।। কর্ম ফল।।
ডাঃ রঞ্জন কুমার দে
ছোটো বেলা থেকেই শুনে আসছি কর্মের ফল মানুষ কে ভোগ করতেই হয়, অর্থাৎ মানুষ যে কর্ম করেন তার প্রকার অনুযায়ী, তার ফল স্বরূপ তাকেও এই জীবনেই ভালো বা খারাপ কিছু ভোগ করতেই হয়। শৈশব থেকেই মাথার মধ্যে একটা বিষয় আমাদের মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে ভালো কর্মের জন্য স্বর্গ লাভ আর খারাপ কর্মের ফলে নরকবাস।
এর কিছু আধ্যাত্বিক ব্যাখা থাকলেও বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রমাণ কতটা আছে তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়ে গেছে, তবে আমাদের মত কিছু ধর্ম ভীরু মানুষ কিন্তু অসৎ কর্ম করে তার ফল ভোগের আশঙ্কায় মন্দির, মসজিদে বা গির্জায় দৌড়ে যাই, গঙ্গা স্নান করে বাইরের শরীর টাকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করি, আবার কেউ কেউ নিজের অসৎ কর্মকে কোনো না কোনো অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে ন্যায্যতা( জাস্টিফাই) দিয়ে নিজের কৃত কর্মের জন্য অন্যকেই ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করি যাতে নিজের অপকর্ম যেনো নিজের মনকে অশান্ত করে তুলতে না পারে, নাহলে যে অপকর্মের ফল ভোগের ভয় আমাকেই কুরে কুরে খাবে।
সনাতন ধর্মের দুটো মূল ভিত্তি, কর্মফল ও জন্মান্তরবাদ। কর্ম করলে কর্মানুযায়ী তার ফল পেতেই হবে,সনাতন ধর্মের এই তত্ত্বটি পাশ্চাত্য দেশেও “karma” নামে পরিচিত। সেখানেও “Karma” এই সংস্কৃত কথাটি মানুষের জীবনে এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে , এই কথাটি এখন ইংরেজি অভিধানেও স্থান করে নিয়েছে।
মানুষের কর্ম আর তার ফল ভোগের অনেক রকম ব্যাখা ও অপব্যাখ্যা আমাদের মনে সারাক্ষণ ঘুরতে থাকে। তাই মনে হলো আমি না হয় আজ আমার মত করে চেষ্টা করি কর্ম ফলের নানান দিক গুলোকে মেলে ধরার।
প্রথম প্রশ্ন হলো কর্ম কাকে বলে?
যা অবলম্বন করে জীব জীবন ধারণ করে এবং যা বাদ দিলে জীবের জীবত্ম নষ্ট হয়ে যায় , তাকেই কর্ম বলে ।আত্মকর্মই কর্ম অপর সবই অকর্ম ।
কর্ম তিন প্রকার।
যথা – ক্রিয়মান কর্ম, সঞ্চিত কর্ম ও প্রারব্ধ কর্ম।
এখন বর্তমানে যে কর্ম করা হচ্ছে , তার নাম ক্রিয়মাণ কর্ম ।বর্তমানের আগে এই জন্মেই যা কিছু কাজ করা হয়েছে , অথবা আগের অনেক মনুষ্য জন্মে করা কাজ , যা সংগৃহীত হয়ে আছে , তাকে সঞ্চিত কর্ম বলে।
আবার ঐ সঞ্চিতের মধ্যে যে কর্ম ফলদানের জন্য প্রস্তুত অর্থাৎ খোলা হয়ে আছে , তাকে প্রারব্ধ কর্ম বলে।
প্রত্যেক কর্ম আবার দুই প্রকার , শুভ কর্ম ও অশুভ কর্ম। এই শুভ ও অশুভ কর্মের ভিত্তিতে পাপ ও পূণ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। পাপ ও পুণ্যের ফলে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ফল ভোগ করে থাকে।
তাহলে কর্ম ফল বলতে আমরা কি বুঝি ?
