প্রজাতন্ত্র দিবস
সুপর্ণা দত্ত
চুয়ান্নটা প্রজাতন্ত্র দিবস পার করলাম সজ্ঞানে ও অজ্ঞানে
আগেও বুঝিনি,এখনও যেন ঠিক বুঝিনা প্রজাতন্ত্রের মানে।
ছোট্টবেলায় যেতাম মায়ের সাথে বাড়ির পাশের মাঠে
পতাকা উড়িয়ে চারিদিক মুখরিত হত বন্দে মাতরম ধ্বনিতে।
আমার ছিল নজর তখন জিলিপি পাওয়ার আনন্দে
জিলিপি না হোক মন ভরাতাম চার-ছ’টা লজেন্সে।
একটু বড়ো হতেই যখন স্কুলে যেতাম প্রজাতন্ত্রের দিনে
স্কুলের মাঠটি জমজমাট পতাকা তোলা আর নাচে-গানে।
বড়ো দিদিরা করত কুচকাওয়াজ বাঁশি ব্যান্ডের সাথে
আমরা ছোটোরা পিটি করতাম তেরঙ্গা নিয়ে হাতে।
কদম কদম বাড়ায়ে যা
খুশি কে গীত গায়ে যা
এ জিন্দেগী হ্যায় কৌম কী
তু কৌম পে লুটায়ে যা।
নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় বোধবুদ্ধি একটু হল
প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব আমার একটু বোধগম্য হল।
সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র দেশ
১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারী থেকে পালিত হয় প্রজাতন্ত্র দিবস।
তিনটি জাতীয় দিবসের একটি হল প্রজাতন্ত্র দিবস
ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ঘটনার স্মরণ দিবস।
১৯৩০ সালের ২৬শে জানুয়ারী মহাত্মা গান্ধী নেতৃত্ব দেন
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতকে পূর্ণ স্বরাজ গ্রহণ করেন।
সারা ভারতবর্ষ জুড়ে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়
কেন্দ্রীয় কুচকাওয়াজ নতুন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন বাহিনীর জাতীয় সঙ্গীত,ব্যান্ড,পাইপ,ভেরী,
“সারে জাঁহা সে আচ্ছা” দেশাত্ববোধক গান হয় সর্বোপরি।
প্রজাতন্ত্র দিবস আমরা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পালন করি
প্রজাতন্ত্র দিবসের মাহাত্ম্য হেড দিদিমনি শোনান পাঠ করি।
কলেজে গিয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসে ছুটি কাটাতাম
বাড়ির পাশের মাঠের পতাকা উত্তোলন দেখতাম।
প্রজাতন্ত্রের আক্ষরিক অর্থ জনগণ সংক্রান্ত একটা বিষয়
এটি একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা যেখানে জনগণ সরকারের একাংশ হয়।
ভারতীয় বীর বিপ্লবীদের কথা পাঠ করত কেউ
নেতাজী,গান্ধীজীর বীর গাঁথায় তুলত দেশপ্রেমের ঢেউ।
ভেবেছিল কি কোনোদিনও তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম
বৃথা যাবে আজ দেশের জন্য তাদের নিঃস্বার্থ বলিদান।
তাদের বহু কষ্টে গড়া সুজলা সুফলা স্বপ্নের ভারতবর্ষ
কাটমানি,জোচ্চুরী,বেইমানী আর রাহাজানীতে উৎকর্ষ।
তাঁদের বহু প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ভারতবর্ষ আজ
বিকিয়ে গড়বে অর্থ লোলুপ কামাতুর সব নরপিশাচের রাজ।
—oooXXooo—