সে দুই হাতে নিজের টুপিটা ঠিক করে নিল – মেয়েটি এই অবস্থাতেও তার উপস্হিত বুদ্ধি হারায়নি, কিছুই হয়নি এমন করে হ্যান্ডশেকের জন্য সে হাত বাড়িয়ে দিল – কিন্তু সে দিকে ব্রেন্টেন আর তাকাল না। -“সত্যি বলছি ও যে এখানে বসে আছে আমি দেখিনি। আমি জানি তোমাকে খুব অপ্রস্তুত করে দিয়েছি , কিন্তু আমি তো ইচ্ছে করে করিনি, আমাকে মাফ করে দাও সোনা। ব্যাপারটা কি বল আমায়।” ” আর এক পা এগোবে না , আমাকে টাচ করবে না – বলি, এভাবে বেল না বাজিয়ে বাড়িতে আসার মানে কী?” ” আরে অন্য অনেকদিনের মত আমি তোমার দাদার সঙ্গেই এসেছি -ও বাইরের ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল , আর আমি ভাবলাম , তুমি থাকলে একটু আড্ডা মেরে যাই !” নিজেকে একটু সামলে আগন্তুক ধীরে ধীরে কথাগুলি উচ্চারণ করল। আশা করি তোমাকে আমি বোঝাতে পারছি -আমি তো তোমাকে ছাড়া ঘরে কাউকে দেখি নি ,আর তখন নিজেকে সামলাই কী করে বল। এবার বল নাথালিয়া , আমাকে ক্ষমা করেছ?” ক’দিন পরের কথা। গলায় একটা আন্তরিকতার সুর টেনে কিন্তু মুখে একটু অপ্রস্তুত হাসি নিয়ে মেয়েটি বললো , “মি :ব্রেন্টেন ,আমি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি ?” ব্রেন্টেনকে খুব অপ্রসন্ন দেখাচ্ছিল। কিন্তু মেয়েটি যখন তার হাত ধরে নিয়ে তাকে এক কোনায় টেনে নিয়ে গেল , ব্রেন্টেনের মনে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া হল – তার মনে হল, যাক কিছু আশা এখনো আছে! “আমার হয়ত এভাবে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাওয়াটা ঠিক হয়নি -কিন্তু বিশ্বাস করুন , সেদিনের ঘটনার পর আমি খুব, খুব অস্বস্তিতে ভুগছি, আমার মনে হয়েছে আপনি হয়ত পুরো ব্যাপারটার একটা অন্যরকম মানে করে নিয়েছেন। ” সহজ সরল ব্রেন্টেনের মুখে আবার একটু আশার আলো ঝিলিক দিয়ে উঠল । মেয়েটি বলতে থাকলো , ” আমি জানি এসব বলার কোন মানে নেই আপনার কাছে, তবু বলব , হার্ভি আর আমি প্রায় তুতো ভাই বোনের মত -ও আমার দাদার সবথেকে প্রিয় বন্ধু , আর এই সুবাদে ও নিজেকে আমাদের পরিবারের একজন মনে করে !” -“তাহলে মিস নাথিয়েল ,আপনাকে মিস নাথিয়েল ডাকি খ’ন, আমার মনের কথা আপনি বুঝতে পারেন? আপনিও তাই চান?” দুপাশে পাতাবাহার ঘেরা লম্বা বারান্দাটায় হাঁটতে হাঁটতে ওদের কথা হচ্ছিল। ব্রেন্টেনের মুখে একটা উজ্জ্বল হাসির আভাস ফুটে উঠল, আর মেয়েটির মুখে জয়ের হাসি। বিয়ের দিনটিতে যথারীতি আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে হার্ভিও ছিল। সখীদের ভিড় থেকে একটু আলাদা পেয়ে সে মেয়েটির কাছে চলে এল। “জানো , তোমার স্বামী আমাকে তোমাকে কিস করতে পাঠিয়েছে!” মেয়েটির গালে একটা লাল আভা ছড়িয়ে গেল, মুখে এল হাসি I একটু গর্বের হাসি হেসে হার্ভি বলল , “মনে হয় এরকম বিশেষ দিনগুলোত মানুষ বেশ উদার হয়ে যায়। তুমি ওকে কী বলেছ আমি জানি না, কিন্তু ব্রেন্টেন আমায় বলেছে , সে চায় না এই বিয়ের জন্য তোমার আর আমার মধ্যেকার মিষ্টি সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাক। আর , যা বললাম, উনি আমাকে পাঠিয়েছেন তোমাকে কিস করতে !” মেয়েটি নিজেই নিজেকে বাহবা দিতে থাকল , কী রকম সুচতুর দাবাড়ুর মত সে তার ঘুঁটিগুলোকে ইচ্ছে মত নাড়া চাড়া করতে পারছে !হার্ভির চোখের দিকে চোখ মেলে সে চাইল , ওর গোলাপি ওষ্ঠপল্লব হার্ভির ঠোঁটের সবটুকু রস শুষে নিতে চাইল। কিন্তু এবার হার্ভি ধীরে ধীরে বলল , ” কিন্তু জানো , ওকে আমি বলতে পারিনি, বললে একরকম অপমান করা হয় – আসলে সেদিনের পর থেকে আমি কোন মেয়েকেই আর কিস করতে পারি না -বড্ড বিপজ্জনক ব্যাপার।