কর্মফল হলো কর্ম ও তার পরিণতি, কেউ তার কর্ম থেকে পালাতে পারে না, কর্ম তাকে যেমন করতেই হয়, তেমনই তার পরিণতি কেও তাকেই ভোগ করতে হয়,তবে এটাও ঠিক যে মানুষ যে কর্ম করেন তার সে ভালই হোক বা খারাপ সেটা শুধুই যে তার উপর প্রভাব ফেলে তাও নয়,তার ভালো কাজে যেমন পারিপার্শ্বিক আরো দশটা মানুষ সমৃদ্ধ হন, তেমনই তার খারাপ কাজেও তার পারিপার্শ্বিক আরো দশটা মানুষেরও ক্ষতি হয়ে যায়।
কতকগুলো কর্মের ফল তাৎক্ষণিক হয়। কতকগুলো কর্মের ফল দেরিতে হয়। কতকগুলো কর্মের ফল ধীরে ধীরে অনেক দিন ধরে চলে। আবার কতকগুলো কর্মের ফল স্বল্প স্থায়ী হয়। এগুলো নির্ভর করে কর্মের প্রকারভেদের উপর।
কর্ম ফল যে ভুগতেই হয় তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক, গাছে সুন্দর পাকা ফল ঝুলছে, প্রথম দেখলো চোখ, লালসা জন্মালো, কিন্তু চোখ তো যেতে পারবে না তাই গেলো পা, এবার ফল পারবে কিভাবে??? প্রয়োজন পড়ল হাতের, হাততো পেড়েই খালাস,খাবে কে?? খেলো মুখ পেটে গেলো। এবার মালীর টনক নড়েছে, তাই লাঠি খেলো পিঠ। বেচারা পিঠ বলল আমার কি অপরাধ, আমি তো দেখিনি, পারিনি, খাইওনি। তাই মার খেয়ে জল পড়ল চোখের কারণ প্রথমে ফল দেখে লালসায় চিক চিক করে উঠেছিল চোখ। অর্থাৎ যে পাপ করে তার ফল ঠিক আবার তার কাছেই ফিরে আসে।
কর্মফলভোগের ধারণাটি আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দর্শনের অংশ, যা বিজ্ঞান দ্বারা সরাসরি ব্যাখ্যা করা কঠিন। তবে, কর্মফলভোগের সাথে সম্পর্কিত কার্য-কারণ সম্পর্ক, কর্মের প্রভাব, মন ও মস্তিষ্কের ভূমিকা, এবং মানব সমাজের ওপর কর্মের প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলি বিজ্ঞান দ্বারা আলোচনা করা যেতে পারে। বিজ্ঞান কর্মফল ভোগের ধারণাটিকে সরাসরি প্রমাণ করতে না পারলেও, কর্মের প্রভাব মানুষের জীবন এবং মানব সমাজের উপর যে গভীর প্রভাব ফেলে, তা বিভিন্ন গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণে দেখা যায়। যেমন, ভালো কাজের ফলে মানুষের মধ্যে মানসিক শান্তি, সামাজিক সম্পর্ক উন্নত হয়, আর খারাপ কাজের ফলে মানসিক চাপ, সামাজিক সমস্যা দেখা যায়।
যদি এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিতে যাই তাহলে নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী বলতে হয় যে, “সমস্ত ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। ” তাই যে কর্ম আমরা করি তার প্রতিক্রিয়াও আমাদের জীবনে সমান ভাবেই ফিরে আসে। যেমন নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ালে মানুষের ভালবাসা পাওয়া যায়, তেমনই মানুষের সথে বেইমানি করলে, বিশ্বাসঘাতকতা করলে মানুষ তাকে ঘৃণা করে। তাই কর্মের ফলে ঠিক একদিন ফিরে আসে, শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
কর্মফল” বা “কর্মের ফল ফলবেই”(law of Karma) এই ধারণাটির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সরাসরিভাবে নেই, তবে কিছু প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান তত্ত্ব এই ধারণার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।বিজ্ঞান “কারণ এবং ফল” এর ধারণাটি মেনে চলে। প্রতিটি ঘটনার একটি কারণ থাকে, এবং এই কারণটি একটি নির্দিষ্ট ফল তৈরি করে। কর্মের ফলও এই নীতির সাথে সম্পর্কিত, যেখানে একটি কর্ম (কার্য) একটি ফল (কার্যফল) তৈরি করে।
পদার্থবিদ্যার ফ্লুয়েন্স (fluence) ধারণাটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি বস্তুর উপর প্রয়োগিত শক্তির পরিমাণ বোঝায়। কর্মের ফলও এই ধরনের ফ্লুয়েন্সের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। একটি কর্ম (বা কার্যকলাপ) একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি ব্যক্তির উপর একটি প্রভাব ফেলে, যা পরবর্তী সময়ে সেই ব্যক্তির জীবন বা পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
