পুণ্যসলিলা গঙ্গা
ড. মদনচন্দ্র করণ (বিদ্যালঙ্কার)
আদিম কল্পনার স্বর্গলোক হতে বিজ্ঞান খুঁজে পায় হে দেবী!
তুমি আদিতে ছিলে বরফের স্বপ্ন,
হিমালয়ের বুকে এক শ্বেতশুভ্র ধারা,
শিবের জটায় বন্দি এক অতল রহস্য,
তারপর ধীরে ধীরে নেমে এলে—
জননী হয়ে, আশীর্বাদ হয়ে,
হলাহল পেরিয়ে জীবন দানে উন্মুখ।
তোমার তীরে জেগে উঠেছে সভ্যতা,
তোমার কোলে জন্ম নিয়েছে ইতিহাস,
তোমার ঢেউয়ে ভেসেছে রাজসূয় যজ্ঞের ধূপ,
ভাগীরথের তপস্যার প্রতিধ্বনি,
দ্রৌপদীর লজ্জার কান্না, কর্ণের দানশীলতা,
যুদ্ধের শঙ্খধ্বনি, আশ্রমের সন্ধ্যাবাতি—
সবই মিশে আছে তোমার গভীর স্রোতে।
তীরে তীরে বৃক্ষশাখে পাখিদের কলকাকলি,
নদীর বুকে মাঝি-মাল্লার গানের প্রতিধ্বনি,
দুই কূলে বিস্তীর্ণ সমভূমি, নগর, বন্দর,
বন-উপবন আর তীর্থক্ষেত্রে মানুষের সমাগম।
তুমি যৌবনের স্বপ্ন, বার্ধক্যের বারাণসী,
ইলিশ, খলিশ, রোহিতের প্রাণভরা জলধারা,
কোটি কোটি প্রাণী, মানুষ আর শস্যক্ষেত্রের তৃষ্ণার বারি,
আশ্রয়, আলো, অন্নের স্নেহদাত্রী—
তুমি পুণ্যসলিলা গঙ্গা!
তোমার ঢেউয়ে বয়ে যায় যুগ-যুগান্তরের কাহিনি,
তুমি ছিলে কুরুক্ষেত্রের সাক্ষী,
তুমি আছো ঘোর কলিযুগের কলরবে,
অপরাজেয়, অবিচল, শাশ্বত!
সকালবেলায় সূর্য তোমাকে ছুঁয়ে যায়,
সন্ধ্যায় প্রদীপেরা আলো ছড়ায় তোমার বুকে,
আর মাঝরাতে ঢেউয়ের ছন্দে
শুনতে পাই এক শাশ্বত গানের ধ্বনি—
গঙ্গা, তুমি পুণ্যসলিলা,
তুমি মোক্ষের আলো,
তুমি জীবন, তুমি অনন্ত!
তোমার বুকে আসে পাপী, আসে সাধু,
তুমি ধুয়ে দাও গ্লানি, তুমি নীরবে বয়ে যাও।
তোমার ঢেউয়ে বেজে ওঠে শঙ্খ, বয়ে যায় ফুলের মালা,
তুমি বহমান, তুমি চিরঞ্জীব, তুমি মুক্তির দিগন্তরেখা।
হে গঙ্গা, তুমি পুণ্যসলিলা,
তুমি অনন্ত স্নেহের ধারায়
মানবতার একমাত্র আশ্রয়!
—oooXXooo—