মকর-সংক্রান্তি
সুপর্ণা দত্ত
শীতের সময় বয়ে আসা উত্তরে বাতাস
জানান দেয় শেষ হচ্ছে বাংলার পৌষ মাস,
বাঙালির ঐতিহ্যবাহী দিন পৌষ-সংক্রান্তি
দক্ষিণ এশিয়ার উৎসব হয় মকর-সংক্রান্তি।
এই উৎসবের আছে নানান নামের বাহার,
ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের মানুষ মানে ভিন্ন রকম আচার।
তামিলনাড়ুর পোঙ্গল,গুজরাটের উত্তরায়ন,
আসামের ভোগালি বিহু,কর্নাটকে মাকারা সংক্রমনা,
কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত, বাঙালির পৌষ-সংক্রান্তি উৎসব,
সূর্যের উত্তরায়নকে ঘিরে এটি একটি সর্বভারতীয় উৎসব।
গ্রহরাজ সূর্য ধনুরাশি ছেড়ে মকরে প্রবেশ করেন,
রাশি পরিবর্তনের এই সময়কে সবে মকর-সংক্রান্তি বলেন।
ভারতীয় ক্যালেন্ডার সকল সংক্রান্তিকে চন্দ্রের গতিবিধি ধরে,
সূর্যের গতিবিধি কেবল মকর-সংক্রান্তি নির্ধারণ করে।
এইদিনে খরমাস শেষ করে শুভ কাজ শুরু হয়
বিজ্ঞানেও মকর-সংক্রান্তি অপরিসীম গুরুত্ব পায়।
পবিত্র নদীজলে স্নানের পরে যথাসাধ্য দান করা
ধর্মীয় তাৎপর্য অনুসারে একে পূণ্য কাজ ধরা।
এইদিনের পরে সূর্য উত্তর গোলার্ধে অগ্রসর হয়,
তার ফলে পৃথিবীতে ক্রমেই রাত ছোটো দিন বড় হয়।
মকর সংক্রান্তি একটি সামাজিক উৎসব
ঘরে ঘরে শিশুদের সাজসজ্জা আর আনন্দ কলরব।
মাঠের সোনার ফসল চাষীরা ঘরে তোলে
ফসলী উৎসবেতে গ্রামবাসী নাচ-গানে ভোলে।
নতুন চাল কুটে পিঠে,পুলি,পায়েস,মিষ্টান্নের সমাহার,
তিল-গুড় দিয়ে তৈরি খাবার সুস্বাস্থ্যের উপাচার।
উৎসব উপলক্ষে আত্মীয়-পরিজনের সমাগম ঘটে,
পৌষমেলায় মানুষের মিলনের আনন্দ বার্তা বটে।
তিল-গুড়ে তৈরি তিলুয়া দিয়ে অর্ঘ্য দান করে
তিলুয়া সংক্রান্তি নামে অনেকে পালন করে।
প্রতি বারো বছর অন্তর কুম্ভমেলা বসে যমুনার তীরে,
গঙ্গা-যমুনা নদীর প্রয়াগরাজ সঙ্গমে পূণ্য স্নান করে।
গঙ্গাসাগর মেলা বসে সাগরদ্বীপের দক্ষিণে পবিত্র তীর্থ,
মকরেতে গঙ্গাসাগর জলে স্নান করেন বহু পূণ্যার্থী।
গুজরাতে বনফায়ার, ঘুড়ি উড়ানোর রীতি আছে মকরে,
তামিলনাড়ুতে ইন্দ্রনীল পূজিত হন ভাল ফসলের তরে।
হরিয়ানা-পাঞ্জাবে লোহিত পালিত হয় আগুন জ্বালায়ে,
সারা ভারতে এইদিন পালে সূর্য,বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর বন্দনায়।
ঘুঘুটি,মাঘ বিহু, হাংরাই, টিলা সাকরাইত,তিরমুরি যাই বলা হয়
পৌষ সংক্রান্তির দিন পিঠেপুলি,মেলা,পূজা-পার্বণ নিয়ে হয় আনন্দময়।
**********