সিস্টেম থিওরি অনুসারে, একটি সিস্টেমের প্রতিটি অংশ একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, এবং একটি অংশে পরিবর্তন অন্য অংশেও প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মের ফলও এই সিস্টেম থিওরির সাথে সম্পর্কিত, যেখানে একটি কর্ম (বা কার্যকলাপ) একটি ব্যক্তির জীবনে বা সমাজে একটি প্রভাব ফেলে, যা সেই ব্যক্তির জীবন বা সমাজের অন্য অংশগুলিতেও প্রভাব ফেলে।
সামাজিক মনোবিজ্ঞান ধারণা করে যে মানুষের আচরণ তাদের সামাজিক পরিবেশ এবং তাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। কর্মের ফলও এই ধারণার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে একটি কর্ম (বা কার্যকলাপ) একটি ব্যক্তির সামাজিক পরিবেশ বা অভিজ্ঞতার উপর প্রভাব ফেলে, যা সেই ব্যক্তির পরবর্তী আচরণ বা সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, কর্মফল একটি মৌলিক ধারণা, যা কর্মের (কাজের) ফলস্বরূপ জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা ও অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত।জ্যোতিষশাস্ত্রের মতে, গ্রহ এবং নক্ষত্রের স্থান ও গতি মানুষের কর্মফলকে প্রভাবিত করে। কিছু গ্রহ শুভ কর্মের প্রতীক, যেমন বৃহস্পতি, শুক্র, ও বুধ। অন্যদিকে, কিছু গ্রহ অশুভ কর্মের সাথে সম্পর্কিত, যেমন শনি ও রাহু।
জ্যোতিষশাস্ত্রে কর্মকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়:
সৎ কর্ম: যা শুভ ফল দেয়।
অশুভ কর্ম: যা খারাপ ফল দেয়।
নিরপেক্ষ কর্ম: যা কোনও ফল দেয় না।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, কর্মফল জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, যেমন:
স্বাস্থ্য,আর্থিক অবস্থা,কর্মসংস্থানব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক, সাফল্য।
কর্মফল ভাগ্যকেও প্রভাবিত করে। শুভ কর্মের ফলস্বরূপ ভাগ্য উজ্জ্বল হয়, অন্যদিকে অশুভ কর্মের ফলস্বরূপ ভাগ্য দুর্বল হয়।কর্মফলকে প্রভাবিত করার জন্য, জ্যোতিষশাস্ত্রে কিছু প্রতিকার ও উপায় দেওয়া হয়েছে, যেমন:
উপাসনা ,নির্দিষ্ট গ্রহের পূজা দান,মন্ত্র পাঠ,যোগ ও ধ্যান।
জ্যোতিষশাস্ত্র কর্মফলের ধারণাটিকে একটি শক্তিশালী ও ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করে।
কর্মফলের যদি আধ্যাত্বিক ব্যাখা দিতে যাই তো বলতে হয়
” কর্ম হলো হিন্দুধর্মের ধারণা যা এমন প্রক্রিয়াকে বর্ণনা করে যেখানে উপকারী প্রভাবগুলি অতীতের উপকারী ক্রিয়াগুলি থেকে এবং ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি অতীতের ক্ষতিকারক ক্রিয়াগুলি থেকে উদ্ভূত হয়, এবং আত্মার পুনর্জন্মের চক্র গঠন করে। “
শ্রীমদ ভাগবত গীতায় শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন,
“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।”
এর অর্থ হলো, কর্মের প্রতি তোমার অধিকার আছে, কিন্তু কর্মফলের প্রতি নয়।তুমি যেমন ইচ্ছা কর্ম করতে পার কিন্তু তার ফল প্রকৃতির হাতে। প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে কর্মের প্রতিফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে।
“সুখো রথ ইব বর্ততাং কৃত্যা কৃত্যাকৃতং পুনঃ।।” -অথর্ববেদ ৫/১৪/১৩
অর্থাৎ, যেমন দ্রুতগামী রথ,তেমনি কর্ম ফল হয়ে দ্রুত ফিরে আসে কর্তার দিকে,তপ্ত অগ্নির ন্যায় প্রতিকূল দণ্ড হয়ে অসৎকর্মার দিকে, শীতল জলের ন্যায় অনুকূল সুখ হয়ে সৎকর্তার দিকে।
কোরআনে কর্মফল নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত দেওয়া হয়েছে। যেমন,
সূরা আল-ইমরান (৩:৯৭):
“যে ব্যক্তি কোনো সৎকর্ম করে, সে নিজের কল্যাণের জন্যই করে, আর যে কোনো মন্দকর্ম করে, তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে।”
কোরআনের অন্য স্থানে আল্লাহ বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সত্কর্ম করলে তা সে দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অপকর্ম করলে তা-ও দেখতে পাবে।’ (সুরা : জিলজাল, আয়াত : ৭-৮)
আবার বাইবেলেও কর্মফল নিয়ে বলা আছে
” As you show, so shall you reap.”
