বহুকাল পর মৃত্তিকা নগরে সূর্যকান্ত এসে যা দেখলো তারই প্রেক্ষাপটে লেখা এই অণু নাটক (সময়–সকাল)
বিবেক, চৈতন্য,জ্ঞান
রতন চক্রবর্তী
সূর্যকান্ত– কি ব্যাপার বিবেক দাদু ! আপনি এই গাছতলায় বসে আছেন কেন ?
বিবেক দাদু– কি করবো ভাই, যত অসৎ-বজ্জাত চোর-ডাকাত-লম্পট-বাটপার-লুটেরা-খুনিরা এক সংগে হয়ে আমাকে আমার ঘর থেকে বার করে দিয়ে আমার ঘর দখল নিয়েছে | তাই বাধ্য হয়ে আমি এখন এই গাছ তলায় স্থান নিয়েছি |
সূর্যকান্ত–তা আপনি তাদের কিছু বলেন নি ?
বিবেক দাদু–বলেছিলাম,লাভ কিছু হয়নি | ওরা যে সংখ্যায় বহু | আমার মতো বুড়ো মানুষের কথা কে শোনে | (এমন সময় সূর্যকান্ত রাস্তার দিকে ঘাড় ঘোরাতেই চৈতন্য জ্যেঠুকে ছুটতে দেখেই জিজ্ঞাসা করলো )
সূর্যকান্ত– আরে চৈতন্য জ্যেঠু ,ও চৈতন্য জ্যেঠু ,ও ও ও চৈতন্য জ্যেঠু –আপনি ছুটছেন কেন ?
চৈতন্য জ্যেঠু– আর বলোনা বাবা ,মানুষের সংসারে আমার আর থাকার জায়গা নেই | আজকাল সকলেই আমাকে অবহেলা করে চলে | তাই , কি আর করবো , লোটা কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কোন এক দূর দেশের সন্ধানে |
সূর্যকান্ত– যা বাবা ! (এমন সময় আবার জ্ঞান কাকাকে আসতে দেখে) আরে ! জ্ঞান কাকা কেমন আছেন ?
জ্ঞান কাকা– কি আর বলবো বাবা , কোন রকমে ইজ্জ্বত বাঁচিয়ে আছি |
সূর্যকান্ত– তা এখন যাচ্ছেন কোথায় ?
জ্ঞান কাকা– ঐ—যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই যাবো আর কি |
সূর্যকান্ত– কেন ? আপনার আবার কি হলো ?
জ্ঞান কাকা–অজ্ঞানী আর জ্ঞান পাপীদের মধ্য আমার মতো সাধারণ জ্ঞানীর বাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে | তাই যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই যাবো ভাবছি |
সূর্যকান্ত– দেখো দেখি কান্ড | মৃত্তিকা নগর থেকে যদি বিবেক,চৈতন্য,জ্ঞান সবাই চলে যায় তা হলেতো ভয়ানক ব্যাপার হবে | মৃত্তিকা নগরে অরাজগতা সৃষ্টি হবে | কেউ কাউকে মানবে না | এখন —কি করা যায় ,কি করা যায় —-( এমনটা ভাবার সময় সূর্যকান্ত দৈববানীতে শুনতে পেলো)
দৈববাণী– সূর্যকান্ত—ভয় পেয়ো না | আমার উপর বিশ্বাস রাখো | এখন মৃত্তিকা নগরে চলছে কালের অভিশাপের খেলা | জেনে রেখো কোন এক শুভ সূচি লগ্নে অবশ্যই আমি এই অভিশাপের খেলা বন্ধ করবো |
সূর্যকান্ত–( এই দৈব বাণী শুনে) তাই যেন হয় | মানুষের অন্তরে থেকে বিবেক,চৈতন্য,জ্ঞান যেন মুছে না যায় | মুছে না যায় |