অর্থাৎ আপনি যেমন গাছ লাগাবেন ঠিক তেমনি ফল পাবেন।( গ্যালিতীয় ৬:৭ পদ)
এরকম সব ধর্ম গ্রন্থেই কিন্তু কর্ম ও তার ফল ভোগের কথাই স্পষ্ট ভাবেই বলা আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো সব ধর্মগ্রন্থে বলা এই কথাটি সত্যিই কি আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে, সত্যিই কি আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়?
কথায় বলে যেমন কর্ম তেমন ফল, অর্থাৎ যেমন কর্ম তুমি করবে ঠিক সেই রকম ফলই তোমায় ভোগ করতে হবে। ভালো কর্ম করলে ভালো ফল আর খারাপ কর্মের খারাপ ফল । কিন্তু আমাদের চারপাশে আমরা ঠিক উল্টো চিত্র দেখতে পাই।যে ভালো কর্ম করছে, মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে,দান ধ্যান করছেন। দয়া, মায়া,করুণা, ভালবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন, অথচ তিনিই বড় অসহায় হয়ে দিন কাটাচ্ছেন, মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। আবার অন্য দিকে দেখুন,যিনি অসৎ পথে উপার্জন করছেন মানুষের সাথে ছলনা, প্রতারণা করছেন, বিশ্বাসঘাতকতা করছে তারাই ভালো আছে, বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ফুর্তি করছে আবার ভালো মানুষের মুখোশ পরে কি সুন্দর অভিনয়ও করছে।
ভগবানের এ আবার কেমন লীলা। কেউ কেউ মানুষ ঠকিয়ে ভালো আছে, আর কেউ কেউ সততার সাথে থেকেও কষ্টে আছে। তাহলে কি ভগবানের হিসাব নিকাশে কিছু ভুল হচ্ছে, চিত্রগুপ্তের কম্পিউটারে কি ভাইরাস ঢুকে গেছে, নাকি বয়সের ভারে সে সব হিসাব গুলিয়ে ফেলছে, তাই উদর পিন্ডি বুধর ঘাড়ে চলে যাচ্ছে। খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় যে এটা। অবশ্য আর একটা সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে চারিদিকে এত অরাজকতা, এত দুর্নীতি, এত বেইমানি, সব কিছুই যখন তেনাদের গোচরে আছে এবং সেটা মাননীয় চিত্রগুপ্ত মহাশয় প্রশ্রয় যখন দিচ্ছেন তখন নিশ্চয়, তার সাথেও ৭০ শতাংশ , ৩০ শতাংশ বা ঐরকমই কিছু একটা রফা হয়ে গেছে।
আমরা ছোট বেলা থেকেই শিখে এসেছি যে মানুষের পাপ বা পূণ্যের পুঙ্খানুপূর্ণ হিসাব নাকি চিত্র গুপ্তের খাতায় লেখা থাকে। সেই মতোই তার বিচার হয়। আমরা যদি পূণ্য করি তো আমাদের জায়গা হবে স্বর্গে। সেখানে নাকি আরামই আরাম। আবার যদি পাপ করি তাহলে জীবিত অবস্থায় যদি শাস্তি নাও পাই, মরার পরে কিন্তু নিস্তার নেই। যমের বিচারে নরকযাত্র একেবারে পাকা। সেখানে হয় গরম তেলে ভাজা হবে,নয়তো শুলে চড়ানো হবে। শুধু তাতেও নিস্তার নেই, পাপের রকমফের অনুযায়ী পরজন্মেও খারাপ থেকে খারাপতর যোনিতে জন্মাতে হবে, হয়তো গরু ছাগল, হয়তো বা কীটপতঙ্গ।এরকম কত কি গল্প আমরা শুনে শুনে বড় হয়েছি। তবে এই স্বর্গ নরকের তত্ত্ব বা পরজন্মতে যারা বিশ্বাসী তারা হয়তো স্বপ্নের জগতেই বিরাজ করেন, আর পাপ করে নরক যাওয়ার ভয়ে সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকেন। এবার দয়া করে একটু জেগে উঠুন, স্বর্গ নরক, পরজন্ম কে দেখেছে বলতে পারেন?
যদি যমরাজ না থাকেন, চিত্রগুপ্তের খাতাও না থাকে, স্বর্গনরকের অস্তিত্বও না থাকে তাহলে বিচার কি হবেনা? ভগবান কি শুধুই ঠুট জগন্নাথ হয়ে বসে থাকেন আর এই অরাজকতা সহ্য করেন। সেটাও ঠিক নয়। পাপ পুণ্যের বিচার হবেই, একটা অদৃশ্য শক্তি সারাক্ষণ আমাদের কর্মের উপর কড়া নজর রাখছেন এবং সেই কর্মের ফল মৃত্যুর আগে এই জন্মেই তাকে ভোগ করতেই হবে। কথায় আছে না “জেয়্সি করনি, তেয়সি ভরনি।” কিন্তু প্রশ্ন হলো কিভাবে ??
আচ্ছা আমরা যদি একটু অন্য ভাবে ভাবার চেষ্টা করি। একটু ভেবে দেখুন তো, মানুষ তার পাপ বা পুণ্যের ফল কর্ম করার আগেই পেয়ে যায়। শুনে মনে হচ্ছে না এ আবার কেমন কথা। ধরুন কেউ একজন খুব ভালো কাজ করছে , মানুষের সেবা করছে, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করছে,সবাই কে ভালবাসছে…. এইসব করতে গেলে তো আগে তাকে একজন ভালো মানুষ হতে হবে তাইনা। সেতো আগেই একজন ভালো মনের মানুষে পরিণত হয়েছেন, তার মধ্যে কোনোরকম মানসিক অশান্তি বা দ্বন্দ কাজ করবে না, তার মনে পাপ পুণ্যের ভয় ও নেই। সবাই তাকে ভালো মানুষ বলে শ্রদ্ধা করবেন, এটাও তো জীবনের একটা বড় পাওনা।
আবার উল্টো দিকে দেখুন, যে মানুষের সাথে বেইমানি করছে,বিশ্বাস ঘাতকতা করছে, মানুষকে ঠকিয়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করছে,অসৎ পথে রোজগার করছে, সেতো আগেই একজন অমানুষে পরিণত হয়েছে, সারাক্ষণ এরা কোনো না কোনো মানসিক অশান্তি তে ভুগছে, নিজেকে ঠিক প্রমাণ করার জন্য এদেরকে নিজের সাথেই লড়তে হয় অনবরত, কোনো কিছুতেই এদের শান্তি নেই, এদের চাহিদার ও শেষ নেই, সারাক্ষণ এদেরকে ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘুরতে হয়, নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে এরা সারাক্ষণ ফন্দি আটে , এতকিছুর পরেও কিন্তু ঠিক এদের মুখোশ টা একদিন খুলে যায়।মানুষ এদের খারাপ মানুষ বলে, একটা সময় আসে, যখন কেউ পাশে থাকেনা। সেই মানসিক যন্ত্রণায় এরা একদিন নরক যন্ত্রণায় ভোগে। এখন মাথায় প্রশ্ন আসছে যে বাঁচতে গেলে তো টাকা লাগে, তাই টাকাই যদি না থাকে তো সততার কি ধুয়ে খাবো?কেউ লোক ঠকিয়ে বিপুল সম্পত্তি করে কত সুখে আছে, আর যে সৎ পথে চলে তার সংসারে অভাবের ছোঁয়া। আসলে এখানেও আমরা বাইরের চটকদাড়িতে ঠকে যাই। বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে যে ওই লোকটার গাড়ি, বাড়ি চাকর, বাকর সব আছে, ফুর্তি করছে আর পয়সা ওড়াচ্ছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন এই মানুষ গুলো সব কিছু পেয়েও পয়সা দিয়ে সুখ শান্তি কিনতে পারেনা, যেভাবে মানুষ কে ঠকিয়ে রোজগার করেছে, একদিন কিভাবে যে সেই টাকা চলেও যায় টা কেউ বলতে পারে না। ইংরেজি তে একটা কথা আছে
” There are two types of people in this world, givers and takers. Takers may eat well but givers sleep well.”
আবার একটু অন্য ভাবে বিশ্লেষণ করে দেখি। একজন ভালো মানুষ শুধু নিজেই ভালো থাকেন না ,তার পরিবার পরিজন , তার পারিপার্শ্বিক মানুষজন ও কিন্তু তার মনুষ্যত্বের ছায়ায় ভালো থাকে, শুধু তাই নয়, তার ভালো স্বভাব চরিত্র গুলোও কিন্তু তার সন্তান সন্ততির মধ্যে ও প্রকাশ পায়। কিন্তু দেখুন যে মানুষ টা খারাপ , মানুষের সাথে ছলনা করে, বেইমানি করে, অসৎ পথে উপার্জন করে , হয়তো সে তার সন্তান কে সোনার চামচ দিয়ে বড় করে তোলে, কিন্তু মানুষ কি তৈরি করতে পারে?একজন অসৎ বাবা বা একজন ছলনাময়ী মা কোনোদিনও তার সন্তান কে মনুষ্যত্বের শিক্ষা দিতে পারেনা। একটা বহুল প্রচলিত কথা আছে না, রক্ত কথা বলে, অর্থাৎ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ঠিক তার সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পায়। কিছুটা জিনগত আর কিছুটা পারিবারিক শিক্ষা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব তার চরিত্রে প্রকাশ পাবেই।
চারিদিকে দেখুন আজকের দিনে ছেলে মেয়ে গুলো মানুষ কে সম্মান করতে শেখে না, উশৃঙ্খল জীবনযাপন করে, অল্পবয়সে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি থেকে সত্ত্বেও কিন্তু অমানুষ সন্তানের জন্য সারাজীবন মানসিক অশান্তি তে ভুগতে হয়, এটাও কিন্তু তার পাপেরই ফল। এখানেই শেষ নয় কিন্তু, বৃদ্ধ বয়সে যখন সেই সন্তানের কাছেই বিতাড়িত হয়ে একাকীত্ব জীবন অতিবাহিত করে বা যখন তার আশ্রয় হয় কোনো না কোনো বৃদ্ধাশ্রমে, সবই কিন্তু পাপের ফল। হয়তো একটা সময় সেই মানুষ টাও তার মা বা বাবাকে প্রকৃতি সম্মান করেননি।
কর্ম বিশেষত নির্ভর করে আমাদের বাসনা ও কার্যকলাপের ওপর। কর্মকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়, যে কার্যকলাপ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রদর্শন করে। সংস্কৃতে ‘কর্ম’ শব্দটির পরিবর্তে ‘দৈব’ বা ‘অদৃষ্ট’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ‘দৈব’ মানে দেবতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যেটি অদৃশ্যভাবে হয়। প্রকৃতপক্ষে দেবতারা নয় বরং আমরাই আমাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে থাকি। অর্থাৎ, আমাদের ভোগ বাসনা ও দুঃখ-দুর্দশা এড়িয়ে চলার বাসনা রয়েছে এবং এই বাসনার মাধ্যমে আমাদের কার্যকলাপ প্রদর্শিত হয়।
আমি বলতে পারি না “এই কাজটি করার জন্য আমি বাধ্য হয়েছি।” তা নয়, প্রকৃতপক্ষে সিদ্ধান্তটি আমাদেরই। এই সিদ্ধান্তগুলিই জন্মান্তরের গতি নির্ধারণ করে।আমরা যে কর্ম করি তার সম্পূর্ণ দায় আমাদেরকেই নিতে হবে। কিন্তু আমরা এতটাই অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকি যে অনেক সময় আমরা আমাদের কর্মের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চেষ্টা করি বা নিজের খারাপ কাজ কে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করি। যেমন ধরুন চোর চুরি করে ভাবে,আমি তো আমার সংসার চালানোর জন্য চুরি করছি। কেউ কাউকে ঠকিয়ে ভাবে আমি তো পয়সা উপার্জনের জন্য লাভ করছি । আবার কেউ কেউ তো নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কারোর বিশ্বাসভঙ্গ করতেও সিদ্ধহস্ত । আজকে আমার এই মানুষটাকে দরকার তাই তাকে তোয়াজ করছি, ভালবাসার অভিনয় করছি, কাল যখন প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে আর দরকার নেই তাই নানা অজুহাতে পালিয়ে গেছি, এ আবার এমন কি করেছি। ভালোর থাকার প্রয়োজনে সম্পর্কের সমীকরণ গুলো পাল্টে ফেলাই তো বুদ্ধিমানের কাজ তাইনা। সময়ের সাথে সাথে পুরানো জামা বদলে ফেলে নতুন জামা পড়াটাই তো স্ট্যাটাস।
হয়তো আমরা নিজেদের কে নির্দোষ প্রমাণ করতে এরকম নানাবিধ অজুহাত দিয়ে নিজের কৃতকর্ম কে জাস্টিফাই করে দায় এড়িয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি, নিজেকে ঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করি। একটু যদি অন্য ভাবে ভেবে দেখি বিষয় গুলো। আমরা তো নিজে ভালো থাকার জন্যই কর্ম করেছি সেটা যেমন ঠিক, তেমনই সেই ভালো থাকা টা অর্জন করার জন্য হয়তো আরো অনেক উপায় ছিল কিন্তু সেগুলো আমরা ভাবিনি। আমাদের অসৎ বিবেব আমাদের বুঝিয়েছে যে ভালো কিছু অর্জন করার এটাই সব থেকে সোজা ও সস্তা উপায়, আর কোনো উপায় আমার নেই, আমি অপারগ, তার জন্য নাহয় একটু আধটু বেইমানি, বিশ্বাসঘাতকতা, একটু আধটু লোক ঠকানোর কারবার করলাম নাহয়। তাই আমি নিজেই তো অনেক উপায়ের মধ্যে এই অসৎ উপায়কেই বেছে নিয়েছি ,তার দায় আমাকেই নিতে হবে, না নিতে চাইলেও, উপরে যে একজন দাড়িপাল্লা নিয়ে বসে আছেন তার চোখ কে ফাঁকি দেওয়া যে অসম্ভব।ভালো কাজ করলে যেমন একদিন ভালো কিছু ফেরত পাবো, তেমনই খারাপ কিছু করলেও,আমি যত চালাকই হয় না কেনো একদিন আমরাও বেইমানি, বিশ্বাসঘাতকতা,ছলনা, একাকীত্ব নামক পুরস্কার গুলো ফিরে পাব।জন্মালে যেমন মৃত্যু অনিবার্য,তেমনই কর্মফলও অনিবার্য,শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
আমরা দেখেছি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দুই পক্ষ লড়াই করছে। ন্যায় ও সত্যের জন্য পাণ্ডব আর অসত্যের প্রতীক কৌরব পক্ষ। আমাদের জীবনেও কিছু এরকম দুটি সত্তা বিদ্যমান। সেখানে অর্জুন অর্থাৎ ভালো সত্তা আর দূর্যোধন ওরফে খারাপ সত্তা। জয় তারই হবে যার সাথে আছেন শ্রী কৃষ্ণ অর্থাৎ আমাদের বিবেক। বিবেক যার দিকে যাবে তারই জয় হবে।সৎ বিবেক যেমন একজন মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে দেবত্বে উন্নীত করে, তেমনই অসৎ বিবেক পশুত্ব লাভ করে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়তে কিছু সায়েন্টিস্ট ও কিছু সাইকিয়াট্রিস্ট এর একটা দল কর্ম ফল নিয়ে বহুদিন যাবত গবেষণা করে জানান যে আমরা যে কর্ম করি তার একটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভাব কসমিক এনার্জি আকারে আমাদের চারিপাশে ছড়িয়ে পড়ে যা আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। তারা কিছু মানুষ কে না জানিয়ে বহুবছর তাদের কার্যকলাপ বা তারা কখন আনন্দে বা দুঃখে আছে, তারা কতটা খারাপ বা ভালো কাজ করছেন , সমস্ত কিছুই নথিভুক্ত করে রাখতেন। ২০১২ সালে তার ফলাফল প্রকাশিত হয়। দেখা গেছে যে যারা ভালো কাজ করেছেন, ভালো ভাবে থেকেছেন, তাদের ৮০ শতাংশ মানুষ জীবনে সফল হয়েছেন। আর বাকি ২০ শতাংশ সফল হতে না পারলেও সুখে আছেন, শান্তিতে আছেন। কিন্তু আরেকটা দল যারা খারাপ কাজ করেছেন, খারাপ পথে উপার্জন করেছেন, মানুষকে ঠকিয়ে নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করেছেন , তারা কিন্তু সাময়িক ভালো থাকলেও দিনের শেষে তারা অসুখী, তারা নানা কারণে তারা অশান্তি তে ভুগছেন।
আসলে আমরা সবাই কর্ম করার আগেই ফলের কথা চিন্তা করি।গাছ লাগিয়ে তার পরিচর্যা করলে তবেই না তার ফল সুস্বাদু হবে , তেমনই আমাদের ভালো কাজের মধ্যে দিয়ে যে পজিটিভ এনার্জি তৈরি হবে তাতে আমার ও আমার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সমৃদ্ধ হবে। আবার খারাপ কাজের যে নেগেটিভ এনার্জি তা আমাদের পরিবার ও পরিবেশকে দূষিত করে দেয়।
অনেকে আবার ভাবেন যে এসব কর্ম টর্ম করে লাভ নেই ভাই , নিজেকে নিয়ে থাকো, নিজেরটাই ভাব, ভালো মন্দ খাও আর ফুর্তি করো, কারোর সাতে পাঁচে থেকো না। পারলে মাঝে মাঝে একটু ভিখারী কে একটু আধটু পয়সা দিয়ে দাও, একটু মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে দাও, একবার গঙ্গা স্নান করে নাও বা একটু তীর্থস্থানে পদযাত্রা করো ,ব্যাস পূণ্য জমিয়ে নাও কিছুটা। আর হ্যা, ফেসবুকে মাঝে মাঝে নিজের ভালো থাকার দেখনদাড়ি টা করতে ভুলো না কিন্তু, ওটাই তো আসল শান্তি। আপনি যদি এটা ভেবে থাকেন তো একটু ভুল হলো যে স্যার। এটাও যে আপনার কর্ম, যাকে বলে স্বার্থপর কর্ম।
এই স্বার্থপর কর্মে নিজের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি অন্যকে কষ্ট দেওয়া বা ক্ষতির শিকার হতে হয়। স্বার্থপর কর্মের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, অন্যায় এবং অশুভ ঘটনা বৃদ্ধি পায়।স্বার্থপর কর্মে নিজের লাভ বেশি করে বটে, কিন্তু এতে অন্য কারো ক্ষতি হতে পারে। এই ক্ষতিটা শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক হতে পারে। এর ফলে সমাজে অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে সমাজের সামগ্রিক উন্নতি ব্যাহত হয়।স্বার্থপরতা মানুষের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় ঘটায়। এতে মানুষ অন্যের প্রতি সহানুভূতিও হারায়।
স্বার্থপর কর্মের ফলস্বরূপ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এর সব থেকে ক্ষতিকারক দিক টা হলো মানুষ আস্তে আস্তে অসামাজিক জীব হয়ে পড়ছে। স্বার্থপরতার জন্য আমরা যেমন কারোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারিনা ,তেমনই আমাদের খারাপ সময়ে কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ালেও আমরা তাদের যোগ্য সম্মান তো দিতেই পারিনা উল্টে বেঈমানের মতো অস্বীকার করি। একটা সময় আসে যখন আমরা আমাদের পাশ থেকে সবাই কে হারিয়ে ফেলি।এই স্বার্থপর কর্মের ফলস্বরূপ নেতিবাচক কর্মফল লাভ হয়, যা পরবর্তীতে ভোগ করতে হয়।
কথায় আছে না “ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিও না।” আমাদের জীবনকাল খুবই অল্প ,তাই এই অল্প সময়ে যদি ভালো কাজ না করতে পারি, উৎকৃষ্ট কাজ করতে না পারি তো একটা সময় আসবে ,তখন মনে হবে জীবনে তো কিছুই করে উঠতে পারলাম না, সারাটা জীবন আজ বাজে কাজ করেই কেটে গেলো।যা করেছি তার জন্যেও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হচ্ছে,কিন্তু তা শুধরে নেওয়ার উপায় বা সময় কোনোটাই আর হাতে নেই।
আমাদের মনের মধ্যে সত্ত্ব, তমঃ, রজঃ- এই তিন গুণ বর্তমান, যা জীবের আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।সত্ত্ব অর্থাৎ সততা, তামসিক অর্থাৎ অন্ধকার বা অসততা। রজঃ মানে রাজসিক, সততা ও সততার মিশ্রণ। একটি বাচ্চা যখন জন্মায় তখন তার মধ্যে রজঃ ও তম এর প্রভাব থাকে। তাই তার মধ্যে আদিম প্রবৃত্তি গুলোই বর্তমান, যেমন হিংসা ,স্বার্থপরতা, সব কিছুই পাওয়ার লোভ। যদিও তার মধ্যে প্রকৃত সাত্ত্বিক হয়ে ওঠার সব গুণ গুলোই বর্তমান কিন্তু তা বিকশিত হওয়ার প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার বা প্রকৃত শিক্ষা দেওয়ার দায় বা দায়িত্ব যাদের উপর বর্তায় সেই মানুষ গুলো কি নিজেদের কে স্বার্থপরতা, বেইমানি ,বিশ্বাসঘাতকতা থেকে নিজেকে বের করে আনতে পেরেছে, নাহলে যে এর অশুভ ফল বংশ পরম্পরায় আবর্তিত হতে থাকে। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাও আমাদের তামসিক গুণ গুলোকেই ফুটিয়ে তোলার পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তাহলে মানুষের সাথে পশুদের কিছু পার্থক্য কি রয়ে গেলো।
পার্থক্য একটাই, তা হলো সাত্ত্বিক হয়ে ওঠার প্রবল সম্ভাবনা। আসুন না সবাই মিলে একটি শিশুর পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, স্কুলের শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থা কে তার মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে তার মনকে বিকশিত করি, এক সুস্থ্য সমাজ গড়ে তুলি। আসুন না সবাই একটু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা সুন্দর সমাজের সূচনা করতে আমাদের কি কি চারিত্রিক পরিবর্তন দরকার। সবাই সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন, মানুষকে ভালো রাখুন, সামাজিক জীব হয়ে বাঁচুন।
ধন্যবাদ